বাদীর ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

চট্টগ্রামে ছাত্রদল নেতার পায়ে গুলি

বাদীর ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

প্রথম নিউজ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে পা হারানো নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলামের ছোট ভাইকে আদালত ভবন থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। সাইফুলকে পঙ্গু করার  ঘটনা বায়েজিদ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ (ওসি) ৭ জনের বিরুদ্ধে তার (সাইফুল) মায়ের দায়েরকৃত মামলার  প্রতিবেদনের নারাজি রিভিশনে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের বিচারক সরোয়ার জাহানের  আদালতের সামনে এই ঘটনা ঘটে। জানা যায়, নগরের বায়েজিদে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে পা হারানোর  ঘটনায় তার মা ছানোয়ারা বেগম বাদী হয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে  একটি  নালিশি মামলা দায়ের করেন। বায়েজিদ থানার তৎকালীন ওসি কামারুজ্জামান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহের অসীম দাশ, নুরু নবী, কেএম নাজিবুল ইসলাম তানভীর, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাইফুল ইসলাম, মো. রবিউল হোসেন ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত মো. শাহজাহানকে মামলায় বিবাদী করা হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, পুলিশের পক্ষ থেকে দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দেয়ায় ওসি কামরুজ্জামানের নির্দেশে সাইফুলের পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। পরে এই ঘটনায়  পুলিশের  তদন্ত প্রতিবেদনে চাঁদার দাবিতে গুলি করার বিষয়টি সঠিক নয় বলে উল্লেখ  করা হয়। পরে সাইফুলের মা ছানোয়ারা বেগম এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি প্রদান করেন। আদালত সেই নারাজি গ্রহণও করেন। আর সেই  না-রাজির রিভিশন করতে মামলার বাদী ছানোয়ারা বেগম গতকাল চট্টগ্রাম জেলা জজ আদালতে আরেক ছেলে শাহীনকে নিয়ে যাওয়ার পর এই ঘটনা ঘটে। শাহীনের এখনো হদিস পায়নি তার পরিবার। নিখোঁজ  মোহাম্মদ শাহীন নগরের বায়েজিদ থানাধীন বার্মা কলোনি এলাকার মোহাম্মদ  নুরুল আমিনের পুত্র। তিনি নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি টিউশনি ও মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং করতেন।

শাহীনের ছোট বোন  ফারিয়া আক্তার বলেন, গতকাল আমার মা ও ছোট ভাই শাহীন সাইফুল ভাইয়ের মামলার কাজে কোর্টে গিয়েছিল। এরমধ্যে আদালতের দ্বিতীয় তলায় ৪-৫ জন মানুষ ডিবি পরিচয়ে এসে ভাইকে  তাদের সঙ্গে যেতে বলে। ভাই যেতে না চাওয়ায় জোর করেই  নিয়ে যায়। এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ নেই। মনসুরাবাদের ডিবি অফিসে গিয়েছি, থানায় গিয়েছি। কিন্তু খোঁজ নেই। পুলিশ, ডিবি’র সবাই বলছেন, ভাইকে তারা নিয়ে আসেননি। পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতা সাইফুলের মায়ের দায়েরকৃত মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মফিজুল ইসলাম  বলেন, গতকাল পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেতা সাইফুলের মায়ের দায়েরকৃত মামলার প্রতিবেদনের নারাজির ওপর  রিভিশন ছিল। তাই মামলার বাদী  ছানোয়ারা ও তার আরেক  ছেলে শাহীন আজকে আদালতে এসেছিল। তবে সেই রিভিশন না  হওয়ায় তারা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আদালত থেকে বের হতে যাবে, এমন সময় ৫-৬ জন লোক শাহীনকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। তারা নিজেদেরকে  ডিবি’র  লোক বলে পরিচয় দিয়েছে। আদালত থেকে বিচারপ্রার্থীকে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়া বিচার বিভাগের জন্য বড়ই লজ্জার।

তবে মোহাম্মদ শাহীনকে আদালত থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে  চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের (বন্দর-পশ্চিম) উপ-কমিশনার আলী হোসেন বলেন, এরকম কোনো বিষয় আমরা জানি না। আমরা কাউকে আদালত থেকে উঠিয়ে আনিনি।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৬ই জুন রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরের  বায়েজিদ লিংক রোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে  ‘বন্দুকযুদ্ধে’ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় নগর ছাত্রদলের সাবেক সহ-সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম। এতে সাইফুলের  বাম পা কেটে ফেলতে হয়। বায়েজিদ থানার তৎকালীন ওসি কামরুজ্জামানের দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা চাঁদা না দেয়ায় বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজিয়ে ছাত্রদলের এই নেতাকে  চিরতরে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তার পরিবার।