‘বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গড়ার অদম্য পথযাত্রার সূচনা করেছে জুলাই অভ্যুত্থান’

‘বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গড়ার অদম্য পথযাত্রার সূচনা করেছে জুলাই অভ্যুত্থান’

প্রথম নিউজ, অনলাইন: বেসামরিক বিমান পরিবহণ, পর্যটন ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের একটি মাইলফলক। বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গড়ার অদম্য পথযাত্রার সূচনা করেছে জুলাই অভ্যুত্থান।

শনিবার (২৬ জুলাই ) দুপুরে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের ওয়েসিস প্রাঙ্গণে জুলাই গণঅভ্যুত্থান উপলক্ষ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়োজিত জুলাই পুনর্জাগরণ-২০২৫ অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। 
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, জুলাই আন্দোলন আমাদের রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই অধ্যায় কেবল প্রতিবাদ কিংবা বিরোধের নয়, এটি আশাবাদ ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা আর জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার এক সাহসী আহ্বান। এটি বাংলাদেশে নতুন এক বৈষম্যহীন ও ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্র গড়ার জন্য অদম্য পথযাত্রার সূচনা করেছে। ছাত্ররা এই আন্দোলনে পথ দেখিয়েছিল আর আপামর জনগণ সেদিন এই আন্দোলনে শরিক হয়েছিল। 
তিনি আরো বলেন, আমরা জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ বাড়িয়েছি, কার্যকরী পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয়েছি, এবং সবচেয়ে বড় কথা, আমরা জনগণের উপর আস্থা রাখতে শিখেছি। জনগণ শুধু সংখ্যা নয়, জনগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই অর্জন আমাদের সকলের। আমরা যদি সেবাকে দায়িত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি তবে বুঝবো জুলাই গণআন্দোলনের মূল শিক্ষা আমরা ধারণ করতে পেরেছি। আমরা যেন এমন একটি রাষ্ট্র ও প্রশাসন গড়ে তুলি, যেখানে নাগরিকের কণ্ঠস্বর উপেক্ষিত হবে না, যেখানে সিদ্ধান্ত হবে তথ্যভিত্তিক ও জনস্বার্থে এবং যেখানে প্রশাসন জনগণের সবচেয়ে বড় মিত্র হয়ে উঠবে। 
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসরীন জাহান এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত (উপদেষ্টা পদমর্যাদা ) লুৎফে সিদ্দিকী । স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ) আব্দুন নাসের খান। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে ৪ আগস্ট দৃষ্টি হারানো মো. সাব্বির আহমেদ জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন। 
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে অনেক আত্মত্যাগ নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসায় গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, তরুণদের কখনো দমিয়ে রাখা যায় না। তাঁরা উদ্যমী, তাঁরা দুর্বার। যখন তাঁদের বাধা দেওয়া হয় তাঁরা হয়ে ওঠে আরো অনির্বাণ। তরুণরা যে কত দুর্বার হতে পারে জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থান আমাদের তা দেখিয়েছে। এসময় তিনি দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করতে তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইসরাত হোসেন খান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. সাফিকুর রহমান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য পরিচালন ও পরিকল্পনা এয়ার কমোডর আবু সাইদ মেহবুব খান, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সায়েমা শাহীন সুলতানা, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের এর ফ্লাইট অপারেশনের মহাপরিচালক জুলফিকার আলী, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ-(আটাব) এর সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ এবং বাংলাদেশ ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন (টোয়াব) এর সভাপতি মোহাম্মদ রাফিউজ্জামান।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানকে স্মরণ করে চিত্রাঙ্কন ও রক্তদান কর্মসূচি। উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন রক্তদানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। এছাড়াও জুলাই অভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করতে পর্যটন মেলার আয়োজন ছিল। মোট ১০টি স্টল মেলায় অংশ নেয়। অতিথিদের নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। 
অনুষ্ঠানে জুলাই অভ্যুত্থানে সম্পূর্ণভাবে দৃষ্টি হারানো ১১জন জুলাই যোদ্ধার হাতে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস এর দেওয়া পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য (ঢাকা- জেদ্দা- ঢাকা ) ২টি করে টিকিট প্রদানের কনফারমেশন লেটার ও স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে দেওয়া ওমরাহ হজ পালনের অন্যান্য ব্যয়ের পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেন বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এছাড়া জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী তিন জনের হাতে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিট তুলে দেন তিনি। এছাড়াও বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দপ্তর সংস্থা আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।