বৈরী আবহাওয়ায়ও দীপাবলি উৎসবে লাখো মানুষের ঢল

রোববার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৫টা ২৭মিনিটে লগ্ন (তিথি) শুরু হয়ে শেষ হবে সোমবার বিকেল ৫টা ২৭মিনিটে।

বৈরী আবহাওয়ায়ও দীপাবলি উৎসবে লাখো মানুষের ঢল

প্রথম নিউজ,  বরিশাল: বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় দীপাবলি উৎসবে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। নগরীর কাউনিয়া মহাশ্মশান এলাকা পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে। উৎসবকে ঘিরে মহাশ্মশানকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। মহাশ্মশানের ৭০ হাজারের বেশি সমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। মোমের আলোয় ঝলমলে হয়ে ওঠে পুরো মহাশ্মশান এলাকা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস কালীপূজার আগের দিন ভুত চতুর্দশী তিথিতে পূজা অর্চনা করলে প্রয়াত ব্যক্তির আত্মা শান্তি লাভ করে। তাই আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি প্রয়াত প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে সমাধিস্থলে নিবেদন করা হয় প্রয়াতের পছন্দের নানা ধরণের খাবার। সবকিছু করা হয় তিথি থাকা অবস্থায়। এছাড়া সমাধির পাশে মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করেন স্বজনরা।

রোববার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৫টা ২৭মিনিটে লগ্ন (তিথি) শুরু হয়ে শেষ হবে সোমবার বিকেল ৫টা ২৭মিনিটে।

এদিকে করোনার কারণে গত দুই বছর দীপাবলি উৎসবে মহাশ্মশানে আলোকসজ্জা, তোরণ নির্মাণ ও মেলার আয়োজন ছিল না। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবার নির্মিত হয়েছে তোরণ। উৎসবকে ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে মেলারও। শুক্রবার বিকেল থেকেই মহাশ্মশানে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যার পর জনসমুদ্রে পরিণত হয় গোটা এলাকা। নারী-পুরুষ, শিশু প্রত্যেকের হাতে মোমবাতি, আগরবাতি। সমাধিতে মোমবাতি প্রজ্বলন, আগরবাতি জ্বালিয়ে, ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে প্রয়াত প্রিয়জনকে স্মরণ করছেন ও আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করছেন স্বজনরা। মোমের শিখায় প্রজ্বলিত রূপালি আলোয় মহাশ্মশান এলাকা ঝলমল করছে।

আয়োজকরা জানান, এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম আয়োজন এটি। ভারতে এটি দীপাবলি উৎসব নামে পরিচিত হলেও বরিশালে শ্মশান দীপালি উৎসব হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব পালিত হচ্ছে। এবার আয়োজন ২০২ তম। বরিশাল মহাশ্মশান রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল মালাকার জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে দুপুর থেকে বরিশালে থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে শ্মশান দীপাবলি উৎসবকে ঘিরে বিকেল থেকে প্রয়াতদের স্বজনদের ভিড় বাড়তে শুরু করে মহাশ্মশানে। সন্ধ্যার পর জন সমুদ্রে পরিণত হয়। লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে মহাশ্মশানে। গভীর রাত পর্যন্ত ভিড় থাকবে।

তমাল মালাকার বলেন, প্রায় ৬ একর জমির ওপর স্থাপিত মহাশ্মশানের এলাকা। মহাশ্মশানে কাঁচাপাকা মিলেয়ে ৭০ হাজারের বেশি সমাধি রয়েছে। এখানে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাসের বাবা সত্যানন্দা দাস ও পিতামহ সর্বানন্দা দাস, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ বিপ্লবী দেবেন ঘোষ, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী মনোরমা মাসি মা ও শিক্ষাবিদ কালী চন্দ্র ঘোষসহ খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গের সমাধি রয়েছে। সমাধির পাশে মোমবাতি প্রজ্বলন করে প্রয়াতের আত্মার শান্তি কামনা করছেন স্বজনরা। স্বজন না থাকা সমাধি মঠগুলোতে কমিটির পক্ষ থেকে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়েছে। উৎসব নির্বিঘ্ন ও নিরাপত্তা বিবেচনায় মহাশ্মশানের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে ২৪ টিরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা ও কমিটির পক্ষ থেকে দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করছে। উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে শ্মশান দীপাবলি উৎসবে।

বরিশাল কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল জানান, দীপালি উৎসবকে ঘিরে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটেছে। উৎসবমুখর করতে মহাশ্মশানসহ আশপাশের এলাকায় চার স্তরের নিরাপত্তা আর দুই শতাধিক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। উদযাপনে নিরাপত্তা জনিত কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সে জন্য পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom