শেয়ারবাজারে সুদিন ফিরছে?

প্রথম নিউজ, ঢাকা : দুর্দিন কাটিয়ে সুদিনে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। ঈদের পর লেনদেন হওয়া ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসেই লেনদেন ঊর্ধ্বমুখী। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। অবশ্য ঈদের আগে তিন মাসের টানা দরপতনে ডিএসইর বাজার মূলধন ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার ওপরে কমে যায়। ফলে বিনিয়োগকারীরা এখনো বড় ধরনের লোকসানের মধ্যেই আছেন।
কয়েকটি কারণে ঈদের পর শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে অযাচিত হস্তক্ষেপ করা না হলে এবং অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের কোনো নেতিবাচক সংবাদ না এলে ধীরে ধীরে বাজার শক্ত অবস্থানে চলে আসবে। অবশ্য ঈদের পর ঊর্ধ্বমুখী বাজারেও খুব বেশি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
তারা বলছেন, এর আগেও কয়েক দফায় বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে বাজার পতনের বৃত্তেই আটকে থেকেছে। ফলে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হবে এ আশায় নিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ করে আরও লোকসানের মধ্যে পড়েছেন। ঈদের পর বাজার কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হলেও অধিকাংশ বিনিয়োগকারী এখনো বড় লোকসানের মধ্যে আছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে এখনো ৫০-৬০ শতাংশ বিনিয়োগকারী লোকসানে।
ঈদের আগে শেয়ারবাজারে অব্যাহত দরপতন হলেও, ঈদের পর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দেওয়ার কারণ হিসেবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারে সরকারি কর্মকর্তাদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, তা দূর হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। একই সঙ্গে টেকনো ড্রাগের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আবেদনে জমা পড়া অর্থ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাবে ফিরে এসেছে। সেই অর্থ এখন বিনিয়োগ হচ্ছে বাজারে।
তারা বলছেন, অব্যাহত দরপতনের কারণে বাজারে সব খাতের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার দাম এখন অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। এখন থেকে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোটাই স্বাভাবিক।
বাজার এমন জায়গায় চলে গেছে যেখান থেকে বাজার নিজেই ঘুরে দাঁড়াবে। এখন আমরা যেটা দেখছি বাজার তার নিজস্ব শক্তিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ওঠা-নামার মাধ্যমেই একটা পর্যায়ে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।– ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৩ মার্চ ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ছিল ৬ হাজার ২১৫ পয়েন্ট। আর বাজার মূলধন ছিল ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। এরপর শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের মধ্যে পড়লে ১১ জুন ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৫ হাজার ৭০ পয়েন্টে নেমে যায়। আর বাজার মূলধন কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৩০ হাজার ৬৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ, অব্যাহত দরপতনের মধ্যে পড়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমে ১ হাজার ১৪৫ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন কমে ১ কোটি ২৬ হাজার ৩৬৯ টাকা।
ঈদের পর এখন পর্যন্ত (৭ জুলাই) লেনদেন হওয়া ১২ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারের প্রবণতা ঊর্ধ্বমুখী। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৪৪১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ৫৫৮ পয়েন্টে উঠে এসেছে। আর বাজার মূলধন ৩৯ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ২০৯ কোটি টাকায়।
মিজানুর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ঈদের পর শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী হলেও আমার মতো সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখনো বড় লোকসানে। আমার পোর্টফোলিওতে যে শেয়ারগুলো রয়েছে তার মধ্যে মাত্র একটিতে লাভে আছি। বাকি সবগুলোতে লোকসান। এর মধ্যে একটিতে ৬৩ শতাংশ, একটিতে ৫০ শতাংশ এবং একটিতে ৪৯ শতাংশ লোকসানে আছি। এছাড়া চারটিতে ৩০ শতাংশের বেশি এবং একটি ২১ শতাংশ ও একটি ১৮ শতাংশ লোকসানে। এই লোকসান থেকে বের হতে পারবো কি না জানি না। মুনাফার দরকার নেই, আসল টাকা ফিরে পেলেই আমি খুশি।’