মনোনয়ন পেতে ফজলুর রাহমানের বিরুদ্ধে লড়ছেন যেসব নেতা

মনোনয়ন পেতে ফজলুর রাহমানের বিরুদ্ধে লড়ছেন যেসব নেতা

প্রথম নিউজ, অনলাইন:   হাওড় উপজেলা ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৪ নির্বাচনি এলাকা। এ আসন থেকে বারবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়ী হলেও এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। দলটি রাজনৈতিক দৃশ্যপটে না থাকায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের নামই বেশি শোনা যাচ্ছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি ছোট দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা মাঠে রয়েছেন। নির্বাচনি এলাকার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ আয়োজনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন এসব মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের সমর্থনে ব্যানার-পোস্টার-দেওয়াললিখন দেখা যাচ্ছে গ্রামগঞ্জ ও হাটবাজারে।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন-দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান; জাতীয়তাবাদী হিন্দু বৌদ্ব খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরঞ্জন ঘোষ; ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আহমেদ লাকী; অবসরপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আব্দুর রহিম মোল্লা; জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম রতন এবং বুয়েট ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি প্রকৌশলী মো. নেছার উদ্দিন। তবে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। কারণ, এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা তিনি। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় মানুষের কাছে তার আলাদা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সত্তরের দশকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ফজলুর রহমান বিএনপিতে যোগ দেন ২০০৫ সালে। আওয়ামী লীগ সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড ও জুলুম-নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন তিনি। ছিলেন আন্দোলনের সামনের কাতারে। এ কারণে জুলুম-অত্যাচার নেমে আসে তার ওপর। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এলাকায় পুরোদমে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন ফজলুর রহমান। মতবিনিময় সভা করছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। দলের বিভিন্ন ইউনিট পুনর্গঠনে কাজ করছেন।

আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে ফজলুর রহমান বলেন, বিগত সরকারের আমলে অনেক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ’৯৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করলেও আমাকে ষড়যন্ত্র করে হারিয়ে দেওয়া হয়। মিথ্যা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। এজন্য ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিতে পারিনি। আমার নিরপরাধ নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে হামলা-মামলা ও নিপীড়নের খড়্গ। নেতাকর্মীরা দিনের পর দিন গভীর হাওড়ে কিংবা জঙ্গলে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। কেউ কেউ কাটিয়েছেন কারাগারে। আমি আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা করেছি-শেখ হাসিনার পতন। আল্লাহ আমার কথা শুনেছেন; আমার নিপীড়িত-নির্যাতিত মজলুম নেতাকর্মীদের কথা শুনেছেন। আর নির্বাচন নিয়ে এখন কী আর কথা বলব? আশা করি, আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়ন পাব। আর মনোনয়ন পেলে ধানের শীষ মার্কায় ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে জয়ী হব। এই আসনে বিএনপির আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সুরঞ্জন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করি এজন্য যে, আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কাজ করছি। এর আগে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় আমি হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের একজন ট্রাস্টি হিসাবে এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মানুষের কল্যাণে অনেক কাজ করেছি। এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলাম। জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে বিএনপির রাজনীতিই করে আসছি। আশা করি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। তবে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তার পক্ষেই কাজ করব।’

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ড্যাব নেতা অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস আহমেদ লাকী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছি। আমার বাবাও এ আসন থেকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হিসাবে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিএনপির রাজনীতিতে আমার পরিবারের অবদান আছে। নিজের ও পরিবারের অবদান বিবেচনায়ই আমি আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দল অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে তার পক্ষেই কাজ করব।’

এদিকে এই আসনসহ জেলার কোনো আসনেই জামায়াতে ইসলামীর পাশের রেকর্ড নেই। তবে প্রথমবারের মতো দলটি কিশোরগঞ্জ-৪ আসনসহ ছয়টি নির্বাচনি এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও জামায়াতে ইসলামী ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর শাখার আইন বিভাগীয় সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শেখ মো. রোকন রেজাকে।

মনোনয়নের বিষয়ে রোকন রেজা বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে মানুষের আগের ধ্যানধারণার পরিবর্তন এসেছে। এই দল ধর্মবর্ণনির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচনমুখী দল হিসাবে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে দলকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সাধ্যমতো প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে কিছু মানবিক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছি। আশা করছি আগামী নির্বাচনে এলাকার জনগণ আমাকে সমর্থন করবে।’

এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে মাঠে রয়েছেন ইসলামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট বিল্লাল আহমেদ মজুমদার এবং দলের জেলা শাখার সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মুহাম্মাদ আহসানুল্লাহ। এই আসনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী হবেন জেলা উদীচীর সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন খান। তবে জাসদ (রব)-সহ অন্যান্য দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং প্রচার এখনো দৃশ্যমান নয়। এ আসন থেকে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল হামিদ, ১৯৭৯ সালে বিএনপির ফরহাদ আহমেদ কাঞ্চন, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের আবদুল হামিদ, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির আবদুল লতিফ ভূঁইয়া; ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের আবদুল হামিদ এবং ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন।

কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৮৪৮ জন পুরুষ; ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯৭ জন নারী, ১ জন তৃতীয় লিঙ্গেরসহ ৩ লাখ ৮২ হাজার ২৪৬ জন ভোটার রয়েছেন।