সাতকানিয়ায় ভোটে অস্ত্রবাজি: জড়িতদের গ্রেফতারে ঝাড়ু মিছিল
মিছিলে খাগরিয়া এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, হাসান মাহমুদ এবং তাদের সহযোগীদের দায়ী করা হয়।

প্রথম নিউজ, সাতকানিয়া: চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নে ভোটের দিন অস্ত্রবাজির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে ঝাড়ু মিছিল ও মানববন্ধন করেছে একদল নারী-শিশু। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ইউনিয়নের ভোর বাজার এলাকায় এই কর্মসূচি পালিত হয়। মিছিলে খাগরিয়া এলাকায় গোলাগুলির ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান আকতার হোসেন, হাসান মাহমুদ এবং তাদের সহযোগীদের দায়ী করা হয়। এসময় উপস্থিত নারী ও শিশুরা তাদের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন।
জানা গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সাতকানিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার ঘটনা আলোচনার জন্ম দিয়েছে দেশজুড়ে। ভোটে বিভিন্ন প্রার্থীর হয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি ছোড়ার দৃশ্য ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে এই উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পর ওই ইউনিয়নের দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাব সূত্র জানায়, গণমাধ্যম ও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া অস্ত্রবাজদের চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে ১০ জনের বেশি লোক গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারদের সবাই আকতারের জন্য খাগরিয়া ইউনিয়নে ভোটের সময় অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। ঢাকায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া কায়েস আকতারের ভাই, নাছির তার কর্মচারী এবং কোরবান আলী তার বাড়ি দারোয়ান। ভোটের দিনের অস্ত্রবাজিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন কায়েস।
ভোটের জন্য কক্সবাজারের মহেশখালী ও তার আশপাশের এলাকা থেকে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছে বলে গ্রেফতার কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছেন। এছাড়া ভোটে এসব অস্ত্রবাজির ঘটনা আকতার নিজেও জানতেন বলে গ্রেফতাররা জানিয়েছেন। এদিকে, কাছের লোকজন গ্রেফতার হওয়ার পর গা-ঢাকা দিয়েছেন আকতার নিজেই। তার মোবাইলেও কোনো সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এজন্য এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য নেওয়াও সম্ভব হয়নি।
এর আগে, নির্বাচনের প্রচারণার সময় ২৭ জানুয়ারি প্রতিপক্ষের মিছিলে গুলিবর্ষণের অভিযোগ উঠে আকতারের বিরুদ্ধে। এসময় এক শিশুসহ বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর ৩ ফেব্রুয়ারি এক নির্বাচনী সভায় আকতার দুটি গুলি সবসময় লোড থাকে বলেও ঘোষণা দেন। ওই সময় মাইক হাতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কাছে সবসময় মাল (অস্ত্র) দুইটি থাকে। যেখানে যেভাবে হোক, আগে কাজ করে ফেলবেন। পরে খেলা দেখা যাবে। সবসময় আমার মালও লোড। আমিও প্রস্তুত।’ উত্তেজনাকর এই বক্তব্য ভিডিওসহ প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ আকতারের লাইসেন্স করা দুটি অস্ত্র জমা নিয়ে নেয়।
জানা গেছে, সাতকানিয়ায় সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে নলুয়ায় ছুরিকাঘাতে এক শিশু এবং বাজালিয়া ইউনিয়নে গুলাগুলিতে শুক্কুর নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র্যাব সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম র্যাব, চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবং সাতকানিয়া থানা পুলিশ একের পর এক অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন অস্ত্রবাজদের গ্রেফতার করে। নির্বাচন ঘিরে দায়ের হওয়া ২০টিরও অধিক মামলায় এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। নির্বাচনে এসব সহিংসতার পর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ সদর দপ্তরের এক আদেশে সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বদলি করা হয়।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: