২১১ কোটি টাকা লুটপাট, ফাঁসছেন ৭ কাস্টমস কর্তাসহ ৫৪: দুদকের ১৪ মামলা অনুমোদন
গত ২ মার্চ মামলাগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের (পরিচালক) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সাত সদস্যের অনুসন্ধান টিমের প্রধান ও দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জনসংযোগ দফতরের যোগাযোগ করতে বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: তারা বড় বড় ব্যবসায়ী। বিদেশ থেকে তাদের আমদানি করা পণ্যের শুল্ক-করের পরিমাণই দাঁড়ায় কোটি কোটি টাকা। কিন্তু কোটির বদলে লাখ টাকা দিয়েই কাস্টমস থেকে পণ্য খালাস করে নেন তারা। এ জন্য আশ্রয় নেন মিথ্যার। কখনো বলেন, বিদেশ থেকে এনেছি মিষ্টি ভুট্টা, বেকিং পাউডার; কখনোবা বলেন, এনেছি গাড়ির টায়ার, রুটি মেকার। কিন্তু আদতে দেখা যায়, তাদের কন্টেইনার ভরা উচ্চ শুল্কযুক্ত লাখ লাখ পিস দামি দামি সিগারেট।
প্রতারণা ধরা পড়লে আইনগতভাবেই আটকে যায় এসব পণ্য। ‘ডু নট রিলিজ’ বলে আইনগত সমাধানের জন্য ‘লক’ করে দেওয়া হয়। এই লক ভাঙতে গড়ে উঠেছে চক্র। আর সেই চক্র আমদানি-রপ্তানিকাজে ব্যবহৃত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে প্রবেশ করে একে একে খালাস করেছে আটকে থাকা ২২টি চালান। এর মাধ্যমে ফাঁকি দিয়েছে ২১১ কোটি টাকার রাজস্ব।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে বদলি হওয়া দুই কর্মকর্তার ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ডের অপব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্যের নামে আনা সিগারেটের এসব চালান ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে খালাস করা হয়েছে। এনবিআরের অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ঢুকে অবৈধভাবে খালাস করেছে আটকে থাকা ২২টি চালান। ফাঁকি দিয়েছে ২১১ কোটি টাকার রাজস্ব।
এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ১৪টি মামলার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব মামলায় ১৪ আমদানিকারক ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মোট ৫৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ৫৪ জনের নাম মামলায় এসেছে মোট ১৩৩ বার। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে মামলাগুলো দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে।
গত ২ মার্চ মামলাগুলো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে দুদকের উচ্চ পর্যায়ের (পরিচালক) এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সাত সদস্যের অনুসন্ধান টিমের প্রধান ও দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জনসংযোগ দফতরের যোগাযোগ করতে বলেন।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে ১৪ আমদানিকারক ও সংশ্লিষ্ট ৪০ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এর আগে একই ঘটনায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ২০১৯ সালের বিভিন্ন সময়ে ২১টি মামলা দায়ের করেছিল। যা পরবর্তীতে পুলিশের সিআইডিকে তদন্তভার দেওয়া হয়। কিন্তু মামলার ধারা ও তদন্ত প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে আদালতের নির্দেশনায় ২০২১ সালের সিআইডি থেকে তদন্তভার দুদকের কাছে হস্তান্তর হয়। এরপর শুরু হয় দুদকের পুনরায় অনুসন্ধান।
১৪টি মামলার অনুমোদন দিয়েছে দুদক। আসামি করা হয়েছে ৫৪ জনকে। অনুসন্ধান প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা ছিলেন ডি এ এম মহিবুল ইসলাম। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ফজলুল হক ২০১৩ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত কাস্টম হাউসে কর্মরত ছিলেন। তাদের বদলি করার পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিয়ন্ত্রিত অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড অপব্যবহার করে ৩ হাজার ৭৯৭ বার লগইন ও লগআউট করা হয়। এর মাধ্যমেই বিভিন্ন পণ্যের নামে আনা দামি সিগারেটের ২২টি চালান খালাস করা হয়। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয় ২১০ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার ৮১০ টাকার।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দুদকের অনুসন্ধানে এ ঘটনার সাথে ১৪টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- আর কে ইন্টারন্যাশনাল, মুভিং ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, জারার এন্টারপ্রাইজ, সিফাত ট্রেডিং, এস ডি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল, জাহিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এস কে এস এন্টারপ্রাইজ, খান এন্টারপ্রাইজ, মিমি লেদার কটেজ, এ কিউ ট্রেডিং, সুপার ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, এইচ এল ট্রেড কর্পোরেশন, এস পি ইন্টারন্যাশনাল ও এস এ এম (স্যাম) ইন্টারন্যাশনাল।
১৪ প্রতিষ্ঠানের দায়ভার ও জড়িত থাকার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের প্রতিবেদনে। এতে দেখা গেছে, আর কে ইন্টারন্যাশনালের মালিক বিথী রানী সাহা। ২০১৮ সালে সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ইসলামপুর রোড শাখায় হিসাব খুলে ভারত থেকে বিভিন্ন এক্সেসরিজ আমদানির জন্য ২০ শতাংশ মার্জিনে ১১ হাজার ৯০৪ মার্কিন ডলার মূল্যের ঋণপত্র খোলেন তিনি। এলসির বিপরীতে সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট মো. মিজানুর রহমান চাকলাদারের মালিকানাধীন এম আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করেন। মিথ্যা ঘোষণার তথ্য থাকায়, অর্থাৎ এক্সেসরিজের কথা বলে সিগারেট আমদানি করায় তার পণ্যের খালাস কার্যক্রম সাময়িক স্থগিত করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। তখন অ্যাসাইকুড়া ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে চালানটি ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল লক করা হয়। কিন্তু বদলিকৃত রাজস্ব কর্মকর্তা ডি এ এম মহিবুল ইসলামের ইউজার আইডি ([email protected]) এবং পাসওয়ার্ডের অপব্যবহার করে সিস্টেমে অবৈধভাবে ঢুকে লক অবমুক্ত করে অসাধু চক্র। এরপর ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর এক্সেসরিজ বলে আমদানি করা ৬৬ লাখ শলাকা সিগারেট খালাস করা হয়।
১৪টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে দুদকের প্রতিবেদনে।
খালাসকাজে মো. আবুল কামাল নামের একজনের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়। অনুসন্ধান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হকের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। পণ্য ছাড় করতে জাল অনাপত্তিপত্র প্রস্তুত ও ইস্যু ডেসপাচ এবং বিতরণের সাথে রাজস্ব কর্মকর্তা সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক মো. সিরাজুল ইসলামের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে দুদকের অনুসন্ধানে। আর ওই জাল কাগজপত্র যাচাই না করে চালানটি শুল্কায়ন করেন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার জনি ও রাজস্ব কর্মকর্তা মো. হাবিবুল ইসলাম।
চালানটিতে ৪০ ফুট কন্টেইনারে নিট ওজন ছিল ১৪ হাজার ৮৮০ কেজি। ওই চালানে আমদানি নীতি আদেশ লঙ্ঘন করে ঘোষণা বহির্ভূত উচ্চ শুল্কযুক্ত বেনসন অ্যান্ড হেজেস ব্রান্ডের ৬৬ লাখ শলাকা সিগারেটে খালাস নেওয়া হয়েছে। এসব সিগারেট খালাস করতে আদায়যোগ্য শুল্ক-করের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ১০০ টাকা। অথচ সিগারেটকে এক্সেসরিজ পণ্য হিসেবে দেখিয়ে রাজস্ব পরিশোধ করা হয়েছে মাত্র ১১ লাখ ১৯ হাজার ৩১২টাকা। অর্থাৎ, রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৮ কোটি ৮ লাখ ২৪ হাজার ৭৮৯ টাকা। একইভাবে অপর একটি বিল অব এন্ট্রি’র মাধ্যমে মিথ্যা ঘোষণায় ১৬ কোটি ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৫১৬ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অর্থাৎ, ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুটি চালানে মোট ২৪ কোটি ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৩০৪ টাকা ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- আর কে ইন্টারন্যাশনালের মালিক হচ্ছে বিথী রানী সাহা, সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট এম আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. মিজানুর রহমান চাকলাদার, মো. আবুল কামাল, চট্টগ্রাম কাস্টম অফিসের সহকারী প্রোগ্রামার কামরুল হক, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার জনি, রাজস্ব কর্মকর্তা মো. হাবিবুল ইসলাম, রাজস্ব কর্মকর্তা (এআইআর) সুলতান আহম্মদ, কম্পিউটার অপারেটর ফিরোজ আহমেদ, উচ্চমান সহকারী মো. আব্দুল্লাহ আল মাছুম ও অফিস সহায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম।
একই প্রক্রিয়ায় অপরাধী চক্রটি দুটি চালানে ২০১৮ সালের ২৪ মে থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত জিপার ও চাইনিজ টায়ারের বদলে মিথ্যা ঘোষণায় উচ্চ শুল্কযুক্ত সিগারেট আমদানি ও খালাস করে মোট ১৬ কোটি ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৭৫০ টাকা ফাঁকি ও আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুদকের অনুমোদিত মামলায় মোট ১১ জনকে আসামি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্ভাব্য আসামিরা হলেন- মুভিং ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক ও ম্যানেজিং পার্টনার মো. মিজানুর রহমান চাকলাদার, মো. মফিজুল ইসলাম লিটন ও আব্দুল হান্নান দেওয়ান, চাকলাদার সার্ভিসের মালিক ও সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হাবিবুর রহমান (অপু), মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারী মো. আব্দুল গোফরান ও মো. জহুরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কাস্টম অফিসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার জনি ও ৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
একইভাবে ৫টি পণ্য চালানে ২০১৮ সালের ২৪ মে থেকে ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে এক্সেসরিজ ও চাইনিজ টায়ার ঘোষণা দিয়ে উচ্চ শুল্কযুক্ত সিগারেট খালাস করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মোট ৫৬ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৬ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়। দুদকের অনুসন্ধানে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এই অভিযোগ কমিশন থেকে অনুমোদিত মামলায় মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। জারার এন্টারপ্রাইজের ব্যানারে শুল্ক-কর ফাঁকিতে আসামি হিসাবে ফাঁসছেন মেসার্স জারার এন্টারপ্রাইজের (আমদানিকারক) মালিক জনাব মাহবুবুর রহমান, চাকলাদার সার্ভিসের মালিক ও সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হাবিবুর রহমান (অপু), মোবাইল নম্বর ব্যবহারকারী মো. আব্দুল গোফরান, মো. জহুরুল ইসলাম ও মো. আবুল কালাম এবং চট্টগ্রাম কাস্টম অফিসের ওই পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী।
আমদানিকারক সিফাত ট্রেডিংয়ের মালিক মো. সালাউদ্দিন টিটো এবং সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট মো. হাবিবুর রহমান (অপু) চাকলাদার একই প্রক্রিয়ায় তিনটি চালানে মিথ্যা ঘোষণায় সিগারেট খালাস করেন। যেখানে ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৩২ কোটি ২৭ লাখ ১ হাজার ৬৪৬ টাকা। এক্ষেত্রে সিগারেট খালাস করা হয়েছে বাটন ও পিন জাতীয় পণ্য বলে। দুদকের অনুসন্ধানে টিটো ও অপু ছাড়াও অনুপ্রবেশকারী মোবাইল ফোন নম্বরের মালিক মো. আবুল কামালের সাথে চট্টগ্রাম কাস্টম অফিসের ওই পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়ী করা হয়েছে।
একইভাবে আমদানিকারক এস ডি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনালের ব্যানারে ভুট্টা ও বেকিং পাউডার ঘোষণা দিয়ে জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে উচ্চ শুল্কযুক্ত সিগারেট আমদানিতে ৮ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬৩৩ টাকার রাজস্ব ফাঁকি ও আত্মসাৎ করা হয়। এক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কাস্টম অফিসের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও আরো ৯ জনকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন- এস ডি ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মিসেস নাসরীন রায়হান, সি এন্ড এফ এজেন্ট স্বরণিকা শিপিং কাইজেন লিমিটেডের এমডি মো. কামরুল ইসলাম, পরিচালক জাভেদ আহমেদ, আনিসুর রহমান রিপন, তানজিন মোর্শেদ, শরীফ উদ্দিন ও মো, আবদুল কাফি, অনুপ্রবেশকারী মোবাইল নম্বরের মালিক আব্দুল গোফরান ও জহুরুল ইসলাম।
ভুট্টা ও দই বলে বিলাসী সিগারেট আমদানির মাধ্যমে ৮ কোটি ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯০০ টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। এ কাজে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি দায়ীরা হলেন- আমদানিকারক মেসার্স জাহিদ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মো. জাহিদুল ইসলাম, সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট মেসার্স লায়লা ট্রেডিং কোম্পানির মালিক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, ইউজার আইডি ব্যবহারের জন্য অনুপ্রবেশকারী মোবাইল ফোন নম্বরের মালিক মো. আব্দুল গোফরান ও মো. জহুরুল ইসলাম।
অন্যদিকে, আমদানিকার মেসার্স এস কে এস এন্টারপ্রাইজের মালিক রাসেদুল ইসলাম কাফি এবং সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট এম অ্যান্ড কে ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক মোফাজ্জেল হোসেন মোল্লা রুটি মেকারের নামে সিগারেট আমদানি করে ৮ কেটি ১৫ লাখ ৬ হাজার ১১৩ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। একইভাবে আমদানিকারক মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজের মালিক রাশেদুল হোসেন খান এবং মেসার্স পাবনী এন্টারপ্রাইজের মালিক রাশেদ খান, মো. রুহুল আমিন ও মো. আরিফুর রহমান ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯০৪ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
এছাড়া, আমদানিকারক মিমি লেদার কটেজের নামে মিথ্যা ঘোষণা ৮ কোটি ১৮ লাখ ৫ হাজার ১৮৪ টাকা, এ কিউ ট্রেডিংয়ের নামে ৮ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫১ টাকা, মেসার্স সুপার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে ৮ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ৯৭৪ টাকা, এইচ এল ট্রেড কর্পোরেশনের নামে ৮ কোটি ১৩ লাখ ১৮ হাজার ৬৬৯ টাকা, মেসার্স এস পি ইন্টারন্যাশনালের নামে ৮ কোটি ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৫২ টাকা এবং আমদানিকারক এস এ এম (স্যাম) ইন্টারন্যাশনালের নামে একই প্রক্রিয়ায় ৮ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার ৮৫৫ টাকা শুল্ক-কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।
এই অভিযোগে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ওই পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ইউজার আইডিতে ব্যবহার করা দুই মোবাইল ফোন নম্বর মালিককে আসামি করে ৬ মামলা অনুমোদন দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। মামলাগুলোর অন্যান্য আসামিরা হলেন- মিমি লেদার কটেজের মালিক গোলাম মোস্তফা, সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট মোফাজ্জেল হোসেন মোল্লা। আমদানিকারক এ কিউ ট্রেডিংয়ের মালিক আব্দুস কুদ্দুস রায়হান এবং সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট ইকবাল হোসেন মজুমদার। আমদানিকারক মেসার্স সুপার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক রবীন্দ্রনাথ সরকার এবং সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট হাবিবুর রহমান চাকলাদার (অপু)। আমদানিকার এইচ এল ট্রেড কর্পোরেশনের মালিক আব্দুল হান্নান দেওয়ান। মেসার্স এস পি ইন্টারন্যাশনালের মালিক মোহাম্মদ সেলিম এবং সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট লাবনী এন্টারপ্রাইজের মালিক রাশেদ, রুহুল আমিন ও আরিফুর রহমান। সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট লাবনী এন্টারপ্রাইজের তিন মালিক এবং আমদানিকারক এস এ এম (স্যাম) ইন্টারন্যাশনালের মালিক সেফায়েত উল্লাহ।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews