কাজল সহজাত প্রকৃতি ও প্রবণতারই স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ

বর্তমান সরকার আমলে গুম ও নির্যাতনের শিকার এবং মৃত্যুর প্রকোষ্ঠ থেকে ফিরে আসা চিত্রসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল একটি বড়ো রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন।

কাজল সহজাত প্রকৃতি ও প্রবণতারই স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ
প্রথম নিউজ, ডেস্ক: বর্তমান সরকার আমলে গুম ও নির্যাতনের শিকার এবং মৃত্যুর প্রকোষ্ঠ থেকে ফিরে আসা চিত্রসাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল একটি বড়ো রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তৃতা করেছেন। নিজের পৈশাচিক অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন। সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছেন। কাজলের সমালোচনা করছেন সাংবাদিকদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, একটি পক্ষের মঞ্চে উঠে কাজল নিজেই নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। তিনি কী করে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকতে বলেন?
এ সমালোচনাকে আমি অবাস্তব ও অন্যায্য বলে মনে করি। আমি মনে করি, কাজল ভুল বা অন্যায় কিছু করেন নি। যারা তার পদক্ষেপের সমালোচনা করছেন, তাদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, সাংবাদিকতায় 'নিরপেক্ষতা' অর্থ কী? কারুর বিরুদ্ধে কিছু না-বলা কিংবা এক পক্ষের বিরুদ্ধে কিছু বললে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধেও কিছু বলে ভারসাম্য ঠিক রাখার নাম কি নিরপেক্ষতা? সচেতন নাগরিক হিসেবে সাংবাদিকের কোনো রাজনৈতিক মতামত থাকতেই পারে। কিন্তু সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে পছন্দ-অপছন্দের পক্ষ নির্বিশেষে সঠিক তথ্য তুলে ধরাই সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতা। সত্য কারো পক্ষে এবং কারো বিপক্ষে যায়। কারো মুখ না চেয়ে সেই অকাট্য সত্যকে তুলে ধরাই সাংবাদিকতার নিরপেক্ষতা।

ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল

কাজল আমার জানা মতে, বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিরোধী কোনো অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন-না। কিন্তু সাংবাদিকতা-সম্পর্কিত তার কিছু কাজ কতিপয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানের বিরুদ্ধে যাওয়ায় তাকে গুরুতর পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। কাজল গুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জীবন-মৃত্যুর এক অনিশ্চিত দোলায় অনেক দিন ধরে দুলবার দুঃসহ অভিজ্ঞতার পর তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। সাংবাদিকতা পেশাই হয়তো তার গুমকে আলোচিত করে তোলার কারণ হওয়ায় তাকে খুন করে লাশ গায়েব করার বদলে জীবিত অবস্থায় ছাড়া হয়েছে।
একজন নাগরিক হিসেবে এর সুবিচার রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে কাজল পাননি। তার সঙ্গে কী আচরণ করা হয়েছে, দেশের চলমান পরিস্থিতি মিডিয়াকেও তার সে-সব সংবেদনশীল গুরুতর অভিযোগ বিশদ ভাবে প্রচারের সুযোগ দেয়নি। এমন পরিস্থিতির শিকার একজন মানুষের কাছ থেকে দেশের বিবদমান রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মধ্যে পূর্ণ ভারসাম্য বজায় রাখা এবং আবেগাকুল না-হবার দাবি নিষ্ঠুর বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
কাজল যে শাসন-প্রশাসনের হাতে গুম ও নির্যাতীত হয়েছেন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী মঞ্চকে তিনি তার অভিযোগ, মর্মবেদনা, ক্ষোভ, ক্রোধ, যাতনা, দুঃখ ও কষ্টের বিবরণ তুলে ধরার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং এতে মানুষের সহজাত প্রকৃতি ও প্রবণতারই স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। প্রতিকারহীন অত্যাচার-অবিচারের শিকার মানুষকে নির্মোহ, নিরাসক্ত এবং অন্যায়কারীর প্রতি পক্ষপাতহীন থাকবার পরামর্শ দেয়াটাও কিন্তু নির্মম পরিহাসেরই শামিল। 
মারুফ কামাল খান, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট ; সাবেক প্রেস সচিব, বিএনপি চেয়ারপারসন  (ফেইসবুক ওয়াল থেকে)।