ময়মনসিংহে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ করে সফল সুমন

প্রথম নিউজ, অনলাইন: অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করার পাশাপাশি ময়মনসিংহের ভালুকায় বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ করে তাক লাগিয়েছেন সুমন আহাম্মেদ। তার বাগানের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে টসটসে রসে ভরা ইউক্রেন, রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের তেরো জাতের সুস্বাদু আঙ্গুর। বাগানের দৃষ্টিনন্দন আঙ্গুরগুলো ইতিমধ্যে বিক্রয় উপযোগী হয়ে উঠেছে।
উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের কৈয়াদী গ্রামের কৃষক ও ব্যবসায়ী মো. আবদুস ছাত্তারের ছেলে সুমন আহাম্মেদ।
তিনি সরকারি মুজিব কলেজ, সখিপুর-এ সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত। ছোটবেলা থেকেই নতুন কিছু করার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। তাদের এলাকায় অনেকেই বিদেশি নানান ফলের চাষ করেন। এসব দেখে এলাকায় চাষ হয়নি এমন ফলের চাষ করার চিন্তা করেন সুমন এবং ফেসবুক, ইউটিউবে ভিডিও দেখে বিদেশি আঙ্গুর চাষে তার আগ্রহ জন্মে।
পরবর্তীতে ২০২২ সালে নিজেদের সাত শতক জমিতে প্রথম ইন্ডিয়ান একটি জাতের আঙ্গুর চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হলেও আঙ্গুর মিষ্টি না হওয়ায় নিজের লাগানো সখের গাছগুলো কেটে ফেলেন তিনি, কিন্তু হাল ছাড়েননি। পরবর্তীতে, ২০২৪ সালে ইউক্রেন, রাশিয়ারসহ বিভিন্ন দেশের বাইকুনর, একেলো, ভেলেজ, ডিক্সন, গ্রিণ লং, থার্টি ওয়া, মাসকাট হুয়াইট, বন্টাক ম্যাজিকসহ তেরো জাতের আঙ্গুরের ৩৫টি চারা লাগিয়ে আবারও চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানের মাচায় থোকায় থোকায় ঝুলছে তেরো জাতের আঙ্গুর।
বাগানের মিষ্টি ও সুস্বাদু অঙ্গুরগুলো ইতিমধ্যে বিক্রয় উপযোগী হয়েছে। জমি প্রস্তুত, চারা কেনা, মাচা তৈরি, বাগানের চার পাশে জিআই তারের বেড়া দেওয়া, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরী বাবদ ২০২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রতিদিন ৫-৭ জন দর্শনার্থী তার বাগান দেখতে যায়। ময়মনসিংহ বিভাগে সুমন আহাম্মেদই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষি। এদিকে, সুমনের বাগান দেখে আশপাশের আরো অনেকেই আঙ্গুর চাষের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামের সুলতান উদ্দিন বলেন, ‘আমি জানতে পেরে সুমন আহাম্মেদের বাগান পরিদর্শন করেছি। বাগানটি খুবই চমৎকার। আঙ্গুর খেয়েছি। আঙ্গুর খুবই মিষ্টি এবং সুস্বাদু। তার বাগান দেখে আমার মাঝে আঙ্গুর বাগান করার ইচ্ছা জেগেছে, চারাও সংগ্রহ করেছি।’
সুমন আহাম্মেদ বলেন, ‘গত তিন বছরে আঙ্গুর বাগানে এক লাখ টাকার মতো বিনিয়োগ হয়েছে এবং বাগানে লাগানো ৩৫টি চারার মাঝে ৩৩টিতে ফল এসেছে এবং ফলগুলো বিক্রয় উপযোগী হয়েছে। আশা করছি বাগান থেকে এ বছর এক লাখ টাকার আঙ্গুর বিক্রি করতে পারব। ইতিমধ্যে ৫০ হাজার টাকার চারা বিক্রি হয়েছে। আরো কমপক্ষে একলাখ টাকার চারা বিক্রি করতে পারব। আঙ্গুর বাগান থেকে সিজনে দুই বার ফলন পাওয়া যায়। প্রথম দফার ফলন পুরোপুরি তুলতে পারব বলে আশা করছি। তবে, পলিনেট হাউজ না থাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ফুল নষ্ট হওয়াসহ নানান কারণে দ্বিতীয় দফার ফলন পুরোপুরি পাওয়া নাও পাওয়া যেতে পারে। আগামী দিনে বাগানে খরচ কম হবে তাই লাভের পরিমাণ বাড়বে। সামনে বাগান সম্প্রসারণের ইচ্ছে আছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, ‘ভালুকা উপজেলার মাটি যেকোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী। উপজেলার কৈয়াদী গ্রামে সুমন আহম্মেদের আঙ্গুর বাগানে বেশ ভালো ফলন এসেছে। আঙ্গুর খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি। ময়মনসিংহ বিভাগে বাণিজ্যিকভাবে এটিই প্রথম আঙ্গুর বাগান। ভালুকা সদর থেকে যথেষ্ট দূরে হলেও আমি মাঝে মধ্যেই ওই বাগানে যাই।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোছা. নাছরিন আক্তার বানু সুমনের বাগান পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, তরুণ ওই উদ্যোক্তাকে সরকারিভাবে ‘পলিনেট হাউজ’ ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে তিনি আরো বেশি লাভবান হবেন এবং আঙ্গুর চাষ আরো সম্প্রসারণ করতে পারবেন। তাছাড়া, বাণিজ্যিকভাবে আঙ্গুর চাষ সম্প্রসারিত হলে বাইরে থেকে আমদানি ব্যয় অনেক কমে যাবে।