ইজতেমা যে কারণে দুই ভাগে হয়

২০১১ সাল থেকেই এই নতুন প্রক্রিয়ায় ইজতেমা আয়োজিত হয়ে আসছে। এর ফলে ইজতেমা আরও বেশিসংখ্যক অনুসারীর অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে।

ইজতেমা যে কারণে দুই ভাগে হয়
ইজতেমা যে কারণে দুই ভাগে হয়

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক : বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের স্থান সংকুলানের জন্য সংগঠকেরা ইজতেমাকে দুই ভাগে বিভক্ত করে আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১১ সাল থেকেই এই নতুন প্রক্রিয়ায় ইজতেমা আয়োজিত হয়ে আসছে। এর ফলে ইজতেমা আরও বেশিসংখ্যক অনুসারীর অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ইজতেমার প্রথম পর্বে অংশ নেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা। আর আগামী ২০ জানুয়ারি শুরু হবে ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীদের আয়োজনে দ্বিতীয় পর্ব। প্রতিবছর কয়েক লাখ মানুষ এই ইজতেমায় অংশগ্রহণ করে থাকেন। তাঁদের মধ্যে তাবলিগ জামাতের প্রায় ৩০-৪০ হাজার বিদেশি অনুসারী বা সাথি অংশ নেন। প্রায় সব দেশ থেকেই তাবলিগের অনুসারীরা এই বার্ষিক ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ইজতেমায় নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। নারীরা সাধারণত আশপাশের বাসাবাড়িতে দু-তিন দিন ভাড়ার বিনিময়ে অবস্থান করেন। তবে তাঁদের সঙ্গে আসা পুরুষ সদস্যরা আলাদা স্থানে থাকেন। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের কারণে বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের পরিচিতির একটি অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে যেমন বিবেচিত হচ্ছে, তেমনি এর মাধ্যমে তাবলিগের নতুন অনুসারীও তৈরি হচ্ছে।

বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মিলন হলেও এর মানে এই না যে এখানে যাঁরা অংশগ্রহণ করে থাকেন, তাঁদের সবাই তাবলিগ জামাতের অনুগত অনুসারী। কেননা তাবলিগ জামাতের অনুসারী নন, এমন অনেক সাধারণ মানুষও এ বার্ষিক আয়োজনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে থাকেন। বিশেষ করে বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিন অর্থাৎ আখেরি মোনাজাতের দিন, ঢাকা শহরের মানুষের যেন ঢল নামে টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে। বিশ্ব ইজতেমার জনপ্রিয়তা এখন এতটাই যে অনেক রেডিও ও টেলিভিশন চ্যানেল আখেরি মোনাজাতের অনুষ্ঠান লাইভ তথা সরাসরি সম্প্রচার করে থাকে। বিশ্ব ইজতেমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন একটি ধারণা কাজ করে থাকে যে এখানে যাঁরা অংশগ্রহণ করেন, তাঁরা স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে একটি আত্মিক সংযোগ স্থাপন করতে পারেন।

তাবলিগ জামাতের অনুসারীদের জন্য বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমা একটি অত্যাবশ্যক জমায়েত; যেখানে তাঁরা ইসলাম ধর্মের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা ও বয়ান করে থাকেন। এখানে পুনরুক্তির মতো উল্লেখ্য, ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা ইসলামের নানা দিক সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারেন। তাবলিগের দাওয়াত ও বার্ষিক বিশ্ব ইজতেমার মাধ্যমে তাঁরা স্বল্প সময়ের জন্য জাগতিক বিষয়াবলি ও কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এর মাধ্যমে প্রতীকীভাবে এক মানসিক অবস্থা থেকে অন্য একটি মানসিক রূপান্তরের ভেতর দিয়ে যান তাঁরা। এভাবে তাঁরা স্রষ্টার সঙ্গে একটি নিবিড় আত্মিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার সুযোগ পেয়ে থাকেন বলে অনেকেই মনে করেন।

অন্যান্য সংগঠনের মতো যেহেতু তাবলিগ জামাতের সদস্য হওয়ার কোনো আনুষ্ঠানিক নিয়মকানুন নেই, তাই এর সদস্য হওয়া বা না হওয়া নিয়ে সাধারণত মানুষ কোনো ধরনের চাপ বোধ করে না। বরং এ চাপহীনতাই তাবলিগের দাওয়াতের কাজে যুক্ত হতে ও তাঁদের সঙ্গে দিন যাপন করতে সদস্যদের আরও উৎসাহিত করে।

তথ্যসূত্র: তাবলিগ জামাত: বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিসরে, বুলবুল সিদ্দিকী, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৯।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: