সিলেটে ছড়া উদ্ধারে মাঠে মেয়র আরিফ
সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় বর্ষায় নগরে জলাবদ্ধতার বিষয়টি আলোচিত হলে মেয়র এ কার্যক্রম শুরু করলেন।

প্রথম নিউজ, সিলেট : সিলেটের ছড়া ও খাল উদ্ধারে ফের মাঠে নেমেছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সম্প্রতি সিলেট সিটি করপোরেশনের মাসিক সভায় বর্ষায় নগরে জলাবদ্ধতার বিষয়টি আলোচিত হলে মেয়র এ কার্যক্রম শুরু করলেন। তবে- এতে তিনি আর একা নন। এবার কাউন্সিলরদেরও নিলেন সঙ্গে। গঠন করা হয়েছে একটি সাব-কমিটি। এই কমিটির সদস্যরা সরজমিন পরিদর্শন করে গলদের বিষয়টি মেয়রকে অবগত করলেই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অ্যাকশনে নামা হচ্ছে। সিলেট নগরীর গোয়ালী ছড়া। নগরের ভেতর দিয়ে যে ১১টি ছড়া প্রবাহিত হয়েছে এর মধ্যে গোয়ালীছড়া অন্যতম। নগরের সুবহানীঘাট এলাকা দিয়ে এই ছড়া প্রবাহিত। সিলেট সিটি করপোরেশনের সাব-কমিটির সদস্যরা গত কয়েকদিন গোয়ালীছড়া পর্যবেক্ষণ করেন।
এতে দেখা যায়, গোয়ালীছড়ার উজানে ছড়ার মধ্যে ৯ ফুট গভীর পানি বিদ্যমান। কিন্তু সুবহানীঘাট এলাকায় এসে সেটি শুকিয়ে গেছে। এর কারণ কি? অনুসন্ধানে নামে সিটি করপোরেশনের সাব-কমিটি। এতে তারা দেখতে পান, সুবহানীঘাটে রয়েছে সিলেটের প্রধান কাঁচাবাজার। এই ছড়ায় কাঁচাবাজারের সব ময়লা ফেলা হচ্ছে। এ কারণে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গোয়ালীছড়া- সুবহানীঘাট থেকে মাছিমপুর হয়ে সুরমায় মিশেছে। কিন্তু মাঝখানে এক কিলোমিটার জায়গা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এই ছড়া জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় সুবহানীঘাট ও যতরপুর এলাকা।
এদিকে, কারণ চিহ্নিত করার পর গতকাল থেকে কাজ শুরু করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সকালে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গোয়ালীছড়ার দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাব-কমিটির সদস্য আজাদুর রহমান আজাদ ও প্যানেল মেয়র তৌফিক বক্স লিপন ও কাউন্সিলর শওকত আমীন তৌহিদ উপস্থিত ছিলেন। পরে মেয়র সিটি করপোরেশনের শ্রমিক নিয়োগ করে ওই ছড়া উদ্ধারে কাজ শুরু করেন। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, গোয়ালীছড়া দিয়ে উজানের পানি নিচে নামার দুটি পয়েন্ট রয়েছে। এর মধ্যে একটি পুরোপুরি বন্ধ ও অপরটি আংশিক। এ কারণে পানি নামতে পারছিল না। শ্রমিক লাগিয়ে সেটি পরিষ্কার করা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ছড়া দখল করে বেশকিছু অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছিল, সেগুলোও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যারা পাকা স্থাপনা নির্মাণ করেছিলেন সেগুলোও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান মেয়র। সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিলেট নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১১টি ছড়া প্রবাহমান। এসব ছড়ার ১৬টি খাল রয়েছে। এসব ছড়া-খাল সুরমা নদীতে গিয়ে মিশেছে। ছড়া-খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১১০ কিলোমিটার। এর বাইরে নালা-নর্দমা আছে ৯৭০ কিলোমিটার। ছড়া-খাল উদ্ধার, রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ড্রেন নির্মাণ, ছড়া-খাল ও ড্রেন পরিষ্কারে প্রায় একযুগে এক হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করা হয়েছে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রচেষ্টায় এসব ছড়া ও খালে উন্নয়ন কাজ করা হয়। বর্তমানে নগরে কয়েকশ’ কোটি টাকার ড্রেনের কাজ চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এই কাজগুলো করা হচ্ছে। অথচ অবৈধভাবে দখলের কারণে সিলেট নগরে পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের গত মাসিক সভায় বিষয়টি আলোচিত হয়। কাউন্সিলররাই ছড়া ও খাল দখলের বিষয়টি মেয়রের নজরে আনলে পরবর্তীতে কাউন্সিলরদের দিয়ে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। নগরীর ছড়া-খালের অবস্থা সরজমিন পরিদর্শন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়। সাব-কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ। সদস্য হিসেবে আছেন কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন ও এসএম শওকত আমিন তৌহিদ। এ বিষয়ে সাব-কমিটির সদস্য কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন জানিয়েছেন, পরিকল্পনা মতো কোটি কোটি টাকার কাজ করেও জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হয় না। ছড়া দখল এবং ময়লা ফেলার কারণে বৃষ্টি হলে পানি অপসারণে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে সিসিক’র সাধারণ সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, একটি সাব-কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা প্রত্যেকটা ছড়া পরিদর্শন করেছি, এগুলো দেখা যাচ্ছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। ছড়ার পাশে টং দোকান গড়ে তোলা হয়েছে, এগুলোর ময়লা-আবর্জনা ছড়ায় ফেলা হচ্ছে, ফলে ছড়ায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। সাব-কমিটির আহ্বায়ক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ গণম্যাধ্যমকে জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশেষ করে ছড়ার আশপাশে যেসব ব্যবসায়ী ভাইয়েরা আছেন, তাদেরকে সচেতন হতে হবে।