‘রাতের আঁধারে’ বাল্যবিয়ে পড়ান কাজী বাবুল ফকির

‘রাতের আঁধারে’ বাল্যবিয়ে পড়ান কাজী বাবুল ফকির

প্রথম নিউজ, মাদারীপুর: প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে নাবালিকা কিশোরীদের বিয়ে পড়ান মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের কাজী ও চেয়ারম্যান ফাইকুজ্জামন বাবুল ফকির। বাড়তি টাকা নিয়ে সাদা কাগজে সই নিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য স্থানীয়দের মাঝে তিনি বেশ সমালোচিত।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, ২ মার্চ কালিকাপুর ইউনিয়নের ছোটদুধখালী গ্রামের আবু বকর ফকিরের ছেলে কামরুলের সঙ্গে বাহাদুরপুর ইউনিয়নের নতুন রাজারহাট গ্রামের আফাজদ্দিন খানের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে বৃষ্টিকে গ্রামের আয়নাল হক হাওলাদারের বাড়িতে বসে সাদা কাগজে সই নিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করান কাজী ফাইকুজ্জামান বাবুল ফকির। বাল্যবিয়ে সম্পন্ন করার জন্য এই কাজী আদায় করে থাকেন অতিরিক্ত টাকা। মেয়ে-ছেলে ও স্বাক্ষীদের নাম লিখে রাখেন সাদা কাগজে। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়। কিন্তু এদিকে কাজী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় তার ভয়ে এলাকার কেউ সরাসরি প্রতিবাদ করতে সাহস পান না। এ নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তার ভাগিনা রুবেল সাংবাদিকদের মারধর করার হুমকি দেয়।

এদিকে এলাকাবাসী বাল্যবিবাহের প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখত অভিযোগ দিয়েছেন। নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেওয়া অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, কাজী বাবুল ফকির ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও নিকাহ রেজিস্ট্রার হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া জন্ম সনদ বানিয়েও বাল্যবিয়ে পড়িয়েছেন। এমনকি বাল্যবিয়ের তথ্যাদি রেজিস্ট্রার বইতে লিপিবদ্ধ না করে সাদা কাগজে লিখে কালেমা পড়িয়ে বিয়ে দেন তিনি। স্হানীয় বাসিন্দা জলিল ফকির, রুনা বেগম, মোয়াজ্জেম ও আয়নার হক হাওলাদার বলেন, কাজী অল্প বয়সী মেয়েদেরকে রাতে বিয়ে দেন। মেয়েদের বয়স অল্প হলেই সে রাতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মেয়ের বয়স হোক বা না হোক এটা কোনো বিষয় না কাজীর কাছে। আসলে এই কাজী রাতেই বিয়ে পড়ায় বেশি। দিনে এভাবে বিয়ে পড়ায় না। দিনে যাদের বয়স হয় তাদের বিয়ের কাজ করেন। আর যাদের বয়স না হয় তাদেরকে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে রাতে বিয়ে পড়ান, সকলে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে। তবে মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধীকরণ) আইনানুযায়ী রেজিস্ট্রার খাতায় তাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয় না। সাদা কাগজে লিখেই বিয়ে কার্য সম্পন্ন করেন কাজী। 

উপজেলার কয়েকজন কাজী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বয়স সংক্রান্ত ঝামেলা থাকলে আমরা বিয়ে পড়াই না। কিন্তু কাজী ফাইকুজ্জামান বাবুল ফকির মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাল্যবিয়ে পড়ান। কারণ তিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তবে বিয়ে পড়ানোর কথা অস্বীকার করে ফাইকুজ্জামান বাবুল ফকির বলেন, প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে-মেয়েদেরকেই বিয়ে দেওয়ার কাজ করি। ছেলেমেয়ের নাম-ঠিকানা খাতায় লিখে রাখি। খামাখা এ সকল বিষয় নিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না। বিষয়ে মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাইনউদ্দীন বলেন, যদি কোনো কাজী এভাবে বাল্যবিয়ে করিয়ে থাকে আর তা যদি প্রমাণিত হয়। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।