রুখে দাও ষড়যন্ত্রের নির্বাচন

রুখে দাও ষড়যন্ত্রের নির্বাচন

প্রথম নিউজ, ডেস্ক: বিএনপিকে ছাড়াই ভোটের চিন্তা আওয়ামী লীগের -এই শিরোনামে একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে দৈনিক প্রথম আলো। তাতে লেখা হয়েছে, "আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আওয়ামী লীগ। দলটির নির্বাচনী কৌশলে বিএনপিসহ আন্দোলনকারী দলগুলোকে বিবেচনায় রাখা হচ্ছে না। সংবিধানের বিদ্যমান ব্যবস্থাতেই নির্বাচন করার পথে এগোচ্ছে তারা। তবে শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে এলে করণীয় কী হবে, সেই কৌশলও ঠিক করে রেখেছে ক্ষমতাসীন দলটি। সরকার ও আওয়ামী লীগের উচ্চপর্যায়ে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে সরকারের পদত্যাগের এক দফার আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। দলটি এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নয়, এই অবস্থানে অটল রয়েছে। বিএনপির এমন মনোভাব সম্পর্কে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করে, বিএনপি এক দফা দাবি তুলে আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সে জন্য বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন করার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছেন তাঁরা। বিএনপি নিজে থেকে না এলে তাদের নির্বাচনে আনার কোনো উদ্যোগ সরকার নেবে না। পাশাপাশি বিএনপি বলছে, ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ আবার একতরফা নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু একতরফা নির্বাচন করলে তা দেশের ভেতরে ও বাইরে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।" — প্রথম আলো/ জুলাই ২১, ২০২৩।

