শহিদ জিয়াকে নিয়ে সাংবাদিক দাস গুপ্তের অর্বাচীন মন্তব্য

শহিদ জিয়াকে নিয়ে সাংবাদিক দাস গুপ্তের অর্বাচীন মন্তব্য

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: সুখরঞ্জন দাসগুপ্ত ভারতের একজন সিনিয়র সাংবাদিক। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লেখেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আগস্ট ১৭, ২০২৩, ‘১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট ও ইন্দিরা গান্ধী’ শিরোনামে প্রবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি কোনো রাগঢাক না রেখে সরাসরি লিখেছেন ‘শেখ মুজিবের হত্যাকারী জিয়াউর রহমান’। আরেকটি কথা তিনি লিখেছেন, ‘আমরা কলকাতায় দেখেছি। খন্দকার মোশতাক কোনোদিনই মুজিবনগর সচিবালয়ে যাননি।’ সাংবাদিক দাশগুপ্ত, আপনি কোথায় পেলেন জিয়াউর রহমান হত্যাকারী? আপনি কিছু জানেন? কোন দলিলে পেলেন জিয়াউর রহমান হত্যাকারী? কোন রায়ে পেলেন জিয়াউর রহমান হত্যকারী?

সাংবাদিক দাসগুপ্ত, আপনি কি জানেন আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ মুজিব হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমার কাছ থেকে জেনে নিন। মন দিয়ে পড়ুন। খুব সংক্ষেপে লিখছি যা তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।

আকন্দ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানকে পরিবারসহ হত্যার পর তখন মামলা কিংবা জিডি কোনোটাই দায়ের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের অক্টোবরে শেখ মুজিবের পিএ আফম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তিনি যা দেখেছিলেন সেই অনুযায়ী একটি বিস্তারিত এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে তিনি যা লিখেছিলেন সেটার ভিত্তিতেই তদন্ত শুরু করা হয়। তারপর তদন্ত শেষ করে ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি ২০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। শেখ মুজিবের খুনিদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিডিয়োসহ ৪৬ ধরনের আলামত চার্জশিটের সঙ্গে আদালতে জমা দেওয়া হয়। তদন্তে নাম আসলেও চার্জশিটের আগে মারা যাওয়ায় সাবেক রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদসহ কয়েকজনের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ১৯৯৭ সালের ১২ মার্চ কয়েকজন আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।’

মামলার বিচারে ২০২ কার্যদিবসে মোট ৬১ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত। বিচারের সব প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল (মৃত্যু — ডিসেম্বর ১১, ২০১৪) শেখ মুজিব হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। ১৭১ পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক ১৮ আসামির মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। বাকিদের খালাসের রায় দেন তিনি।

মামলাটির প্রধান স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটরের দায়িত্বে ছিলেন বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাবা মো. সিরাজুল হক। তাকে সাহায্য করেন সৈয়দ রেজাউর রহমান, আনিসুল হক ও মোশারফ হোসেন কাজল। আসামিপক্ষে ছিলেন খান সাইফুর রহমান, আব্দুর রেজ্জাক খান ও টিএম আকবর প্রমুখ।

এরপর মামলা গড়ায় হাইকোর্টে। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিলে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত রায় দেয়। বিচারপতি এম রুহুল আমিন পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়ে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন। অপরদিকে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ডই বহাল রাখেন।

বিভক্ত রায় হওয়ায় নিয়মানুযায়ী মামলাটি তৃতীয় বেঞ্চে পাঠান তৎকালীন প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমান । তৃতীয় বেঞ্চের রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে।

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা ১২ আসামিরা — সাবেক মেজর বজলুল হুদা, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) ফারুক রহমান, কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, একেএম মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আব্দুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, মেজর (অব.) নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন খান, লে. কর্নেল (অব.) রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মাজেদ ও লে. কর্নেল আজিজ পাশা (অব.)।

এর মধ্যে পাঁচ জন ছাড়া বাকী সবার ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

সাংবাদিক দাসগুপ্ত, একজন জাঁদরেল দলীয় তদন্ত কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলা গোছগাছ করে এই যে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিচার কার্য সম্পন্ন হলো সেখানে খন্দকার মোশতাকের কথা এসেছে কিন্তু তিনি মৃত বলে চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু মামলার কোনো পর্যায়ে জিয়াউর রহমানের নাম কি এসেছে? এই বর্তমান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এই বিচারের সময় তার পিতা সিরাজুল হকের সঙ্গে ছিলেন, তিনি কি সেই সময় জিয়াউর রহমানের নাম এই বিচারে এনেছিলেন? এই জিয়াউর রহমানকে কি কোন দণ্ড দেওয়া হয়েছে? তাহলে কেন এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জিয়াউর রহমানের নাম জড়িয়ে বারবার ওই নামটি উচ্চারণ করেন?

আরেকটি কথা সাংবাদিক দাসগুপ্ত মহাশয়, আপনি কি জানেন যখন শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন তখন জিয়াউর রহমানের অবস্থান সেনাবাহিনীতে কি ছিল? যদি না জানেন তাহলে জেনে নিন। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ। সেনাপ্রধান ছিলেন মেজর জেনারেল কেএম শফিউল্লাহ। সেনাবাহিনীতে কোন বিদ্রোহ দেখা দিলে সেটা মোকাবেলা করার দায়িত্ব সেনাপ্রধানের। কেএম শফিউল্লাহ এখনো বেঁচে আছেন, তার সাক্ষাৎকার নিয়ে দেখুন এদিনের ঘটনার জন্য কে বা কাহারা দায়ী? তিনি খুব ভালোভাবেই বলতে পারবেন।

সাংবাদিক দাশগুপ্ত মহাশয়, আগস্ট ১৫, ১৯৭৫ বঙ্গভবনে যারা মন্ত্রিসভায় শপথ গ্রহণ করেছিলেন তারা কোন দলের সদস্য ছিলেন জানেন কি? জেনে নিন, মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন, আবু সাঈদ চৌধুরী, এম ইউসুফ আলী, ফণীভূষন মজুমদার, সোহরাব হোসেন, আব্দুল মান্নান, মনোরঞ্জন ধর, আব্দুল মমিন, আসাদুজ্জামান খান, এ আর মল্লিক, মোজাফফর আহমদ চৌধুরী। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, দেওয়ান ফরিদ গাজী, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মঞ্জু, কে ওবায়দুর রহমান, মোমেন উদ্দিন আহমেদ, মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, ক্ষিতীশচন্দ্র মণ্ডল, রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দ আলতাব হোসেন। এইসব মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীর সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি এবং নেতা।

সাংবাদিক দাশগুপ্ত মহাশয় এই মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রীরা শেখ সাহেবের লাশ ৩২ নম্বরের বাড়িতে সিড়ির গোড়ায় রেখে বঙ্গভবনে গিয়ে শপথ নিয়েছিলেন। এত এত সব লোকজন থাকতে আপনার নজর ওই জিয়াউর রহমানের উপরে গিয়ে পড়ছে কেন?

বয়স তো অনেক হয়েছে দাসগুপ্ত মহাশয়, চুলে কি পাক ধরেছে? আপনি কি বিচারের বাহিরে আরেকটি বিচারালয় বসাতে চান? সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেন নাক গলাতে আসেন? আপনার বক্তব্য আওয়ামী লীগকে খুশি করতে পারে, এটা যেমন সত্য তেমনি ধরে নেবেন অন্য কোন দলকে নাখোশ করতে পারে, ক্ষুব্ধ করতে পারে । বিষয়টি মাথায় রাখবেন।

আরেকটি কথা ভুলে গিয়েছিলাম। তিনি লিখেছেন, ‘আমরা কলকাতায় দেখেছি। খন্দকার মোশতাক কোনোদিনই মুজিবনগর সচিবালয়ে যাননি।’
মিস্টার দাস গুপ্ত আপনি কি জানেন শেখ সাহেব তাঁর জীবদ্দশায় একদিনের জন্যও মুজিব নগরে পা রাখেননি?

আমিরুল ইসলাম কাগজী ও ড. মোর্শেদ হাসান খান- ফেইসবুক থেকে নেওয়া