বিদেশে সব সহায়তা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র
প্রথম নিউজ, অনলাইন: যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যমান সব বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে এবং নতুন সাহায্য স্থগিত করেছে। নিজ দেশের কর্মকর্তা এবং বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পাঠানো একটি অভ্যন্তরীণ তারবার্তায় এ কথা জানানো হয়েছে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।
ফাঁস হওয়া নোটিশে বলা হয়েছে, নব্বই দিনের জন্য বিদেশে সহায়তা স্থগিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার নির্বাহী আদেশ জারি করেন।
এর পরপরই বিশ্বজুড়ে এ ধরনের প্রায় সব সহায়তা স্থগিত করেছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মার্কিন সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সাহায্যদাতা। তারা ২০২৩ সালে ৬৮ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। যদিও এটি সাধারণত মার্কিন ফেডারেল বাজেটের প্রায় ১ শতাংশ হয়ে থাকে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সব কূটনৈতিক পোস্টে একটি তারবার্তা পাঠিয়েছেন, যে বার্তার কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) বৈশ্বিক কর্মসূচির জন্য কোটি কোটি ডলারের তহবিল হুমকির মুখে পড়েছে।
ওই বার্তাটি দেখার কথা জানিয়ে সিএনএন লিখেছে, কংগ্রেসে রিপাবলিকান এবং ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে বিদেশে সহায়তা ক্রোধের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে, তবে এই সহায়তার পরিমাণ সার্বিক মার্কিন বাজেটের তুলনায় খুবই কম। নির্বাহী আদেশ এবং পরবর্তী তারবার্তার পর মানবিক সহায়তা কর্মসূচির কর্মকর্তারা বিপাকে পড়েছেন।
সিএনএন লিখেছে, ওই তারবার্তায় বিদেশের বিদ্যমান সহায়তা কর্মসূচি অবিলম্বে ‘বন্ধের’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে নতুন সহায়তা স্থগিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিদেশে মার্কিন সহায়তা ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না’ তা পর্যালোচনার জন্য আগামী মাসে প্রশাসন মানদণ্ড তৈরি করবে বলে তারবার্তায় বলা হয়েছে।
এর আগে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনে স্বাক্ষরিত বেশ কয়েকটি আদেশের মধ্যে একটি ছিল ‘বৈদেশিক সাহায্য এবং আমলাতন্ত্র’। ট্রাম্প এর সমালোচনা করে বলেন, এটা আমেরিকান স্বার্থ এবং মূল্যবোধের বিরোধিতা করে।
ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, প্রেসিডেন্টের বৈদেশিক নীতির উদ্দেশ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে কোনো মার্কিন বৈদেশিক সহায়তা দেওয়া হবে না।
ট্রাম্প ধারাবাহিকভাবেই বিদেশি সাহায্যের সমালোচনা করে আসছেন। ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে প্রতিরক্ষার জন্য ইউক্রেনকে প্রেরিত সহায়তার পরিমাণ নিয়ে বিশেষভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বাইডেন প্রশাসনের অধীনে বিদেশি সাহায্যের সরকারি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০৪টি দেশ ও অঞ্চলে দুর্যোগ ত্রাণ, স্বাস্থ্য এবং গণতন্ত্রপন্থী উদ্যোগসহ নানা কর্মসূচির জন্য ৬৮ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে মার্কিন সাহায্যের প্রধান প্রাপক, যেমন- ইসরায়েল (বার্ষিক ৩.৩ বিলিয়ন ডলার ), মিসর (বার্ষিক ১.৫ বিলিয়ন ডলার) এবং জর্দান (বার্ষিক ১.৭ বিলিয়ন ডলার) দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির কারণে উল্লেখযোগ্য কাটছাঁটের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
ট্রাম্পসহ রিপাবলিকান প্রশাসন ঐতিহ্যগতভাবে জাতিসংঘের সংস্থাগুলোকে তহবিল হ্রাস বা কাটছাঁটের তালিকায় রেখেছে। এর আগে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলে অর্থ প্রদান এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে তহবিল স্থগিত করা হয়েছিল।
ট্রাম্পের নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে গেছে এবং এ সম্পর্কিত আর্থিক বাধ্যবাধকতা বন্ধ করে দিয়েছে। গত মার্চ মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের স্বাক্ষরিত একটি বিলে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার (ইউএনআরডাব্লিউএ) জন্য মার্কিন অর্থায়ন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।