রিপোর্টে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য খুব স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার ইচ্ছা যে, এমন কৌশল করা হবে যাতে বিএনপি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাইরে থাকে। এর প্রাথমিক উদ্যোগ হচ্ছে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট-বিএনএম এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি নামে দুটো ভুঁইফোঁড় পার্টির নিবন্ধন দেওয়া। এ দুটো দলের কে প্রকাশ্য নেতা আর কে অন্দরমহলের নেতা সে আলোচনা সাইডলাইনে। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে দু'কলম লেখা যেতে পারে। কোনো ভনিতা ছাড়াই বলা যায় এই দুটো দলের নিবন্ধন দিয়ে ইসি সরকারের দলদাসগিরির নিকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এবং এমন আরও ভূঁইফোড় সংগঠনের নিবন্ধন দিলে তাতে বিস্মিত হবার কিছু দেখছি না। আমরা পত্রিকার খবর থেকে জেনেছি বিভিন্ন জেলা শহরে দল দুটোর অফিস এবং নেতারা আওয়ামী লীগের পদধারী। তারাই অফিসের ভাড়া দিয়ে থাকে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের কেয়ারে দল দুটি টিকে আছে। দল দুটোর নাম এমনভাবে ঠিক করা হয়েছে যাতে বিএনপির আশপাশ দিয়ে ঘুরতে পারে। এটাও একটা গ্রাম্য চালাকি।
আর যারা আবেদন করার পরও নিবন্ধন পায় নি তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদ এবং জামায়াত থেকে বেরিয়ে নতুন দল গঠনকারি ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবর রহমান মঞ্জুর এবি পার্টি। হিরো আলম এবং চরমোনাই পীরের কথা বাদ। শুধু এই একটি মাত্র পদক্ষেপ বিবেচনায় নিলে ইসিকে অনায়াসে আওয়ামী লীগের নৌকায় তুলে দেয়া যেতে পারে। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার করানোর ক্ষেত্রে এই ইসি যে ভয়াবহ দায়িত্ব পালন করবে সেটা চোখ বুজে বলে দেয়া যায়।
সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করার জন্য আরও যারা একপায়ে খাঁড়া তাদের অন্যতম হচ্ছে পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে জেনেও সেই পুলিশ বাহিনী গত সাত মাসে নতুন ৫০টি গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপির দশ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করেছে। পুলিশ কর্মকর্তাদের এক গোপন বৈঠকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে গত ১৫ বছরের সব মিথ্যা মামলা সচল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা যাতে আদালতের বারান্দায় ব্যস্ত থাকে সেই ব্যবস্থা নিতে জেলা জজদের নির্দেশ দিতে আইনসচিবকে কাজে লাগানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আর আমলা বলতে নির্বাচনকালে যারা মাঠে কাজ করবেন সেই ডিসি,এসপি,ইউএনও,ওসি সবাই শেখ হাসিনার সরকারের সুবিধাভোগী। তারা যে কোনো ভাবে চাইবে আওয়ামী লীগ অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকুক। আমেরিকার স্যাংশনকে তারা পাত্তা দিচ্ছে না। মাত্র দুদিন আগে র্যাব ডিজি খুরশিদ হোসেন বলেছেন, স্যাংশনকে ভয় পায় না র্যাব। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে র র্যাব অফিস উদ্বোধনকালে তিনি আরো বলেন র্যাব কারও রক্তচক্ষুকে ভয় পায় না। যেকোনো জায়গায়, যেকোনো লোকের গায়ে হাত দেয়া র্যাবের জন্য কোনো বিষয় নয়।
আওয়ামী লীগ যদি চায় বিএনপিকে বাইরে রেখে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে তাহলে এসব বাহিনী দুশো মাইল গতিতে সাপোর্ট দিয়ে যাবে। শেখ হাসিনা অতীতে ২০১৪ সালে বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করে এই বাহিনীর সাপোর্ট নিয়ে দিব্যি সরকার চালিয়েছে। শুধু সরকার চালায়নি বিএনপি যাতে আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সে জন্য র্যাব পুলিশ দিয়ে দলটির কোমর ভেঙে দেয়া হয়। কিন্তু পাঁচ বছর পর যখন ২০১৮ সালে নির্বাচন ঘনিয়ে এলো তখন তিনশো আসনের গোয়েন্দা রিপোর্ট নিলেন শেখ হাসিনা। বিএনপির জনপ্রিয়তা দেখে চোখ কপালে উঠলো তাঁর। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেয়ার পর নতুন ফন্দি আঁটেন তিনি। ভোটের আগের রাতে গোটা প্রশাসনযন্ত্র মাঠে নামিয়ে নৌকায় সিল মেরে বিজয় নিশ্চিত করেন।বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়লো যে শেখ হাসিনার সরকার নিশিরাতের সরকার।
বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেই আওয়ামী লীগ তথা শেখ হাসিনার জন্য সমস্যা। তাইতো বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার একটা ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। এখন এমন পরিস্থিতিতে কী করা যায়? সে ব্যাপারে প্রবীণ রাজনীতিক, শিক্ষাবিদ, লেখক বদরুদ্দীন উমরের একটা বক্তব্য ধার করে লিখছি, "এখনো আওয়ামী লীগের অধীন নির্বাচন হলে যেভাবে আমলা-পুলিশের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, এতে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হবে না। তাদের তাড়াতে হবে। বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের অধীন নির্বাচনে যাব না। বিএনপিকে বলতে হবে, নির্বাচন করতে দেব না।
আসলে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, এই আওয়াজ তুলতে হবে। বলতে হবে যে নির্বাচন করতে দেব না। নির্বাচনের আগে থেকে আওয়াজ তুলব, জনগণকে সংগঠিত করব এবং জনগণকে নিয়ে সব নির্বাচনী কেন্দ্র ঘেরাও করব, নির্বাচন হতে দেব না — এভাবে বলতে হবে। না হলে নির্বাচন করব না বলে বসে থাকলে আওয়ামী লীগ আগের মতোই নির্বাচন করে বসে যাবে।
আওয়ামী লীগ বলছে, বিরোধীরা নির্বাচন বানচাল করতে চায় উল্লেখ করে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘অবশ্যই নির্বাচন বানচাল করতে হবে। তোমরা নির্বাচন বানচাল করোনি ১৯৯৬ সালে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তোমরা তো আন্দোলন করেছিলে। এমন আন্দোলন হলো যে সেখানে শুধু নির্বাচন বাতিল হলো তা-ই না, বিএনপির মন্ত্রিসভার সবাইকে পদত্যাগ করতে হলো। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো। এখনো তা-ই করতে হবে।’ সামগ্রিকভাবে জনগণের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে যদি লড়াই না করা যায়, এই পুরো পরিস্থিতি যদি বোঝা না যায়, তা হলে এই সংগ্রাম করে লাভ হবে না।
আমিরুল ইসলাম কাগজী ও অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান , ফেইসবুক ওয়াল থেকে।