সংকট সামলাতে কয়লা বিদ্যুতের দিকে তাকিয়ে সরকার

দেশের বড় দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি ভারতের আদানি থেকে বিদ্যুৎ পেলেই বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট থেকে দেশ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

সংকট সামলাতে কয়লা বিদ্যুতের দিকে তাকিয়ে সরকার
কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সংকট সামাল দিতে কয়লা চালিত বিদ্যুৎকে প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার। দেশের বড় দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি ভারতের আদানি থেকে বিদ্যুৎ পেলেই বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট থেকে দেশ বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

সূত্রগুলো বলছে, দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ এখনও ঢাকায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই বিদ্যুৎ আনার জন্য সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হবে। এছাড়া এরমধ্যে চালু হতে যাচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকেও ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। তবে এখন চালু হচ্ছে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট। এছাড়া ভারতের আদানি পাওয়ার কোম্পানির বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। কেন্দ্রটি চালু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

সম্প্রতি বিশ্ববাজারে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে সরকার সাশ্রয়ী নীতি গ্রহণ করেছে। এজন্য ডিজেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংকট সামাল দিতে শিডিউল লোডশেডিং করছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। সাধারণ মানুষকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের আহ্বান জানিয়েছে সরকার।

তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখলেও আমদানি করা কয়লাচালিত কেন্দ্র পায়রার উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে। কেন্দ্রটি এখন গ্রিডে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ দিচ্ছে। কেন্দ্রটি থেকে ১ হাজার থেকে ১১০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলে তুলনামূলক বিদ্যুতের ঘাটতি কম। কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ ঢাকায় আনার জন্য পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে একটি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। পটুয়াখালী থেকে গোপালগঞ্জ এবং গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত পৃথক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে পদ্মা সেতু এলাকায় টাওয়ার নির্মাণ শেষ হলেও তার টানানোর কাজ বাকি রয়েছে। এছাড়া নদীর দুই প্রান্তের লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। নদীর মধ্যে লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হলে পায়রার বিদ্যুৎ ঢাকার আমিন বাজার আনা সম্ভব হবে।

পিজিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, পদ্মা সেতুর ওপরের সব টাওয়ার পিজিসিবি বুঝে পেয়েছে গত ১০ জুন। সাধারণত টাওয়ার বুঝে পাওয়ার পর থেকে ছয় সাত মাস সময় লাগে পুরো কাজ শেষ করতে। অর্থাৎ, ডিসেম্বর নাগাদ সময় লাগার কথা। কিন্তু বর্তমান সংকটের কারণে আরও আগে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেছেন,  আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো বিদ্যুৎ ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়ে যাবে। একইসঙ্গে ভারতের আদানি পাওয়ারপ্ল্যান্ট থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হলে ৪ হাজারের বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমাদের জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজও প্রায় শেষ দিকে।  কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট চালু হতে যাচ্ছে। কেন্দ্রটি চালু হলেও খুলনা অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকায় বিদ্যুৎ আনা যাবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির (বিআইএফপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদ একরাম উল্লা বলেন, সবকিছু শিডিউল অনুযায়ী চললে সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ রামপাল কেন্দ্রটি চালু করা যাবে। আগামী ১০/১৫ দিনের মধ্যেই কেন্দ্রটি কমিশনিংয়ের জন্য যে কয়লা দরকার তা ইন্দোনেশিয়া থেকে চলে আসবে। সেই কয়লা দিয়ে স্বাভাবিকভাবেই একটি কেন্দ্রটি চালানো যায়। আর বড় চালানের জন্য আমরা দরপত্র আহ্বান করেছি। দ্রুত সেই প্রক্রিয়াও শেষ হবে বলে আশা করছি। এদিকে ভারতে নির্মাণাধীন আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আরও ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, আদানি সম্ভাব্য সময় দিয়েছে অক্টোবর।  যদি এরমধ্যে অন্য কোনও সমস্যা না হয়। হলেও ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় সব বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পায়রা সঞ্চালন লাইন চলে আসবে। তিনি বলেন, পায়রা থেকে এখনই আমরা ১০০০ মেগাওয়াট পাচ্ছি। সঞ্চালন লাইন হলে আরও ২০০ যোগ হবে। এছাড়া আদানি থেকে প্রথমে ৮০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাবে। এরপর মার্চের মধ্যে বাকি ৮০০ মেগাওয়াট চলে আসবে বলে আশা করছি। রামপালও চলে আসবে এরইমধ্যে। এছাড়া এস আলমের বাঁশখালীর কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটও ডিসেম্বরের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom