ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা সফল না হলে পরিস্থিতি হবে আরও কঠিন
রাষ্ট্রদূত মাজিদ-ডোনাল্ড লু গোপন তারবার্তা ফাঁস
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেখানকার ইন্টারসেপ্ট নামের একটি সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছে তাদের হাতে এ বিষয়ক একটি গোপন কূটনৈতিক তারবার্তা এসেছে। এই সংবাদ মাধ্যমটি ওই সময় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র মধ্যে কথোপকথন তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে এই কথোপকথন হয় গত বছরের ৭ই মার্চ।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। ইন্টারসেপ্ট লিখেছে, পাকিস্তানের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছর ২৪শে ফেব্রুয়ারি মস্কো সফরে যান। এদিনই ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। এর দুই সপ্তাহ পরে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত ও ডোনাল্ড লুর মধ্যে ওই কথোপকথন হয়। ওই কথোপকথনে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত মাজিদকে ডোনাল্ড লু বলেন, ইমরান খানের মস্কো সফর এবং ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের নিরপেক্ষ অবস্থানে খুবই উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। কথিত ওই কথোপকথনে ডোনাল্ড লু বলেন, আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান খান) বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সফল হলে সবাইকে ক্ষমা করে দেবে ওয়াশিংটন।
কারণ, প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর তার সিদ্ধান্তেই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনা অন্য হলে পরিস্থিতি হবে আরও কঠিন। এই কথোপকথনের বিস্তারিত তারবার্তা ইসলামাবাদে পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রদূত মাজিদ। ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁস হওয়া পাকিস্তান সরকারের নথিপত্র অনুযায়ী মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের বৈঠকের এক মাস পর পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট হয়। ওই ভোটে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ইমরান খান ক্ষমতাচ্যুত হন। তখন তিনি দাবি করেন, ওই গোপন বার্তা সম্পর্কে তিনি জানতেন। ইমরান অভিযোগ করেন, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ষড়যন্ত্র করেছিল।
পরে সেই অবস্থান থেকে পুরোপুরি সরে যান ইমরান খান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি ভালো সম্পর্ক চান। তবে তাকে সরানোর জন্য তিনি তার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও সেনাবাহিনীকে দায়ী করে বার বার অভিযোগ তোলেন। এরই মধ্যে তোষাখানা মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তিনি এখন কারাগারে। তাকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইন্টারসেপ্টে প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করেন। বলেন, পাকিস্তানে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থান নিয়েছে- এমন কোনো কথা ওই প্রতিবেদনের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তবে হ্যাঁ, ইমরান খানের রাশিয়া সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ও একান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত নিজেই বলেছেন, নেতৃত্ব ঠিক করার মতো পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরাও বলেছি, এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার আগপর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে থাকা রানা সানাউল্লাহ বুধবার এক টুইট বার্তায় ইন্টারসেপ্টের ওই প্রতিবেদন নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, এই গল্পে নতুন কিছু না থাকলেও তথ্যের সত্যতা ও নথিপত্রের উৎস সম্পর্কে জানতে তদন্ত দরকার। আসলে এ ধরনের কাজ ক্ষতিকর এবং বিশ্বাসঘাতকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।
পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফের (পিটিআই) মুখপাত্র রউফ হাসান বলেন, ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের অবস্থানকে সমর্থন করছে ইন্টারসেপ্টের প্রতিবেদন।