ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া যেন কোনো উপায় নেই উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। নদ-নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে এ জনপদের মানচিত্র।

ভাঙনে দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

প্রথম নিউজ, গাইবান্ধা: চোখের পলকেই নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে মাথাগোঁজার একমাত্র ঠিকানা। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া যেন কোনো উপায় নেই উত্তরের জনপদ গাইবান্ধার নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। নদ-নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে এ জনপদের মানচিত্র।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর তীরে তীব্র আকার ধারণ করেছে ভাঙন। গত এক সপ্তাহে সাঘাটা উপজেলার মুন্সিরহাট পয়েন্টে অন্তত দুই শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কচুয়া, ভরতখালী, সাঘাটা, মুক্তিনগর, ঘুড়িদহ, হলদিয়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, শত শত বিঘা আবাদি জমি, গাছ-পালাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও বসতবাড়িসহ বহু স্থপনা। ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে সেগুলো প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রতুল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে সাঘাটা ইউনিয়নের মুন্সিরহাট বাজারের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক দোকানপাট। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো ওয়াপদা বাঁধ, মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়, খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ দায়সারাভাবে করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যা করছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে সাঘাটা উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নদীভাঙন থেকে জানমাল রক্ষায় উজানে মজবুত বাঁধ নির্মাণসহ ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসনের দাবি জানান স্থানীয়রা।

মুন্সিরহাট এলাকার নদীভাঙনের শিকার কছিরন বেওয়া বলেন, ‘স্বামীর রাখি (রেখে) যাওয়া পাঁচ শতক জমিতে একমাত্র মাথাগোঁজার ঠাঁই বাড়িটাও নদীর পেটে গেইছে (গেছে)। এখন ছইলগুলেক (ছেলেদের) নিয়ে কই থাকমো?’ একই এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘গত এক সপ্তাহজুড়ে ভাঙন বেড়ে গেছে। এতে নদের তীরবর্তী এলাকার বসতভিটা, আবাদি জমি নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে।’

মুন্সিরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন ফাতেমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন হলো ভিটেমাটি হারিয়ে স্কুলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছি। নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি জমি-জমা সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব আমি। পরিবার নিয়ে এখন কোথায় থাকবো, তা ভেবে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।’

মনছুর আলী নামের এক বৃদ্ধ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিবছর নদীভাঙনের পর বালুর বস্তা ফেলে চলে যায় প্রশাসন। দায়সারা কাজের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের মতো ভিটেমাটি হারানো দরিদ্র মানুষদের। আমরা কোনো ত্রাণ চাই না, নদীভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।’

সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সুইট বলেন, মুন্সিরহাট এলাকায় যমুনার তীর রক্ষার জন্য স্থানীয় এমপি মাহমুদ হাসান রিপনের প্রচেষ্টায় ২০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ এবং কাজের টেন্ডার হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শেষে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মজিবর রহমান বলেন, গাইবান্ধার যেসব পয়েন্টে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে, সেসব জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। কাজের মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাধারণত বন্যার সময়ই জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এতে এটি বেশিদিন টেকসই হয় না। দায়সারাভাবে কোনো কাজ করা হয় না।