রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে আবদুল হামিদ যেসব সরকারি সুবিধা পাবেন
রোববার নতুন রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আইনানুযায়ী, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে অন্য কোনো চাকরি বা পদ হতে অবসরে গিয়ে অবসরভাতা গ্রহণ করলে তিনি ওই অবসরভাতা এবং রাষ্ট্রপতির অবসরভাতার মধ্যে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো একটি পাওয়ার যোগ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি অবসরভাতা গ্রহণ করে মারা গেলে তাঁর বিধবা স্ত্রী অথবা ক্ষেত্রমতে বিপত্নীক স্বামী তাঁর প্রাপ্য অবসরভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন।
অবসরভাতা গ্রহণের প্রাধিকার অর্জন করা সাবেক কোনো রাষ্ট্রপতি অবসরভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) গ্রহণ করতে পারবেন। এ জন্য তাঁকে প্রাধিকার অর্জনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে অবসরভাতার পরিবর্তে আনুতোষিক গ্রহণের ইচ্ছার কথা জানাতে হবে। আনুতোষিকের পরিমাণ এক বছরের জন্য প্রদেয় অবসরভাতার তত গুণ হবে, যত বছর কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকার সময়সীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে আংশিক বছরকে পুরো বছর হিসেবে গণনা করা হবে।
কোনো ব্যক্তি ছয় মাসের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় আনুতোষিক পাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত না করে অথবা অবসরভাতা গ্রহণ না করে মারা গেলে তিনি আনুতোষিক পাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বলে গণ্য হবে। তখন আনুতোষিকের টাকা মনোনীত ব্যক্তি অথবা উত্তরাধিকারীরা পাবেন।
অন্যান্য যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ
অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে অন্যান্য কিছু সুবিধাও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। আইনানুযায়ী তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন, যার মোট বাৎসরিক পরিমাণ সময়ে সময়ে সরকার নির্ধারণ করবে। একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসাসুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধাদি পাবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি। সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনা মূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন ও সরকার সময়ে সময়ে নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত এর বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তখন তিনি দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা পাবেন।
আইনানুযায়ী, চিকিৎসাসুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীও পাবেন।
কী কী কারণে একজন সাবেক রাষ্ট্রপতি অবসরভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন না, তা–ও উল্লেখ আছে আইনে। এগুলো হলো রাষ্ট্রপতি পদে দায়িত্ব শেষে এমন কোনো দপ্তরে, আসনে, পদে বা মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করে নির্ধারিত তহবিল (সংযুক্ত তহবিল) থেকে বেতন বা অন্য কোনো সুবিধা পেলে রাষ্ট্রপতির অবসরভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে না। অবসরভাতার প্রাধিকার পাওয়ার পর আদালতের মাধ্যমে নৈতিক স্খলনজনিত কোনো অপরাধের দায়ে দণ্ডিত হলেও ওই সব সুবিধা পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া অসাংবিধানিক পন্থায় বা অবৈধ উপায়ে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন বলে উচ্চ আদালত ঘোষণা করলেও সাবেক কোনো রাষ্ট্রপতি ওই সুবিধা পাবেন না।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে আসা মো. আবদুল হামিদ প্রথম দফায় ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। আগামী ২৩ এপ্রিল তাঁর রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগে তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত মো. জিল্লুর রহমান বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকার সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে কিছুদিন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বেশ কিছুদিন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে তিনি রাজধানীর কোথায় থাকবেন, তা নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে।