জাতীয়করণের দাবি: ‘শোকজ নয়, আরও কঠিন শাস্তি দিলেও ক্লাসে ফিরবো না’
সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরেও প্রেস ক্লাবের মূল ফটকের উল্টো দিকে রাস্তায় পত্রিকা বিছিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: মাকসুদা বেগম ডেইজি। বয়স ৫৬ ছুঁই ছুঁই। পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় এসেছেন গত ১০ জুলাই রাতে। পরদিন ১১ জুলাই সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ডাকে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এরপর টানা ১৪ দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রেস ক্লাবের সামনেই কাটছে তার। সন্তান-সংসার ফেলে শেষ বয়সে দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেমেছেন। তার ভাষ্য, এ দাবি নিয়ে বহু আন্দোলন করেছি, এবারই শেষ ভরসা।
সোমবার (২৪ জুলাই) দুপুরেও প্রেস ক্লাবের মূল ফটকের উল্টো দিকে রাস্তায় পত্রিকা বিছিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে শিক্ষকদের অনুপস্থিতি তদারকির বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মাকসুদা বেগম ডেইজি জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল করলো। তারপর অনুপস্থিতি তদারকির নির্দেশ দিলো। এখন শুনছি প্রতিদিন নাকি অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা করা হবে। আসলে মাউশি আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। শিক্ষামন্ত্রী কিংবা মাউশি যত সূক্ষ্মভাবেই চাপ দিক বা যত কঠিন শাস্তিই দেওয়া হোক না কেন, দাবি আদায় ছাড়া আমরা ক্লাসে ফিরবো না।
মাকসুদা বেগম ডেইজি পটুয়াখালীর দশমিনার বেগম আরাফাতুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। আর মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের মতো চাকরির বয়স আছে তার। এবার শেষ ভরসা নিয়ে আন্দোলন এসেছেন বলে জানান এ শিক্ষিকা। তিনি আরও বলেন, অনুপস্থিত শিক্ষকদের তালিকা করতে কর্মকর্তাদের কাছে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে কোনো কাজ হবে না। বরং যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে আমাদের ক্লাসে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের এ আন্দোলনে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং গভর্নিং কমিটি সবার সমর্থন আছে। কারণ জাতীয়করণ হলে ছাত্র-ছাত্রীদেরও বেতনসহ সব খরচ কমবে।
পটুয়াখালীর পূর্ব মধুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা হাজারও বৈষম্যের শিকার। বিশেষ করে ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, যা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না। মাত্র ১০০০ টাকা বাড়ি ভাড়া। এটাও অনেক বড় বৈষম্য। উৎসব ভাতা পাই মাত্র ২৫ শতাংশ। অথচ পদমর্যাদার ক্ষেত্রে আমরা একই। আমাদের সিলেবাসও একই। কিন্তু বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে আকাশসম বৈষম্য। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানাই, আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়া আমরা ফিরে যাবো না। আপনি কেবল আমাদের ক্লাসে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে পারেন।
কলাপাড়া ফরিদগঞ্জ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আবু জাফর বলেন, টানা ১৪ দিন ধরে বেসরকারি শিক্ষকরা এখানে এসে অবস্থান কর্মসূচি করছেন। কেউ কেউ টানা ৫-৬ দিন কর্মসূচি করে এলাকায় গেছেন, তারা আবার ফিরবেন। তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রী, মাউশি পরিচালক এবং শিক্ষাসচিব অর্থাৎ সরকার আমাদের শ্রেণিকক্ষে ফেরানোর নানা ফন্দি-ফিকির করছেন। কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে হেঁটেছেন তারা। তারা হেঁটেছেন ভয় দেখানোর প্রক্রিয়ায়। গ্রীষ্মকালীন ছুটি টেনে বর্ষাকালে এনেছিলেন। এবার তা বাতিল করে শীতকালে নিয়ে গেলেন। এত বাহানা না করে দাবি মেনে নিলেই হয়ে যায়। দাবি আদায় ছাড়া শিক্ষকরা ফিরবেন না।
ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার নূরজাহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহবুব আলম বলেন, শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন- আমরা নাকি ঘোলা রাজনৈতিক পরিবেশে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি, এটা মিথ্যা। এ দাবি নিয়ে বহু আন্দোলন হয়েছে। আমার চাকরির বয়স ৩২ বছর। খালেদা জিয়ার আমলেও আমরা পল্টনের মাঠে আন্দোলন করেছি। এখানে আজকে আন্দোলনে যারা এসেছেন, অন্তত ৭০ শতাংশ শিক্ষক আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। তাই রাজনৈতিক ট্যাগ লাগাবেন না। আমাদের এ আন্দোলন নির্বাচনকেন্দ্রিকও নয়।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির চরভাটপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটির শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, আজ নিয়ে ছয়দিন আন্দোলনে অংশ নিচ্ছি। ঢাকায় এসে উত্তরায় ভাইয়ের বাসায় থাকছি। যাতায়াত-খাওয়া দিয়ে তবুও দিনে ১০০০ টাকা খরচ পড়ে যাচ্ছে। অনেকে হোটেলে থেকে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের প্রতিদিন ২০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। তবুও আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
জানতে চাইলে বিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ কাওছার আহমেদ বলেন, ভয়-ভীতি নয়, আমাদের সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দিন। শোকজ, বহিষ্কারের পথে হাঁটবেন না। সেটা হবে ভুলপথ। প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে আছেন। আশা করছি দেশে ফিরেই তিনি আমাদের সুখবর দেবেন। আমরা সেই আশা বুকে নিয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। এদিকে, সোমবার টানা ১৪ দিনের মতো বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা। এদিন সকাল ৯টা থেকে পল্টন-হাইকোর্ট অভিমুখী সড়কের একপাশ বন্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি করেন তারা। তবে গত কয়েকদিনের চেয়ে আজ শিক্ষকদের উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেছে।