আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ বাজেট সহায়তা

প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে উন্নয়ন সহযোগীদের বড় অঙ্কের বাজেট সহায়তা

আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ বাজেট সহায়তা

প্রথম  নিউজ, ঢাকা : প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে উন্নয়ন সহযোগীদের বড় অঙ্কের বাজেট সহায়তা। চলমান সংকট মোকাবিলায় ২০২২ সালে চাওয়া হয়েছে ৭৫০ কোটি ডলার বা প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত শুধু এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) ২৫ কোটি ডলার ছাড় করেছে। বাকি ৭২৫ কোটি ডলারের মধ্যে ২০২৩ সালের শুরুতেই ছাড় হতে পারে ১২০ কোটি ডলার। এছাড়া বড় একটি অংশ প্রাপ্তির বিষয়টি এখনো অনিশ্চিত।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালের অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া। এই অবস্থা দ্রুত সামাল দিতে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারস্থ হয় সরকার। তাদের কাছে চাওয়া হয় বাজেট সহায়তা (এমন ঋণ যা সরকার ইচ্ছেমতো যে কোনো খাতে ব্যয় করতে পারে)। শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। বছরজুড়েই অব্যাহত ছিল সহায়তা সংগ্রহের প্রচেষ্টা। এর ফসল হিসাবে নতুন বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কিছু অর্থ ছাড় হতে পারে। তবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করে বলতে পারছে না অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) দায়িত্বশীলরা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা সম্মেলনের শেষদিন এ প্রসঙ্গে কথা বলেন ইআরডির সচিব শরিফা খান। এ সময় তিনি বলেন, ‘ডলার সংকট মেটাতে ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিভিন্ন দেশের কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে। প্রথম এআইআইবির কাছ থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া আগামী মার্চের মধ্যে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকেও সহায়তার অর্থ ছাড় শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ডলার সংকট মোকাবিলয়ায় উন্নয়ন সহযোগীদের বাজেট সহায়তা কিছুটা ভূমিকা রাখবে। জুনের মধ্যে চলতি খাতের ঘাটতি হতে পারে ১২ থেকে ১৪শ কোটি ডলার। সেখানে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করা যাচ্ছে সেটি খুব বেশি নয়। যদি সময়মতো না আসে তাহলে তো সমস্যা। তাই দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। তিনি আরও বলেন, ডলার সংকট মেটানোর আর একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হচ্ছে রেমিট্যান্স। সেখানে যে বাধা আছে অর্থাৎ মাল্টিপুল ডলার রেট ও ক্যাপ। সেটি যদি তুলে দিয়ে বাজারের ওপর ডলারের দাম ছেড়ে দেওয়া যায় এখান থেকে প্রায় প্রতি মাসে ৫০ কোটি ডলার ও বছরে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার আয় আসার সম্ভাবনা আছে। সেদিকেও সরকারকে নজর দিতে হবে। কেননা এটি একটি বড় সুযোগ।

ইআরডি সূত্র জানায়, সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছে এআইআইবি। স্থানীয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০০ টাকা ধরে) যা দাঁড়ায় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। ৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরপরই সেই অর্থ ছাড়ও হয়েছে বলে ইআরডির এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু বাজেট সহায়তা সেহেতু চুক্তির পরপরই পুরোটা ছাড় হয়ে গেছে। সংস্থাটির এ ঋণ ৩ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ (রেয়াত কাল) সাড়ে ২৬ বছরে পরিশোধ করতে হবে। ‘স্ট্রেংদেনিং সোশ্যাল রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রামের (সাব প্রোগ্রাম-২)’ আওতায় বাজেট সহায়তার এ অর্থ ব্যয় করা হবে। কর্মসূচিটির উদ্দেশ্য হলো-বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নকে অধিক সংবেদনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার কাভারেজ এবং দক্ষতার উন্নয়ন এবং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি উন্নয়ন ও অধিক সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। পাশাপাশি জীবনচক্রের সামাজিক ও স্বাস্থ্য চাহিদার প্রতি রেসপন্স সিস্টেম শক্তিশালী করা হবে। এআইআইবির থেকে প্রথমবারের মতো ‘সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং’ রেটে (এসওএফআর) এই বাজেট সহায়তা মিলেছে। লন্ডন ইন্টার ব্যাংক অফারর্ড রেট (লাইবর) মেয়াদ শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে। এর বিকল্প সুদের হার এসওএফআর প্রযোজ্য হবে এআইআইবির ঋণে। বর্তমানে এসওএফআর ৩ শতাংশের বেশি।

সূত্র জানায়, সবার আগে বাজেট সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয় সরকার। চাওয়া হয় ৪৫০ কোটি ডলার সহায়তা। এরপর বাংলাদেশ সফর করে সংস্থাটির একটি মিশন। এ নিয়ে ব্যাপক হইচই পড়ে যায়। প্রাথমিকভাবে অর্থ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। তবে আর্থিক ও রাজস্ব খাতে কিছু সংস্কারসহ নানা বিষয়ে শর্ত দিয়েছে। সংস্থাটির বোর্ড সভায় ঋণটি অনুমোদন পেলে ফেব্রুয়ারির দিকে প্রথম কিস্তির ৩৫ কোটি ডলার দেশে আসতে পারে। আইএমএফ’র শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো- খেলাপি ঋণ কমানোর ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটানো, ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, রাজস্ব আয় বাড়ানো, বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানো এবং বৈদেশিক মুদ্রার পাইপলাইনের খরচ বাড়ানো ইত্যাদি।

এছাড়া বিশ্বব্যাংকের কাছে চাওয়া হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা। এ নিয়ে কয়েকবার নেগোশিয়েশন (আলোচনা) করেছে ইআরডি। এমনকি সম্প্রতি ঢাকা সফররত সংস্থাটির দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছেও এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়। তবুও তেমন কোনো সাড়া আসেনি। তবে পুরোনো বাজেট সহায়তার দ্বিতীয় কিস্তির ২৫ কোটি ডলার মার্চে অনুমোদন করতে পারে বিশ্বব্যাংক। এরপরই চুক্তি ও অর্থছাড়ের বিষয়টি আসবে। এছাড়া নতুন ‘গ্রিন’ নামের একটি তহবিল থেকে আরও ২৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সেটি কবে নাগাদ পাওয়া যাবে সে বিষয়ে এখন নিশ্চিত নয় ইআরডি। তবে বিশ্বব্যাংকের বাজেট সহায়তার অন্যতম শর্ত হচ্ছে আর্থিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে সংস্কার করা। সেই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া। তবে ইআরডির দায়িত্বশীল একটি সূত্র যুগান্তরকে জানান, সরকারের পক্ষ থেকে যে ১ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে সে বিষয়ে এখনো কোনো সাড়া দেয়নি সংস্থাটি। তবে বিশ্বব্যাংকের আগের দেওয়া বাজেট সহায়তার শর্তই এখনো পুরোপুরি পূরণ হয়নি। ফলে সংস্থাটি কিছুটা অসন্তুষ্ট রয়েছে। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছে চাওয়া হয়েছে ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা। সেখান থেকে মার্চে ২৫ কোটি ডলার অনুমোদন দিতে পারে সংস্থাটি। এরপর সেটি আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। ইআরডির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায় এডিবির ঋণে সুদের হার চড়া। ফলে তারা শর্ত শিথিল করে হলেও ঋণ দিতে আগ্রহী। এই অর্থ ছাড় করার পর এআইআইবিসহ আরও কিছু সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে বাজেট সহায়তা আসতে পারে। জুনের মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দিতে পারে ৩৫ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom