Ad0111

শীতের তীব্রতায় কাঁপছে পাবনা

দেশের উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।

শীতের তীব্রতায় কাঁপছে পাবনা
পাবনার মেরিল বাইপাস মোড়ে আবর্জনা জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন দুই ব্যক্তি

প্রথম নিউজ,পাবনা: মাঘের প্রথম সপ্তাহ থেকে পাবনা জেলায় হাড় কাঁপানো ঠান্ডা শুরু হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ ও কুয়াশার কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। চার দিন ধরে জেলাজুড়ে বইছে শীতল হাওয়া। যার ফলে শ্রমজীবী মানুষ চরম বিড়ম্বনার সম্মুখীন হচ্ছেন। শিশু-বৃদ্ধরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

ভোরের আলো উঠা শুরু করলেই ঘন কুয়াশায় ফিরে আসে যেন শীতের ছবি। শহরে গরম কাপড়ের দোকানে বেড়েছে মানুষের সমাগম। সকাল-সন্ধ্যা, শীতের পোশাকেও মানুষ কাঁপছে। সন্ধ্যায় শহরে পোড়া কাগজের আগুনে হাত গরম করতে দেখা যায় লোকজনকে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসে ঘন কুয়াশা। তিন দিনে পাবনায় এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।

পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের পর্যবেক্ষণ মো. নাজমুল হক জানান, উত্তরাঞ্চলের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কয়েক দিন শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে ঈশ্বরদীতে আলোর দেখা পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে তিনি জানান, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও নিচে নেমে যাবে এবং শীতের তীব্রতা  বাড়বে। গতকাল জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে তা ১০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রচণ্ড ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুরা। শীতবস্ত্র ও খাবারের সংকটে হাজার হাজার দরিদ্র মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। জেলাজুড়ে এক সপ্তাহ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন তারা। শীতের তীব্রতা ও ঘন কুয়াশায় সকালে কৃষকরা পেঁয়াজ, রসুন ও বিভিন্ন সবজিখেতের জমিতে পরিচর্যা করতে যেতে পারছেন না। যার জন্য পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি পরিচর্যার অভাবে জমিতে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলন বিপর্যয়ের শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা।

তাপমাত্রা দিন দিন কমতে থাকায় পাবনা শহরের ফুটপাতের মার্কেটগুলোতে বাড়ছে শীতবস্ত্রের বিক্রির পরিমাণ। শীত থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতে পোশাক কিনছেন নিম্নআয়ের মানুষ। গরম কাপড় কেনা-বেচা হচ্ছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। পাবনা হকার্স মার্কেট ও সোনালী ব্যাংক-সংলগ্ন এলাকায় শীতবস্ত্রের বিক্রেতারা বেশি বসেছে। সারাদিনই দোকানে ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকছে। পুরাতন ও নতুন সোয়েটার, জ্যাকেট, শার্ট ও ট্রাউজারসহ কাপড়ের দোকানে গরম কাপড়ের সরবরাহ বাড়ছে। ফুটপাতের দোকানগুলো এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকে। ফুটপাতের দোকানগুলোতে শীতের কাপড় কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

দোকানদার মো. রঞ্জু মিয়া জানান, প্রতি বছরই আমি এখানে শীতের মৌসুমে গরম কাপড়ের দোকান দিয়ে থাকি। গত বছরের চেয়ে এবার বিক্রি তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হচ্ছে। বর্তমানে ফুটপাতের কাপড়ে ক্রেতাতের চাহিদা বাড়ছে। কারণ অল্প টাকায় মানসম্মত গরম কাপড় পাওয়া যায়। মেলিম নাজির উচ্চবিদ্যালয়ের স্কুলছাত্র আজিজুর রহমান বলেন, কয়েক দিন ধরে পাবনা শহরজুড়ে শীত পড়ছে বেশি। সকাল থেকে গরম কাপড়, মাফলার পরে বিছানা থেকে উঠছি। বেশ ঠান্ডা, তবে প্রাইভেট পড়ার জন্য খুব ভোরে ঘর থেকে বের হতে হচ্ছে।

শীত ও কুয়াশার কারণে ভোগান্তি বেড়েছে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের। সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। নিম্নআয়ের মানুষের উপার্জনেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কৃষকরা সকালে উঠে জমিতে যেতে পারছে না। হঠাৎ করে আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। তীব্র শীতের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না।

ব্যবসা-বাণিজ্যসহ মানুষের দৈনন্দিন কাজে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। গরিব মানুষ কাজে যেতে পারছে না। দরিদ্র, অসহায়, প্রান্তিক ও নিম্নআয়ের মানুষের কষ্টের সীমা নেই। তীব্র শীত সত্ত্বেও পাবনায় সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণ লক্ষণীয় নয়। পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পরিসংখ্যান বিভাগ বলছে, শীতে শিশু-বৃদ্ধরা বেশি ভুগছে। তারা নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কাইটিস, জ্বর, সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্টসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ১০ দিনে ৮ শতাধিক ঠান্ডাজনিত রোগী শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দুই ওয়ার্ড মিলে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি আছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে অতিরিক্ত রোগীর চাপ লক্ষ করা গেছে।

এদিকে জেলা সদর ছাড়াও জেলার অন্য আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ঠান্ডাজনিত রোগে শিশু, বয়স্কসহ নানা বয়সী মানুষ ভর্তি হচ্ছেন। আটটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত এক সপ্তাহে অন্তত ৫ শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন।  ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক কে এম আবু জাফর বলেন, হাসপাতালে শয্যার তুলনায় শীতজনিত কারণে রোগীর সংখ্যা অত্যধিক। পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, শীতের তীব্রতার সাথে মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।  সরকারিভাবে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিম্নআয়ের মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news