ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে মেয়েকে নিয়ে অনশনে নারী
সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেন মেয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো নিয়ে। কেননা ভর্তির জন্য বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু মিথিলার বাবা সেটা দিচ্ছে না।

প্রথম নিউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: তালাক দেওয়া স্বামীর বিচার চেয়ে সোমবার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মেয়েকে নিয়ে অনশনে বসেন মরিয়ম বেগম। পেছনে বিভিন্ন দাবির কথা উল্লেখ করে আমরণ অনশনের ব্যানারও টাঙানো হয়। সব দাবি না আদায় হওয়া পর্যন্ত তিনি মেয়েকে নিয়ে অনশন করবেন বলে জানান।
পরে টানা দু’দিন অনশনের পর মরিয়ম খাতুন জেলার বিজয়নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এছাড়াও বিষয়টি নিয়ে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মো. হাসান জানান, মরিয়ম নামে এক নারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে তিনি বলেছেন, তাকে তার স্বামী ১১ বছর আগে তালাক দিয়েছেন। তাদের একটি কন্যা সন্তান আছে। তার স্কুলে ভর্তির জন্যে বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু তার স্বামী পরিচয়পত্র দিচ্ছেন না। স্বামীর অফিসে যাওয়ার পর তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেছেন। তিনি জানান, কেউ যদি কোনো নারীর সঙ্গে কটূক্তি বা দুর্ব্যবহার করেন, তাহলে ৫০৯ ধারায় অপরাধ। এই ঘটনায় আমরা একটি জিডি করেছি। আদালতের আদেশ নিয়ে আমরা ঘটনাটি তদন্ত করব। তদন্ত করে আদালতে জমা দেওয়া হবে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাটোর জেলার বড়ইগ্রাম উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামের সিতাব আলী মন্ডলের মেয়ে মরিয়ম খাতুন। ২০০৮ সালের ২৯ আগস্ট পাবনার আটঘরিয়া গ্রামের রামেশ্বর গ্রামের সুরমান মিয়ার ছেলে মো. শাহ আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। শাহ আলম পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে লাইনম্যান হিসেবে চাকরি করেন। বর্তমানে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার চান্দুরা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে কর্মরত। মরিয়ম বলেন, ‘১১ বছর আগে স্বামী আমাকে ডিভোর্স দেয়। প্রায় ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করলেও আদালতে অস্বচ্ছলতার কাগজ দেখিয়ে মাসে মাত্র এক হাজার টাকা মেয়েকে দিচ্ছে। এ টাকায় মেয়ের পড়ালেখাসহ অন্য খরচ চালানো যাচ্ছে না। তার বাবা জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি না দেওয়ায় স্কুলেও ভর্তি করানো যাচ্ছে না।’
বিয়ের প্রায় তিন বছর পর ২০১১ সালে ডিভোর্স হয়ে যায় শাহ আলম ও মরিয়ম দম্পত্তির। মরিয়ম এরপর ব্র্যাকের প্রোগ্রাম অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি নেন। অনৈতিক আবদার মেটাতে না পারায় এক কর্মকর্তার মিথ্যা অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার চাকরি চলে যায়। এরপর থেকে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকেন বলে জানান মরিয়ম। মরিয়ম বেগম বলেন, আদালতের রায় অনুযায়ী আমার কাবিননামার টাকা দিয়ে দেয় শাহ আলম। মেয়ের জন্য মাসে এক হাজার টাকা করে দেয়। কিন্তু এ টাকায় খরচ চালানো সম্ভব না।
তিনি বলেন, এখন সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়েছেন মেয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করানো নিয়ে। কেননা ভর্তির জন্য বাবার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন। কিন্তু মিথিলার বাবা সেটা দিচ্ছে না। অনেকে বলছে বাবাকে মৃত দেখাতে। কিন্তু সেটাও আমি করতে চাই না। এছাড়া জীবিত মানুষের মৃত্যু সনদ কে দেবে? মরিয়ম অভিযোগ করেন, এখনো তাকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়। শাশুড়ি স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলেও তার নামে হত্যা মামলা দেওয়া হয়। পুলিশের তদন্তে সেটি মিথ্যা মামলা হিসেবে প্রমাণিত হলে রক্ষা পান। ডিভোর্স দেওয়ার পর শাহ আলম আরেকটি বিয়ে করেছেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: