রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতায় অসন্তুষ্ট আইএমএফ
তবু শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা, অটোমেশনে ধীরগতি ও গতানুগতিক রাজস্ব আদায়ের রূপরেখায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবু শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে সংস্থাটি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আইএমএফকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে- সব শর্ত পূরণ করতে পারবে। সে কারণে সংস্থাটি শেষ পর্যন্ত এনবিআরকে ইতিবাচক আশ্বাস দিয়েছে। এনবিআর’র সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠিত বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরের ভ্যাট, কাস্টমস ও ট্যাক্স বিভাগের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে আইএমএফের প্রতিনিধিদল। আইএমএফের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দ ছাড়াও সংস্থাটির একাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন। আগামী নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত বুধবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) স্টাফ মিশন বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে করে। বৈঠকে তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মূল্যস্ফীতি, ব্যাংকিং খাত ও রাজস্ব আয় এই চারটি বিষয় উত্থাপন করেছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে কর অব্যাহতি কমানো, আমদানি পর্যায়ের শুল্কহার ধীরে ধীরে কমানো ও করের আওতা বৃদ্ধির পরামর্শ ছিল আইএমএফের। সংস্থাটি আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমসের অটোমেশনে ধীরগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আগামী ৯ই অক্টোবর এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে বৈঠকের পর তিন বিভাগের প্রশাসনের সঙ্গে বসতে চায় সংস্থাটি। সূত্র জানায়, আইএমএফ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ০.৫ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলেছে। পরের দুই বছরে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরে যথাক্রমে ০.৫ শতাংশ ও ০.৭ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলেছে। এই তিন অর্থবছরে কর-জিডিপি অনুপাত ১.৭ শতাংশ বাড়াতে হলে এনবিআরকে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে হবে, যা এনবিআরের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।
বৈঠকে এনবিআরের আয়কর বিভাগ জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪.১১ শতাংশ। এই হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন, ভ্রমণ কর, টোব্যাকো কর, পরিবেশ সারচার্জ ও করের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ার মাধ্যমে বাকি ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। তবে ভূমি রেজিস্ট্রেশন ফি ও কার্বোনেটেড বেভারেজের করহার কমানোর পরও এ খাতে কীভাবে একই পরিমাণ আদায় হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। যদিও এনবিআর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে তাদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
অন্যদিকে ভ্যাট বিভাগ জানিয়েছে, চারটি উপায়ে অতিরিক্ত ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে। বাজেট ও নিয়মিত ব্যবস্থার মাধ্যমে ১২ হাজার ৪০০ কোটি থেকে ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সিগারেট খাত থেকে ৫ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা, অব্যাহতি তুলে দিয়ে ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ও ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইসের (ইএফডি) মাধ্যমে ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকা আদায় করা হবে।
আর শুল্ক বিভাগ আইএমএফকে তাদের পরিকল্পনায় জানিয়েছে, গত পাঁচ অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধি ১৪.১০ শতাংশ। এই হার বজায় থাকলে স্বাভাবিকভাবে আদায় হবে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার পরিবর্তনের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০ কোটি ও পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বকেয়ার ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায়ের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে তারা।
এদিকে বিদেশি সংবাদ মাধ্যম এএফপি জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়া স্থগিত করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা সংস্থা আইএমএফ। গত মাসে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি প্রদানের কথা থাকলেও এখনো তা পায়নি কলম্বো। দীর্ঘ কয়েক মাস তদবিরের পর ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি ডলার জরুরি ঋণ দিতে রাজি হয় আইএমএফ। ঋণের প্রথম কিস্তির ৩৩ কোটি ডলার গত মার্চে দেয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে।