ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিএনপি সঙ্কটে: গণতন্ত্র জয়ী হবে, না সিন্ডিকেট?

প্রথম নিউজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে জেলা কমিটি গঠনে দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে সিন্ডিকেট-নিয়ন্ত্রিত নেতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এটি শুধু দলের গঠনতন্ত্রই নয়, বরং ১৯৭২ সালের ‘প্রতিনিধিত্ব আদেশ (RPO)’-এর ৯০বি ধারারও লঙ্ঘন হতে পারে।
কুমিল্লা বিভাগীয় বিএনপির তত্ত্বাবধানে জেলার ১৪টি ইউনিটের মধ্যে ১৩টি ইউনিট সফলভাবে সম্মেলন করে নির্বাচিত কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু জেলা কমিটিতে নির্বাচনের বাইরে থেকে একটি নির্ধারিত নেতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় তৃণমূল নেতারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ দলের ঐক্য ধ্বংস করতে পারে এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠী—যারা কেন্দ্রীয় সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় কাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে—দলের একনিষ্ঠ ত্যাগী নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করে দিচ্ছে। বিশেষ করে, এই ষড়যন্ত্র চলতে থাকছে এমন সময়ে, যখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি জেলা সম্মেলনে উপস্থিত থেকে স্বচ্ছ ও গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
২০২০ সাল থেকে মরহুম জিল্লুর রহমান এর হাত ধরে পরবর্তীতে অ্যাডভোকেট এম. এ. মান্নানসহ সিনিয়র নেতারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন। তবে স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, এখন কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত করা হচ্ছে।
এক জেলা পর্যায়ের কাউন্সিলর বলেন, ‘আমরা ইউনিট থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি, কিন্তু ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যদি নির্বাচন ছাড়াই একটি নির্ধারিত কমিটি চাপিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দলীয় পদ্ধতিতেই এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’
জেলা সম্মেলনের পর বিশাল সমাবেশে জেলা বিএনপির সদস্য কবীর আহমেদ ভূঁইয়া নেতৃত্ব দেন, যেখানে তৃণমূল কর্মীরা সুস্পষ্টভাবে গণতন্ত্রবিরোধী প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান। কবীর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি কখনও কোনো কমিটির বিরুদ্ধে কাজ করিনি। আমি সব সময় দলীয় ও সকল অঙ্গ সংগঠনের পাশে থেকে ঐক্য ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে দলকে শক্তিশালী করেছি। নির্বাচনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে যিনি আসবেন, আমি তার পক্ষে থাকব।’
এছাড়া, একাধিক নেতৃস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে যে, আগের এক সময় নিষ্ক্রিয় থাকা কিছু সিন্ডিকেট ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হঠাৎ আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, যাদের অনেকেই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং তাদের সক্রিয়তা দলের আইনসম্মত পথ থেকে বিচ্যুত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে বলে আশঙ্কা।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন বাধ্যতামূলক। এই বিধান অমান্য করলে দলীয় নিবন্ধনও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই সংকট এখন আর শুধু স্থানীয় বিষয় নয়—এটি বিএনপির গণতন্ত্র, সাংবিধানিক অনুশাসন ও আইনি বাধ্যবাধকতার প্রতি প্রতিশ্রুতির জাতীয় পরীক্ষা। সামনে জাতীয় নির্বাচন, আর এই মুহূর্তে সংগঠনের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে জরুরি।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতি উপেক্ষিত হলে, বিএনপি কেবল আস্থার সংকটেই পড়বে না, বরং দলের প্রাণভোমরা কর্মীদের হতাশ করে দলীয় ভিত্তিকেও দুর্বল করবে।