রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড়

সমাবেশের প্রবেশ পথে তল্লাশি, হয়রানি। বুধবারের বিএনপি’র নয়াপল্টন সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি।

রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড়

প্রথম নিউজ, অনলাইন: রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবারের বিএনপি’র নয়াপল্টন সমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করছে বিএনপি। সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের পুরাতন ও নতুন করে মামলায় হয়রানি করার জন্য গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হচ্ছে বিএনপি এমনটি দাবি করলেও পুলিশ বলছে, যাদের নামে মামলা ও গ্রেপ্তারি ওয়ারেন্ট আছে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। 

বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আটক নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে সমাবেশে এসেছিলেন। এসব নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলের পার্শ্ববর্তী কাকরাইল, ফকিরাপুল, মালিবাগ এলাকার বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকেই ডিবি ও পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়াও ঢাকার প্রবেশ পথে চেকপোস্ট বসিয়ে আরও বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন নেতাকর্মীর নামে পুরাতন মামলা থাকলেও তারা জামিনে মুক্ত ছিলেন। 

পুলিশ ও ডিবির হাতে আটক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নাজমুল আলম নাজু, গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নেওয়াজ চৌধুরী শাওন, কালীগঞ্জ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা তোফাজ্জল হোসেন মফা, কালিয়াকৈর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সরকার তুহীন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা সেলিম, রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আল আমিন, পাবনা উপজেলা কৃষক দলের নেতা মো. রবিউল ইসলাম, দিনাজপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রেজা, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সহ-সভাপতি গোলাম রাব্বানী সোহেল ও ফরিদপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পলাশ। টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হাদিরা ইউনিয়ন থেকে ৫১ নেতাকর্মী সমাবেশে যোগ দিতে এলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনসহ আট জনকে পল্টন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।  

বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে আটক করা হয়। অসুস্থ অবস্থায় তাকে টেনেহিঁচড়ে বাসা থেকে নামানো হয়। দুলুর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। সব মামলায় তিনি জামিনে আছেন। তিনি বলেন, দুলু শারীরিকভাবে অসুস্থ। কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরেছেন। প্রতি সপ্তাহে তাকে কেমোথেরাপি দিতে হয়। এ ছাড়া নিয়মিত অন্যান্য ওষুধও খেতে হয়। তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদকে তার শেওড়াপাড়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে আটক করেছে কাফরুল থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। রাজশাহী জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আল আমিনকে পল্টন থানা পুলিশ আটক করেছে। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রাজিব আল মাসুদ মানবজমিনকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল বিএনপি’র নেতাকর্মীরা একটি হোটেলে বসে নাশকতার পরিকল্পনা করছে। সেখানে অভিযান চালালে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর ককটেল ছুড়ে মারে। পরে সেখান থেকে ও আরও কিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে ৫১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছে অস্ত্রও পেয়েছি। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার মানবজমিনকে বলেন, যাদের বিরুদ্ধে নতুন বা পুরাতন মামলা ও ওয়ারেন্ট আছে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো আমাদের নিয়মিত কাজ। আমরা কোনো সমাবেশকে ঘিরে কাউকে গ্রেপ্তার করছি না। 

এদিকে, বিএনপি’র সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার প্রবেশদ্বারগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে হয়রানি, আটক ও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিএনপি’র নেতাকর্মী সন্দেহ করে অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। আমিন বাজারে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করে বিএনপি নেতাসহ অন্তত ১০ জনকে আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

গতকাল সকাল থেকে আমিন বাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের সামনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে চেকপোস্ট বসিয়ে এই তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করে পুলিশ। চেকপোস্ট থেকে আটক মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে ৩ জন আত্মীয়কে সঙ্গে নিয়ে এয়ারপোর্টের দিকে যাচ্ছিলাম। সেখান থেকে আমার সমাবেশে যাওয়ার কথা, বাকিরা একজন আত্মীয়কে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে বাড়ি ফিরে যাবেন। কিন্তু চেকপোস্টে গাড়িসহ আমাদের ৪ জনকেই আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমার নামে যে মামলাগুলো রয়েছে, তার সবগুলোতেই আমি জামিনে আছি। কেন আটকানো হয়েছে পুলিশ তাও বলছে না। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক পয়েন্টে ২৫ জন, সাইনবোর্ড পয়েন্টে ৬০ জন, সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর পয়েন্টে ৬০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেছেন। সকাল থেকেই চেকপোস্টগুলোতে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা যাত্রী ও চালকরা কে, কোথায় যাচ্ছেন তা জানতে চান। বাসে যাত্রীদের ব্যাগ, ব্যক্তিগত গাড়ির ভেতরে ও পেছনে ব্যাকডালা তল্লাশি করা হচ্ছে। একইভাবে টঙ্গি, আব্দুল্লাহপুর এলাকায় ঢাকার বাহিরে থেকে আসা যানবাহনের যাত্রীদের তল্লাশি করা হয়।