সাংবাদিক শামছুর হত্যা দেড়যুগ ধরে স্থগিত মামলার কার্যক্রম

সাংবাদিক শামছুর হত্যা দেড়যুগ ধরে স্থগিত মামলার কার্যক্রম

প্রথম নিউজ, যশোর : যশোরের সাংবাদিক শামছুর রহমান হত্যার ২৩ বছর আজ। কিন্তু মামলার কার্যক্রম উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়ে আছে। ফলে অপরাধীদের এখনো বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ নিহতের পরিবার ও যশোরের সাংবাদিক সমাজ। যদিও সরকার উদ্যোগ নিলেই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরু সম্ভব বলে দাবি আইনজীবীদের।

এ মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৬ আসামির মধ্যে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী মুশফিকুর রহমান হিরক পুলিশের খাতায় পলাতক আছেন। আরেক আসামি খুলনার ওয়ার্ড কমিশনার আসাদুজ্জামান লিটু র‌্যাবের ক্রসফায়ারে, কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন কালু হৃদরোগে এবং যশোর সদরের চুড়ামনকাটির আনারুল প্রতিপক্ষের হামলায় মারা গেছেন। বাকি আসামিরা জামিনে আছেন।

যশোরের আদালত সূত্র জানায়, প্রথিতযশা সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল ২০০০ সালের ১৬ জুলাই রাতে জনকণ্ঠ যশোর অফিসে কর্মরত অবস্থায় আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। ২০০১ সালে সিআইডি পুলিশ হত্যা মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। সে সময় বিগত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকজন আসামি প্রভাব বিস্তার করায় মামলার বর্ধিত তদন্ত করে শামছুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক নেতা ফারাজী আজমল হোসেনকে নতুন করে আসামি করা হয়।
একইসঙ্গে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাদ দিয়ে করা হয় আসামিদের ঘনিষ্ঠজনদের। এতে একদিকে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। অন্যদিকে দুর্বল হয়ে যায় চার্জশিট।

বিতর্কিত ওই বর্ধিত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর ২০০৫ সালের জুন মাসে যশোরের স্পেশাল জজ আদালতে মামলার চার্জ গঠন হয়। ওই বছরের জুলাই মাসে বাদীর মতামত ছাড়াই মামলাটি খুলনার দ্রুত বিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। এ অবস্থায় মামলার বাদী শহীদ শামছুর রহমানের সহধর্মিণী সেলিনা আকতার লাকি বিচারিক আদালত পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে আপিল করেন।

তার এ আপিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ‘মামলাটি কেন যশোরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না’ এর জন্য সরকারের ওপর রুলনিশি জারি করেন। এরপর মামলায় বর্ধিত তদন্তে সংযুক্ত আসামি ফারাজী আজমল হোসেন উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সেই রিটের নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত আছে।

আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সরকার উদ্যোগ নিয়ে উচ্চ আদালতে বাদীর আপিল এবং ফারাজী আজমল হোসেনের রিট নিষ্পত্তি করলে নিম্ন আদালতে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু সম্ভব। উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশনা না এলে নিম্ন আদালতে এ মামলার কোনো কার্যক্রমই পরিচালনা করা যাবে না।

উচ্চ আদালতের নির্দেশের কারণে শামছুর রহমান হত্যা মামলার বিচারকাজ বন্ধ হয়ে আছে উল্লেখ করে যশোর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এম ইদ্রিস আলী বলেন, আপিলের দ্রুত নিষ্পত্তি হলে মামলার কার্যক্রম শুরু সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো বহু বছর ধরেই হাইকোর্টের নির্দেশনায় এ মামলার কার্যক্রম বন্ধ আছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেলে খুলনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল মামলার কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।

নিহতের সহোদর ও যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি সাজেদ রহমান বলেন, একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতকালে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে শামছুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিটি গুরুত্বের সঙ্গে তোলা হয়। এছাড়া একই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি। কিন্তু এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।