বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমছে না কেন প্রশ্ন ক্যাবের

আজ শনিবার আর্ন্তজাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ক্রমাগত কমার কারণে দ্রুত দেশে দাম সমন্বয়ের দাবিতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

 বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে ভোজ্যতেলের দাম কমছে না কেন প্রশ্ন ক্যাবের

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিশ্ববাজারে কমলেও দেশে ভোজ্যতেলের দাম কেন কমছে না এবং দাম নিয়ন্ত্রণে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। এছাড়া, প্রতিষ্ঠানটির কার্যকরী ভূমিকার অভাবেই দেশীয় তেলের বাজারে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

আজ শনিবার আর্ন্তজাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম ক্রমাগত কমার কারণে দ্রুত দেশে দাম সমন্বয়ের দাবিতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও দেশে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে যতটুকু আগ্রহী, কমাতে তেমন আগ্রহী নয়। এ সুযোগেই ভোজ্যতেলের দেশীয় বাজারে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন আমদানিকারকরা। কিন্তু, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে দীর্ঘদিনেও দেশীয় বাজারে কোনো পণ্যের দাম সমন্বয় করা হয় না। তাহলে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কী শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করছে?

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে কেনা কিংবা বুকিং রেট বেশিসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে দাম আর কমান না। বিশ্ববাজারে ক্রমাগতভাবে দাম কমার পর দেশে ভোজ্যতেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়ে বানিজ্যমন্ত্রী একাধিক বার আশ্বাস দিলেও সে আশ্বাসের বাস্তবায়ন হয়নি। একই সঙ্গে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কী শুধুমাত্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কাজ করছে? কমিশন পক্ষপাতমূলক কাজ করলে তা আইনের বরখেলাপ ও বিষয়টি দেশের ভোক্তাস্বার্থের জন্য হুমকিস্বরূপ।

নাজের হোসাইন বলেন, বিশ্ববাজারে যখন ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি ছিল, তখন সাধারণ ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে তেল আমদানিতে সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার ছাড়াও ভ্যাট ছাড়, এলসি কমিশন ও এলসি মার্জিন প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এসব সুযোগ-সুবিধার মাধ্যমে আনা তেলের দাম কম রাখতে চেয়েছিলেন আমদানিকারকরা। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে তার বিপরীত ঘটেছে ও ভোক্তারা তার কোনো সুফলই পাননি।

তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে, আর দেশে দাম বাড়ানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এখন উল্টো সুর তুলেছেন, ভোজ্যতেলের ফ্রি অন বোর্ড (এফওবি) দাম কমলেও বৈশ্বিক জ্বালানিতেলের মূল্যবৃদ্ধি, দেশে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়া ও ডলারের উচ্চমূল্যসহ নানা কারণে দাম আগের অবস্থানে ফিরছে না বলে খোঁড়া অজুহাত দিচ্ছেন তারা। ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের এমন আচরণ ব্যবসায় সুশাসন-নীতি-নৈতিকতাকে প্রশ্নের মূখে ফেলেছে।’

ক্যাব সহ-সভাপতি আরও বলেন, দাম বৃদ্ধির ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ভোজ্যতেলের দাম পাঁচবার ওঠানামা করেছে। এর মধ্যে তিন দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারসাজিতে গত বছর অক্টোবরের শেষ দিকে বেসামাল হয় ভোজ্যতেলের বাজার। ওই মাসে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৩৬ টাকা। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬০ টাকা বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

‘পরে সরকারের পক্ষ থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি লিটারে আট টাকা বাড়িয়ে নতুন মূল্য নির্ধারণ করা হয়। সে সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি, খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নাজের হোসাইন বলেন, এদিকে গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম পুননির্ধারণ করে সরকার। ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি রেকর্ড পরিমাণ ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এরপর গত ৯ জুন কোনো প্রকার কারণ ছাড়াই মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

‘এছাড়া, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও খুচরা পর্যায়ে ১৫৮ টাকা করা হয়। এক্ষেত্রে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয় লিটারপ্রতি পাঁচ-সাত টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ২০০-৪৯০ ডলার কমলেও দেশে দুদফায় প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৫১ টাকা বাড়ানো হয়।

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে টনপ্রতি অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে ছিল ৮৩৮ ডলার ও ২০২১ সালে ছিল ১ হাজার ৩৮৫ ডলার। কিন্তু, চলতি বছরের মার্চে বিশ্বব্যাপী ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যায়। ওই মাসে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১ হাজার ৯৫৬ ডলার। সর্বশেষ বুধবার (১৩ জুলাই) টনপ্রতি পাম অয়েলের দাম কমে ৯৪১ ডলার ও সয়াবিন তেলের দাম নেমে আসে ১ হাজার ৩৫৩ ডলারে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom