ব্যাংক ঋণ বাড়ছে সরকারের

গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার, যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি

ব্যাংক ঋণ বাড়ছে সরকারের
ব্যাংক ঋণ বাড়ছে সরকারের

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ অব্যাহতভাবে কমছে। তবে এর বিপরীতে ব্যাংক থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তথ্যে দেখা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে অর্ধেকেরও কম। গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ২০২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের সাড়ে নয় মাসে (২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত) ব্যাংক খাত থেকে ১৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংক থেকে ৫ হাজার ৪৫৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার, যা গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। সংশ্লিষ্টরা জানান, বাজারে সব জিনিসের দামই চড়া। পরিবহন, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ অন্য সব খাতেও খরচ বেড়েছে। এতে মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে। অপরদিকে সঞ্চয়পত্রের তুলনায় ব্যাংক খাতে সুদ হার কম হওয়ায় সরকারের এই খাতে ঋণ নেয়ার হার বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এতে সরকারের ঋণের বোঝা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছিল। 

সবশেষ মার্চ মাসে ১ হাজার ৮১৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫২২ কোটি টাকা; জানুয়ারিতে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে যে টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল, তার চেয়ে ৪৩৬ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে সুদ-আসল পরিশোধে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে সরকার তার কোষাগার থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের সুদ-আসল বাবদ ৪৩৬ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।
জানা গেছে, বিক্রির চাপ কমাতে ২০১৯ সালের ১লা জুলাই থেকে মুনাফার ওপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একই সঙ্গে ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপসহ আরও কিছু কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারপরও বাড়তে থাকে বিক্রি। সবশেষ সঞ্চয়পত্র খাতে সরকারকে যাতে বেশি সুদ পরিশোধ করতে না হয়, সেজন্য বিক্রি কমাতে গত বছরের ২২শে সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ২ শতাংশের মতো কমিয়ে দেয় সরকার। তারপর থেকেই বিক্রিতে ভাটা পড়ে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, গত দুই বছরের করোনা মহামারির কারণে মানুষের আয়-উপার্জন কমে গেছে। অনেকে চাকরি হারিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কারও বেতন কমেছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থাৎ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে মানুষ আর আগের মতো সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছে না। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর পরও ১০ শতাংশের বেশি সুদ পাওয়া যায়। ব্যাংকে বা অন্য কোনোখানে টাকা রাখলে এত মুনাফা পাওয়া যায় না। এ ছাড়া সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হচ্ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ; এখানে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেই, মাস শেষে বা নির্দিষ্ট সময় শেষে সুদ-আসল পাওয়া যায়। তাই সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমেনি, তবে এখন সঞ্চয়পত্র কেনার মতো সঞ্চয় নেই মানুষের কাছে। সে কারণে কমে গেছে এ খাতে বিনিয়োগ।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom