রাস্তা মেরামত সরঞ্জাম দেখতে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সফরে যাবেন এমপি ও তার পিএস

সংরক্ষিত নারী আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হলেও এসব সরঞ্জামের বিষয়ে তারা প্রযুক্তিগত জ্ঞান নেই।

রাস্তা মেরামত সরঞ্জাম দেখতে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা সফরে যাবেন এমপি ও তার পিএস
প্রতীকি ছবি

প্রথম নিউজ, ঢাকা: রাস্তা মেরামতের সরঞ্জাম পরিদর্শন করতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফরে যাচ্ছেন একজন সংসদ সদস্য, তার ব্যক্তিগত সহকারী এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী। এসব সরঞ্জাম বাংলাদেশে পাঠানোর আগে তারা সেগুলো ওই দেশগুলোতে গিয়ে দেখে আসবেন।

সংরক্ষিত নারী আসনের জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হলেও এসব সরঞ্জামের বিষয়ে তারা প্রযুক্তিগত জ্ঞান নেই। সংসদের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, তিনি আর্টস থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। তার সঙ্গে এ সফরে থাকবেন তার ব্যক্তিগত সচিব ইকবাল বিন মতিন।

এ ছাড়া সফরে যাবেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক শাখা) রফিকুল ইসলাম। গত ১৫ সেপ্টেম্বর অধিদপ্তরের এক আদেশে এ তথ্য জানা গেছে।

এ সফরের বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'বাংলাদেশে প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন চর্চার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের একটি স্পষ্ট উদাহরণ এটি। এখানে বিদেশ সফরকে ব্যক্তিগত সুবিধা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি বলেন, 'একজন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যের এ ধরনের সরঞ্জাম ক্রয়ের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তার মূল কাজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরকে জবাবদিহি করা। প্রকৃতপক্ষে সংসদীয় কমিটির সভাপতির এ সফরে থাকা তার মূল দায়িত্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার ব্যক্তিগত সহকারীরও এ সফরে কিছু করার নেই,' যোগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, 'এ ছাড়া, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও প্রধান প্রকৌশলী পরিচালনা ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে খুব কমই জড়িত থাকেন। এ অবস্থায় এ সফরে তারা কতটা প্রাসঙ্গিক, সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ।'

'যদি এই সফরের মূল উদ্দেশ্য অর্জিত জ্ঞান কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়, তবে এটি ঠিক ন্যায়সঙ্গত হচ্ছে না,' যোগ করেন তিনি। সমালোচনার মধ্যে এবং কঠোর ব্যবস্থা হিসেবে সরকার গত বছরের জুলাইয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। তখন বলা হয়েছিল, শুধু জরুরি ও অনিবার্য পরিস্থিতিতে সফরের জন্য অর্থ ব্যয় করা যেতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয় গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত কিছু বিধান শিথিল করেছে। তবে স্পষ্টভাবে বলা হয় যে পণ্য বা সেবা পরিদর্শনের জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হলে 'কারিগরি জ্ঞানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের' খরচ সরবরাহকারী বা ঠিকাদার বা পরামর্শদাতারা বহন করলেই যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এবারের সফরের চূড়ান্ত তারিখ এখনো ঠিক করা হয়নি। তবে সরবরাহকারী ভ্রমণের খরচ দিয়েছে।

বিদেশি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা ৫৮৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকার 'সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রপাতি সংগ্রহ' শীর্ষক প্রকল্পে মন্ত্রণালয় এই ৪ জনকে সফরের জন্য মনোনীত করেছে। অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, 'দেশে আনার আগে এ ধরনের যন্ত্রগুলো পরিদর্শন পুরোপুরি প্রযুক্তিগত বিষয় এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানসম্পন্নদের তা করা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই কর্মকর্তা বলেন, 'একজন সংসদ সদস্য, বিশেষ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির এমন সফর অপ্রত্যাশিত ও দুর্ভাগ্যজনক। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, 'জাতীয় সংসদের স্পিকার এই সংসদ সদস্যকে সফরের অনুমোদন দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনি (মন্ত্রণালয়ের) কাজ পর্যবেক্ষণ করতেন এবং এবার তিনি তদারকি করতে এই সফর করবেন।

ব্যক্তিগত সহকারীর সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'একজন সিনিয়র ব্যক্তি হিসেবে তার ব্যক্তিগত সহকারী তার সঙ্গে থাকবেন। ঠিকাদারদের টাকা খরচ করে এ ধরনের সফর করার বিষয়ে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কাজ স্থায়ী কমিটি। কমিটির সভাপতির এ সফর তার দায়িত্বের পরিপন্থী কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কাজটি সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা তিনিই (সংসদ সদস্য) যাচাই করবেন। এ ছাড়া, একজন আইনপ্রণেতা চাইলে তো আমরা বাধা দিতে পারি না। যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য রওশন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই সফর আমাদের দায়িত্বের বাইরে নয় এবং এটি স্বার্থের দ্বন্দ্বও নয়। স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি সেখানে প্রি-শিপমেন্ট প্রশিক্ষণে অংশ নেবো।'

ব্যক্তিগত সহকারী যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বয়স ৬০ এর বেশি। তিনি আমার বক্তব্য লিখে দেওয়াসহ আমাকে সাহায্য করতে আমার সঙ্গে থাকবেন। যেখানে আমরা পরিদর্শন করব সেসব দেশ ও যে খরচ বহন করবে সেই ঠিকাদার যদি আমাদের অনুমতি দেয়, আমি এখানে কোনো সমস্যা দেখছি না,' যোগ করেন তিনি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে থাকায় এই সফরের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom