সেই ইংল্যান্ডের কাছেই সিরিজ হার বাংলাদেশের

গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ১৩২ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। টানা দুই ওয়ানডে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

সেই ইংল্যান্ডের কাছেই সিরিজ হার বাংলাদেশের
সেই ইংল্যান্ডের কাছেই সিরিজ হার বাংলাদেশের

প্রথম নিউজ, খেলা ডেস্ক: খেলাটা যখন ওয়ানডে, ঘরের মাঠ বাংলাদেশ দলের জন্য দুর্গের মতো। নিজেদের আঙিনায় সর্বশেষ ৭ ওয়ানডে সিরিজের সবকটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ হার খুঁজতে গেলে ফিরতে হবে ২০১৬ সালে। জস বাটলারের ইংল্যান্ড দল সেবার বাংলাদেশকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল। সেই ইংল্যান্ডই আবার বাংলাদেশের দুর্গে ফাটল ধরিয়েছে। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ১৩২ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। টানা দুই ওয়ানডে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ লড়াই করলেও আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রতিযোগিতা করতে পারেনি তামিমের দল। ওপেনার জেসন রয়ের সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে ৩২৬ রান করলেই ম্যাচ থেকে অনেকটা ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। রান তাড়ায় যা একটু আশা ছিল, সেটিও নষ্ট হয় টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। টপ অর্ডার হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পরার পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ৪৪.৪ ওভারে ১৯৪ রানে থেমেছে বাংলাদেশের ইনিংস। 

প্রথম ম্যাচে ক্রিস ওকসের সিম মুভমেন্ট বাংলাদেশ দলের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের ভুগিয়েছে। আজ ওকসকে বিশ্রাম দেওয়ায় নতুন বলটা নিয়েছেন স্যাম কারেন। যিনি নতুন বলে সুইংয়ের জন্য পরিচিত। আর সে সুইংই বাংলাদেশ দলের কাল হয়ে দাঁড়ায়। ইনিংসের প্রথম ওভারেই কারেনের শিকার লিটন দাস ও নাজমুল নিজের করা দ্বিতীয় ওভারে তুলে নেন মুসফিককে। চোখের পলকে ৯ রানে ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশ দলের। ৩২৬ রান তাড়া করতে নামা কোনো দলের জন্যই যা আদর্শ শুরু নয়।

এরপর সাকিব-তামিম জুটি ছাড়া বাংলাদেশ দলের ব্যাটিংয়ে আলোচ্য বিষয় বলতে আর কিছুই ছিল না। কয়েকদিন ধরে এই দুজনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। মাঠের খেলায় অবশ্য এর কোনো প্রভাব দৃশ্যমান ছিল না। দলের বিপদে দুজন মিলে যোগ করেছেন ১১১ বলে ৭৯ রান। তামিম ৬৫ বল খেলে ৩৫ রান করেছেন, সাকিব ৬৯ বলে ৫৮। তবে ম্যাচের অবস্থায় সাকিব-তামিমের ব্যাটিং বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আদিল রশিদ বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরতে দেননি।

উইকেটে থিতু সাকিবকে আউট করেছেন আদিল রশিদ। ২৩ রান করে ভালো খেলতে থাকা আফিফ হোসেনের পর ড্রেসিংরুমে পথ দেখান অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহকে (৩২)। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজকেও তুলে নেন আদিল। সেট ব্যাটসম্যানকে আউট করার ক্ষেত্রে তাঁর সুনাম আছে। আজ সেটা ভালো করে টের পেল বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডার। ১০ ওভার বোলিং করে ৪৫ রান দিয়ে নিয়েছেন এই ৪ উইকেট। অল আউট হওয়ার আগে তাসকিন আহমেদ শেষের দিকে ২১ রান করেছেন।

ইংল্যান্ডকে সাদা বলের ক্রিকেটের রাজা বলা যে বাড়াবাড়ি নয়, সেটি আজ আরও একবার দেখা গেল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। যে উইকেটটা তামিম ইকবালের কাছে আগে ব্যাটিংয়ের মতো মনে হয়নি, সেখানেই জস বাটলার চেয়েছিলেন চ্যালেঞ্জটা নিতে। দুর্দান্ত কিছুর জন্ম সাধারণত এ মানসিকতা থেকেই হয়। আজও তাই হয়েছে। আর তাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন জেসন রয়।

ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা রয় সেঞ্চুরি করে নিজ দলকে গড় দিয়েছেন ইংল্যান্ড-সুলভ স্কোরের ভিত্তি। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩০০ রান করা দলটার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের ২০৯ রান তাড়া করতে ইংল্যান্ডের ৪৯তম ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করতে হয়েছে। তখন মনে হয়েছে মিরপুরের উইকেটে অন্তত ইংল্যান্ডের বিস্ফোরক ব্যাটিং দেখা যাবে না। আজ সে ভুল ভেঙে দিয়েছেন রয়-বাটলাররা।

সেটিও আবার এসেছে স্পিনের বিপক্ষে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের সৌজন্যে। ডানহাতিতে ঠাসা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিন। সাকিব আল হাসান ও তাইজুল ইসলামের ২০ ওভারে ইংলিশরা কেমন খেলেন, সেদিকে ছিল সবার চোখ। কৃতিত্ব ইংল্যান্ডের, কঠিন চ্যালেঞ্জটা তাঁরা উতরে গেছেন সাফল্যের সঙ্গে। দুজনের ২০ ওভারে ১২২ রান নিয়েছে ইংল্যান্ড, উইকেট মাত্র ২টি।

বাকি বোলারদের মধ্যে তাসকিন আহমেদই  যা একটু চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছেন। ১০ ওভারে ৬৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসার। মোস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজকে কার্যকরী মনে হয়নি। মিরাজ ২ উইকেট নিলেও ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৭৩। মোস্তাফিজ এ নিয়ে টানা দুই ম্যাচে ছিলেন উইকেটশূন্য।

বাংলাদেশ দলের বোলারদের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেন রয়। সুইপ, রিভার্স সুইপে বাঁহাতি স্পিনারদের লাইন-লেংথ এলোমেলো করে দেন তিনি। নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরির ভিতটা তিনি পেয়ে যান তখনই। এরপর রয়কে চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ ছিলেন না। ১২৪ বল খেলে তিনি করেছেন ১৩২ রান। ১৮টি চার ও ১টি ছক্কা ছিল রয়ের ১০৬ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, রয় আউট হয়েছেন সেই বাঁহাতি স্পিনেই। সাকিবের বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য ক্ষতি যা হওয়ার, হয়ে গেছে। রয়ের ইনিংসে পেয়ে যাওয়া ভিত্তি কাজে লাগিয়ে বাটলার (৬৪ বলে ৭৬) ও মঈন আলী (৩৫ বলে ৪২) হাত খুলে খেলেছেন। তাতে ইংল্যান্ড দল করেছে ৭ উইকেটে ৩২৬ রান।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: