বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ঋণ কত, জানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক
রম সংকটের মুখে পড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। ডলার সংকটে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না সরকার।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: চরম সংকটের মুখে পড়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। ডলার সংকটে গ্যাস, কয়লা ও জ্বালানি আমদানি করতে পারছে না সরকার। কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। তীব্র গরমে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। অন্যদিকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে বাংলাদেশি কোম্পানির বকেয়া দিন দিন বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ব্যাংকগুলো কী পরিমাণ অর্থ ঋণ দিয়েছে, তার তথ্য জানাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার (৬ জুন) এ চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে দেওয়া চিঠিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কত টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, এ খাতে কত টাকা ঋণের সুদ মওকুফ করাসহ ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠনের তথ্য জানাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আগামী ৭ দিনের মধ্যে এসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। এতে করে গত এক দশকে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে এ খাতে দায়-দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা। এরপরও এ খাতে উৎপাদন বাড়াতে সীমাহীন ঋণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। চলতি বছরের ২ মার্চ এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি ঋণ কোনো প্রতিষ্ঠানকে দিতে পারে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এ সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তুলে নেওয়া হয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনে যত খুশি তত ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে ব্যাংকগুলোর।
এদিকে ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি না করতে পারায় রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়েছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও। বিল বকেয়া থাকায় জ্বালানি তেল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে বেসরকারি খাতের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। নিয়মিত ঋণপত্র (এলসি) খুলতে পারছে না বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এলএনজি আমদানি বাড়াতে পারছে না বাংলাদেশ তৈল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। জানা গেছে, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বকেয়া পরিশোধে এ মুহূর্তে অন্তত ১০০ কোটি ডলার দরকার। এসব প্রতিষ্ঠানের হাতে টাকা থাকলেও ডলার না পাওয়ায় বকেয়া পরিশোধে সমস্যা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক ও সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া ঋণের ভিত্তিতে বর্তমানে দেশে ১৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চলছে। দেশে বিদ্যুৎ খাতের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায়। ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সিংহভাগ অর্থায়ন করেছে রাশিয়া। প্রকল্পে দেশটির দেওয়া ঋণের পরিমাণ ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে।