সরকার পতনে ‘নব্বইয়ের মতো আরেকটা গণঅভ্যুত্থান’ ঘটানোর সময় অত্যাসন্ন: মির্জা ফখরুল

বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, তারেক রহমানকে দেশকে ফিরিয়ে আনবো ও দেশকে আমরা মুক্ত করব এই হোক জেহাদ দিবসে আমাদের শপথ

সরকার পতনে ‘নব্বইয়ের মতো আরেকটা গণঅভ্যুত্থান’ ঘটানোর সময় অত্যাসন্ন: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকার পতনে ‘নব্বইয়ের মতো আরেকটা গণঅভ্যুত্থান’ ঘটানোর সময় ‘অত্যাসন্ন’ বলে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার দুপুরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত এক ছাত্র দল কর্মীর স্মরণ সভায় তিনি এই আহবান জানান।

জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতৃবৃন্দ ও জেহাদ স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ‘শহীদ জেহাদ দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপেতে এই আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ১৯৯০ সালের ১০ অক্টোবর স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল কর্মী নাজির উদ্দিন জেহাদ। এরপর থেকে এ দিবসটিকে বিএনপি জেহাদ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে সকালে রাজউক এভিনিউ মোড়ে শহীদ জেহাদ স্মৃতি স্তম্ভে বিএনপির নেতৃবৃন্দ পুস্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

মির্জা ফখরুল বলেন. ১৯৯০ সালে যে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেদিনকার ছাত্র-জনতা স্বৈরশাসকের তখতে-তাউস উল্টে দিয়েছিলো এবং সেদিনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া- সেই সময় এসেছে এখন, আজকে সেই সময় উপস্থিত হয়েছে। আবার সেই ধরনের আরো দৃঢ়তার সঙ্গে আরো একটি গণঅভ্যুতত্থান ঘটাতে হবে। আসুন আর সময় ক্ষেপন নয়, আর কাল বিলম্ব নয়। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আজকে সময় এসেছে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলি, ছাত্রদের ঐক্য গড়ে তুলি, বহুদলীয় ঐক্য গড়ে তুলি।

অতীতের বিভিন্ন আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভুমিকার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন,  প্রতিবার যুগে যুগে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এই তরুণেরা, এই যুবকেরা, এই ছাত্ররা। আজকে রুখে দাঁড়াতে হবে, ঘুরে দাঁড়াতে হবে তোমাদেরই। আজকে তোমাদের দিকে ভবিষ্যত তাঁকিয়ে আছে। যেমন গোটা জাতি আজকে তাঁকিয়ে আছে আমাদের নেতা তারেক রহমানের দিকে। ঠিক তেমনিভাবে আমরা সবাই তাঁকিয়ে আছি তোমাদের দিকে। তোমাদের জেগে উঠতে হবে, পরাজিত করতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় হাসিনা সরকারকে বিদায় করতে হবে।

তিনি বলেন, তাদেরকে(সরকার) বিদায় করে একটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় একটি নির্বাচন দিতে হবে যে নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দমতো সরকার ও পার্লামেন্ট তৈরি করবে এবং মানুষ যে যাকে চায় ভোট দেবে এবং আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকেই দেবো। এই সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে অবশ্যই এই দেশকে আমরা মুক্ত করব, দেশমাতা গণতন্ত্রের অবিসংবাদিত নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশকে ফিরিয়ে আনবো-এই হোক আজকে জেহাদ দিবসে আমাদের শপথ।

দেশের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি। আমাদের কিচ্ছু অবশিষ্ট নেই। আমাদের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, আমাদের পার্লামেন্টকে ধবংস করেছে, আমাদের প্রশাসনটাকে ধবংস করেছে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ধবংস করেছে, আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধবংস করেছে, অর্থনীতিকে ধবংস করেছে। আজকে সেই জন্যই এই হাসিনা সরকারকে কোনো মতেই কোনো সময় দেয়া যাবে না। আজকে মানুষজন কথা বলতে পারে না, লিখতে পারে না। সাংবাদিক ভাইয়েরা লিখতে পারে না। বাইরে গিয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। যারা কথা বলতেন টেলিভিশনে তারাও কথা বলতে সাহস পাননা। আমরা দেখেছেন কী ভয়াবহ। বিদেশ থেকে কনক সারোয়ার তিনি কিছু সত্য কথা বলতেন। সর্বশেষ সত্য কথা যে, শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র গেলেন তার …..। এই কথা বলার পরে আজকে একজন নিরহ অসহায় মা যার সন্তান আছে তার(কনক সারোয়ার) বোনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। এ কোন দেশে বাস করি আমি। এটা তো জংলী দেশ। কোনো সভ্যতা নেই এখানে। আজকে এই অসভ্য জংলী দেশ তৈরি করেছে এই সরকার।

তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনাকে যদি বাঁচতে হয়, আমাকে যদি বাঁচতে হয়, আমার দেশকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের অর্জন, নব্বইয়ের অর্জনকে যদি ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে চলে যেতে হবে। পরিস্কার করে বলতে হবে- সরে দাঁড়াও, ঘুরে যাও। এই সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এদেশের মানুষ সবাই মেনে নিয়েছিলো যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন তাকে সুপরিকল্পিতভাবে ২০১২ সালে একটা ভ্রান্ত রায়ের মধ্য তাকে পরিবর্তন করে দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। যার ফলে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে প্রায় ১৪ বছর ধরে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।

নব্বইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের(ডাকসু) ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও  ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, খন্দকার লুতফুর রহমান, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, আসাদুর রহমান খান, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, নাজির উদ্দিন জেহাদের বড় ভাই কে এম বশিরসহ সাবেক ছাত্র নেতারা বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, মীর সরফত আলী সপু, নিলোফার চৌধুরী মনি, শাম্মী আখতার, হেলেন জেরিন খান, শহিদুল ইসলাম বাবুল, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আকরামুল হাসান, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, হাবিবুর রশীদ হাবিব, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর হোসেনসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom