ইইউ’র বিধিনিষেধে মালয়েশিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা
পামঅয়েল ইস্যুতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তারা এ বিষয়ে একটি বৃক্ষনিধন বিষয়ক আইন প্রস্তাব করে তাতে একমত হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: পামঅয়েল ইস্যুতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তারা এ বিষয়ে একটি বৃক্ষনিধন বিষয়ক আইন প্রস্তাব করে তাতে একমত হয়েছে। এর অধীনে পামঅয়েল উৎপাদনকারীদের অবশ্যই দেখাতে হবে কবে, কোথায় তাদের পণ্য উৎপাদন করা হয়েছে এবং প্রমাণ দিতে হবে যে, ২০২০ সালের পর কোনো বন নিধন করে সেখানে পামঅয়েল চাষ করা হয়নি। এমন নীতির ফলে মালয়েশিয়ার পামঅয়েল শিল্পে বড় প্রভাব পড়বে। তাতে কাজ হারানোর ঝুঁকিতে থাকবেন বাংলাদেশি, ভারতীয়, নেপাল, ইন্দোনেশিয়াসহ কিছু দেশের শ্রমিক। ইতালির অনলাইন এশিয়া নিউজ এ খবর দিয়ে বলছে, মালয়েশিয়ার পামঅয়েল শিল্পে কাজ করেন প্রায় ৫ লাখ অভিবাসী শ্রমিক। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং ইন্দোনেশিয়ার। কিন্তু তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা নেই। বাজারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়লে তা প্রথমে তাদেরকে প্রভাবিত করে। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইএমও) ‘দ্য কস্ট অব হোপ: স্টোরিজ অব মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স ইন পামঅয়েল প্ল্যান্টেশন্স ইন মালয়েশিয়া’ শীর্ষক এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, পামঅয়েল শিল্পে নিয়োগকারীরা মাঝে মধ্যেই অভিবাসীদের পাসপোর্ট নিয়ে তা জিম্মি করে রাখেন।
শ্রমিকরা যাতে পালিয়ে না যান, তার জন্য এই ব্যবস্থা। মালয়েশিয়া এবং আন্তর্জাতিক আইনে এই চর্চা নিষিদ্ধ। পামঅয়েল বৃক্ষায়ণ বিষয়ক প্রধান অফিসে শ্রমিকদের পাসপোর্ট লকারে রাখার জন্য কোম্পানিগুলো অনুরোধ করে। শ্রমিকদেরকে নিজের লকারের চাবি দেয়া হলেও, প্রধান অফিসে প্রবেশ করতে হলে তাদেরকে প্রথমে ম্যানেজমেন্টের অনুমতি পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
নিতে হয়। পাম চাষের এস্টেটে পাঞ্জি (রিপোর্টে শ্রমিকদেরকে এই নামে অভিহিত করা হয়েছে) যেখানে কাজ করেন, তার ঠিক উল্টোদিকে প্রধান কার্যালয়ের লকার রুম। মালয়েশিয়া বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ পামঅয়েল উৎপাদনকারী দেশ। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ পামঅয়েল তার শতকরা ৪৪ ভাগই আসে মালয়েশিয়া থেকে। বছরে তারা উৎপাদন করে প্রায় ৭ কোটি ৪০ লাখ টন পামঅয়েল। তাদের প্রধান আমদানিকারক ভারত ও চীন। তবে কিছুটা ইন্দোনেশিয়াতেও যায়। তবে গত ডিসেম্বরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিধিনিষেধ আরোপ করে নতুন একটি পরিবেশ বিষয়ক আইনি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। এর ফলে পামঅয়েল রপ্তানি বাজার বিপদে পড়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যেতে পারে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার। এ জন্য ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে মালয়েশিয়ার কমোডিটিজ বিষয়ক মন্ত্রী ফাদিল্লাহ ইউসুফের সঙ্গে পরবর্তী করণীয় নিয়ে সাক্ষাৎ করেছেন ইন্দোনেশিয়ার কো-অর্ডিনেটিং মিনিস্টার ফর ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স এয়ারল্যাঙ্গা হারতারতো। এরপর তিনি বলেছেন, আমরা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাছে একটি যৌথ মিশন পাঠানো নিয়ে আলোচনা করেছি, যাতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় এবং এই প্রস্তাবের অনাকাক্সিক্ষত প্রভাব পামঅয়েল শিল্পে না পড়ে। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বিত সহযোগিতা চাওয়া হবে। তবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এই পণ্যটি নিষিদ্ধ করবে- এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, এই আইন যেকোনো স্থানে উৎপাদিত কমোডিটির ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য।
২০২২ সালে মালয়েশিয়া থেকে পামঅয়েলের তৃতীয় বৃহৎ আমদানিকারক ছিল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তারা ওই সময় শতকরা ৯.৪ ভাগ পামঅয়েল আমদানি করে সেখান থেকে। কিন্তু তাদের বিধিনিষেধ এবং অন্য আমদানিকারকদের একই রকম নিয়মকানুনের ফলে মালয়েশিয়ার পামঅয়েল খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। এই শিল্পে ব্যবহার হয় শতকরা ৭০ ভাগের বেশি কৃষিজমি।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যেসব কারণে বিধিনিষেধ দিতে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো- পামঅয়েল উৎপাদনের জন্য বিপুল পরিমাণ বন ধ্বংস করা হচ্ছে। এতে অসংখ্য প্রজাতির পশুপাখি এখন বিলুপ্তির পথে। যদি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রস্তাব পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হয় তাহলে এর ফলে ভয়াবহ এক প্রভাব পড়বে কর্মক্ষেত্রে, বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিকদের ওপর। তাদের বেশির ভাগই দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হবেন অথবা দেশটির অর্থনীতিতে আন্ডারগ্রাউন্ড কাজের সঙ্গে যুক্ত হবেন। এতে তারা নির্যাতন ও শোষিত হতে পারেন। মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা পালন করেন বিদেশি শ্রমিকরা। দেশটির এক কোটি ৬০ লাখ কর্মশক্তির মধ্যে এই সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: