মুক্তিপণের ২৫ লাখ পেয়েও মিলনকে হত্যা করলো অপহরণকারীরা
প্রথম নিউজ, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ে অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলন হোসেন নামের এক যুবককে অপহরণ করেছিল একটি চক্র। এরপর দফায় দফায় মুক্তিপণের টাকা বাড়ায়। শেষ পর্যন্ত মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে জীবিত পেলো না পরিবার। এ ঘটনায় পুলিশ অপহরণকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার রাতে সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মহেশপুর বিট বাজার এলাকার সেজান আলীর বাড়ির পাশের একটি পরিত্যক্ত টয়লেটের নিচ থেকে মিলনের গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম।
গ্রেফতাররা হলো- সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মহেশপুর বিট বাজার এলাকার মো. মতিয়র রহমানের ছেলে মো. সেজান আলী। তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার হওয়া আরেকজনের নাম পরিচয় দেওয়া সম্ভব হয়নি পুলিশের পক্ষে। এদিকে বৃহস্পতিবার উত্তেজিত জনতা অপহরণকারীর বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
জানা যায়, অনলাইনে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কলেজ পড়ুয়া মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পিছনে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়েই নিখোঁজ হয় মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টার সময় ভুক্তভোগী পরিবারকে মুঠো ফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা। প্রথমে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। পরদিন দুপুরে ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। তবে পরে চক্রটি ৫ লাখ দাবি করে। পরদিন আরও বেড়ে ১০ লাখ হয়। তিনদিন পরে ১৫ লাখ চায় চক্রটি। সবশেষে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র। রোববার (৯ মার্চ) রাতে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেয় অপহৃত মিলনের পিতা পানজাব আলী। ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মিলন হোসেন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ও ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাও এর চাপাপাড়া এলাকার পানজাব আলীর ছেলে। এদিকে মিলনের পরিবার জমি জায়গায় বিক্রি ও ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকা দিয়েও ছেলেকে জীবিত না পেয়ে শোকের কাতর এবং পরিবারের সদস্যরা পাগল হয়ে যাওয়ার মতো হয়ে গেছেন।
মিলনের বাবা পানজাব আলী বলেন, থানা-পুলিশের কাছ থেকে ছেলেকে উদ্ধারে যথেষ্ট সাড়া না পেয়ে ছেলের মুক্তির জন্য টাকা জোগাড় করেন। অপহরণকারীরা ৯ মার্চ রাত ১০টার ঢাকাগামী ট্রেনে টাকা নিয়ে উঠতে বলে। এরপর চলে মুঠোফোনে যোগাযোগ। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের সেনুয়া এলাকায় চলন্ত ট্রেন থেকে টাকার ব্যাগটি বাইরে ছুড়ে ফেলে দিতে বলে অপহরণকারীরা। মিনিট দশেক পর টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তারা। সে সময় মিলনকে দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে পাওয়া যাবে বলে তথ্য দেয় অপহরণকারীরা। কিন্তু খোঁজাখুঁজি করেও সেখানে মিলনের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন ধরে এই বিষয়ে কাজ করছিলাম আমরা। কোনো ক্লু পাচ্ছিলাম না। প্রযুক্তির সহযোগিতায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা স্বীকার করে তারা মিলনকে খুন করেছে ও তাদের দেখানো মতে লাশ উদ্ধার করা হয়।
