শীঘ্রই বিএনপির স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত

বিএনপির নির্বাহী কমিটির এখন ৬১ পদ শূন্য

শীঘ্রই বিএনপির স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির স্থায়ী কমিটিসহ নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। কাউন্সিলের কিছুদিন পরে কয়েকটি পদ বাকী রেখে নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেছিল বিএনপি। বিভিন্ন কারণে মৃত্যু, পদত্যাগ, দলত্যাগ, অব্যাহতিসহ নানা কারণে শূন্য স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটির এখন ৬১ পদ শূন্য। 
এছাড়া বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে মৃত্যুজনিত কারণে চারটি শূন্য পদ পূরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া আগে থেকেই স্থায়ী কমিটিতে স্বেচ্ছায় দল ছাড়া ও অসুস্থজনিত কারণে আরও দুটি পদেও নতুন কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে একঝাঁক নেতা আলোচনায় আছেন। একইভাবে দুজন স্থায়ী কমিটিতে চলে যাওয়া, মৃত্যুসহ পদত্যাগের কারণে ভাইস চেয়ারম্যান পদেও ১১টি পদ শূন্য হয়েছে।
এদিকে দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিএনপিতে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপির নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন পদে আসার মতো যোগ্য নারীদের একটি তালিকা করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। 
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শূন্য পদ পূরণের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, দলের ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক, নির্বাহী কমিটির সদস্য, অঙ্গ- সহযোগি সংগঠনের সদস্য ও পেশাজীবি নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছেন। 
দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তার সমুদয় দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাইলে কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন বা নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ পূরণ করতে পারেন। 
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ধারাবাহিকভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি চাইলে নির্বাহী কমিটির শূন্য পদ পূরণ করতে পারেন। কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নিতে পারেন। 
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, করোনার আগে ও পরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির চারজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়াও পাঁচজন ভাইস চেয়ারম্যান ও ১৩ জন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মারা যান। সম্পাদক সহ-সম্পাদক পর্যায়ে মারা যান আটজন। নির্বাহী কমিটির সদস্য মারা যান ২০ জন। এ ছাড়া পদত্যাগ, বহিষ্কার, দল ত্যাগ ও অব্যাহতি দেওয়া নেতার সংখ্যা ১১ জন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার সময় ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ার মারা গেছেন। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কোনো বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এখনো চারটি পদ ফাঁকা রয়েছে। 
দলীয় সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির শূন্য পদের অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আলোচনায় রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। 
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের মধ্যে করোনাসহ নানা অসুস্থতায় মারা গেছেন ফজলুর রহমান পটল, বেগম সারোয়ারী রহমান, হারুন-অর রশীদ খান মুন্নু, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, ফজলুল হক আসফিয়া, জাফরুল হাসান, নূরুল হুদা, কবির মুরাদ, সঞ্জীব চৌধুরী, ওয়াহিদুল ইসলাম, এম এ হক, নূরুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান খান, অ্যাডভোকেট কামরুল মনিরসহ ১৩ জন। এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আবদুল মান্নান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ও ব্যারিস্টার আমিনুল হক মারা গেছেন।
দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আবু সাইদ খোকন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান খসরু, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, দিলদার হোসেন সেলিম, সহ-পল্লীবিষয়ক সম্পাদক মোজাহার আলী প্রধান ও সহ-গ্রামবিষয়ক সম্পাদক আমজাদ হোমেন বজে মারা গেছেন।
নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মারা গেছেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, আহসান উল্লাহ হাসান, খুররম খান চৌধুরী, আবুল কাশেম চৌধুরী, এ এফ এম ইকবাল, মোজাহার হোসেন, কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিশ, সরোয়ার আজম খান, কাজী আনোয়ার হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার শামসুদ্দিন আহমেদ, শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, চমন আরা, এম এ মতিন, এম এ মজিদ, মিয়া মোহাম্মদ সেলিম, কাজী সেকান্দার আলী ডালিম, ড. মামুন রহমান, এ এফ এম ইকবাল, আলী আশরাফ, ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল প্রমুখ। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পরপরই পদত্যাগ করেন ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু। আরও দুই ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ও ইনাম আহমেদ চৌধুরী দল ত্যাগ করেন। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম এফসিএও ছাড়াও কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনির খান, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আসগর লবী, মেজর (অব.) হানিফ পদত্যাগ করেন। নির্বাহী কমিটির এসব পদও ফাঁকা রয়েছে। এ ছাড়াও দল ত্যাগ করেন নির্বাহী কমিটির সদস্য রবিন্দ্র লাল চাকমা ও নূর মোহাম্মদ মন্ডল। বহিষ্কার করা হয় শফি আহমেদ চৌধুরীকে এবং অব্যাহতি দেওয়া হয় ফাহিম চৌধুরীকে। নির্বাহী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকা শহিদুল ইসলাম বাবুলকে সম্প্রতি কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ জন্য সহ-সাংগঠনিক পদে একজন নারী নেত্রীকে নেওয়ার চিন্তা করছে হাইকমান্ড। এ পদে নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছে।

এদিকে ছাত্র ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ দুটি কমিটি ঘোষণার পরই ফাঁকা। নির্বাহী কমিটির সাতটি আন্তর্জাতিক সম্পাদকের মধ্যে দুটি ফাঁকা। সহ-যুববিষয়ক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও যুববিষয়ক সম্পাদকের পদটি এখনো ফাঁকা। বিএনপি স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই বিএনপি দল গোছানোর কার্যক্রম শেষ করবে। দলের নির্বাহী কমিটিতেও আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। শূন্য পদ পূরণ করার পাশাপাশি সাংগঠনিক ৮১টি জেলায়ও নতুন নেতৃত্ব গঠন করা হবে। অঙ্গ সংগঠনগুলোও ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরপর নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবিতে রাজপথের আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।