রমজানে টঙ্গীর মুড়ির বাজার জমজমাট

রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের শিল্পনগরী টঙ্গীতে মুড়ির চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ইফতারের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হওয়ায় মুড়ির দোকানগুলোতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়।

রমজানে টঙ্গীর মুড়ির বাজার জমজমাট
রমজানে টঙ্গীর মুড়ির বাজার জমজমাট

প্রথম নিউজ, গাজীপুর: রমজান মাসকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের শিল্পনগরী টঙ্গীতে মুড়ির চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। ইফতারের একটি প্রধান অনুষঙ্গ হওয়ায় মুড়ির দোকানগুলোতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ক্রেতাদের ভিড়। টঙ্গীবাজারের মদিনা মার্কেটের সুলতান ট্রেডার্স, চাচা-ভাতিজা চিড়ামুড়ি স্টোর, রাশেদ চিড়ামুড়ি অ্যান্ড গুড় ট্রেডার্স, বরিশাল মুড়ি স্টোর, কুমিল্লা মুড়ি ট্রেডার্স, ফারুক মুড়ি স্টোর, বিল্লাল মুড়ি স্টোরসহ প্রায় ১৫টি মুড়ির আড়ত ও মিলগেট মিতালী চিড়া কল থেকে ঢাকা, আশুলিয়া, সাভার, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ৩৫-৪০ টন মুড়ি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। তবে চাহিদা এবং দাম বাড়লেও ক্রেতা সাধারণের স্বস্তি নেই মুড়িতে। দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা। রোজায় মানহীন ও নিম্নমানের ভেজালযুক্ত মুড়িতে বাজারের অলিগলি সয়লাব। দানা বড়, সাদা ও চকচকে করতে মুড়িতে হাইড্রোজ ও ইউরিয়া মেশানোর অভিযোগ রয়েছে। এই হাইড্রোজ ও ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ি দিয়ে ইফতার সারতে হচ্ছে রোজাদারদের। আর এতে করে তাদের দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

টঙ্গীবাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সারা বছর মুড়ির যে পরিমাণ চাহিদা থাকে তার ৭০ শতাংশ প্রয়োজন হয় শুধু রমজানে। কারণ ইফতার সামগ্রীর প্রধান উপাদানের একটি হচ্ছে মুড়ি। টঙ্গী বাজারে গত বছরের তুলনায় মুড়ি প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০-২৫ টাকা পর্যন্ত। মানভেদে প্রতিকেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৭৫-১৪০ টাকায়। বরিশালের হাতে ভাজা ‘মুথামুড়ি’ বা ‘ঘিকজ’ মুড়ি পাইকারি দরে প্রতিকেজি ১৩০-১৪০ টাকা, গাজীপুরের ফুলবাড়িয়া এলাকায় তৈরি ‘১৬ মুড়ি’ প্রতিকেজি ৭২-৭৫ টাকা এবং মেশিনে তৈরি ‘হাইসুপার’ প্রতিকেজি ৭৮ টাকা ও ‘সুপার’ মুড়ি প্রতিকেজি ৭২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মূলত রমজানকে কেন্দ্র করে দেশের প্রতিটি জেলায় স্থানীয়ভাবে মুড়ি তৈরি করে তা বাজারজাত করে থাকেন ব্যবসায়ীরা। টঙ্গীর আড়তদাররা মেশিনে ভাজা মুড়ি বেশি বিক্রি করলেও হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা আগের চেয়ে বেশি। সচেতন নাগরিকরা মেশিনে তৈরি হাইড্রোজ ও ইউরিয়া মিশ্রিত মুড়ির চেয়ে হাতে তৈরি মুড়ি খেতে স্বস্তি বোধ করেন। তবে দেশের বিশাল একটি শ্রেণি মেশিনে ভাজা কমদামি মুড়ির ওপর নির্ভর করে থাকেন। এতে হাতে ভাজা মুড়ির চেয়ে মেশিনে ভাজা কম দামি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে বেশি।

টঙ্গী বাজারে মুড়ি কিনতে আসা রহিম মিয়া বলেন, ‘আমি বা পরিবারের কেউ কখনোই মেশিনে ভাজা মুড়ি খেতাম না। শহরের ভাড়া বাড়িতে মুড়ি তৈরি সম্ভব না হওয়ায় বাধ্য হয়ে বাজার থেকে মুড়ি কিনতে হচ্ছে।’  এদিকে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে টঙ্গীবাজারের শহীদুল ইসলাম জানান, বিআর-২৮ চালের মুড়ি ৭৫-৭৮, বিআর-২৯ চালের মুড়ি ৭২-৭৫, গুটি স্বর্ণা চালের মুড়ি ৮০-৮৫ টাকা ও বরিশালের মোটা চালের মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১২৫-১৩০ টাকা কেজি দরে।

সুলতান ট্রেডার্সের মালিক সুলতান মুন্সী বলেন, ‘রমজানে মুড়ির চাহিদা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যায়। তবে সচেতন মহলে হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি।’ চাচা-ভাতিজা চিড়ামুড়ি স্টোরের সাহেব আলী বলেন, ‘বতমানে মুড়ির চাহিদা বেশি। বিভিন্ন কারখানায় মুড়ির জন্য অগ্রিম টাকা দিয়েও সময় মতো পাচ্ছি না। এজন্য চাহিদা থাকা সত্ত্বেও অনেক কাস্টমারকে মুড়ি দিতে পারছি না।’

মিলগেট মিতালী চিড়াকলের মালিক নুরুল আমিন পারভেজ বলেন, খরচ বেশি হওয়ায় মুড়ি উৎপাদনে আগের মতো আগ্রহ নেই। আমার কারখানা থেকে মৌসুমে প্রতিদিন যেখানে দুই হাজার কেজি মুড়ি বিক্রি হতো সেখানে বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫-৬ হাজার কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে।’ 

মুড়িতে কেন কেমিক্যাল মেশানো হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘মুড়ি চকচকে ও সাদা করতেই মূলত মুড়িতে সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড, ইউরিয়া ও কাস্টার্ড পাউডার মেশানো হয়। আমরা চেষ্টা করি কেমিক্যাল ছাড়া মুড়ি বিক্রি করতে। তবে ক্রেতারা সুন্দর ও চকচকে ছাড়া মুড়ি কিনতে চান না।’

এ ব্যাপারে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ইউরিয়া সার ও হাইড্রোজের মতো ক্ষতিকারক উপাদান মিশ্রিত মুড়ি খেলে লিভার ক্যানসার, হেপাটাইটিস, খাদ্যনালীর ক্যানসার, অম্লসার ব্যথা ও আলসারের মত মারাত্মক ক্ষতসহ মানব দেহে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: