বিদ্যালয় মাঠে পোড়ানো হচ্ছে বিটুমিন, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা
বিদ্যালয় চলাকালে ওই মাঠেই আগুন জ্বালিয়ে বিটুমিন গলানো হয়। পাশেই দুটো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কালো ধোঁয়া ও শব্দে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের।
প্রথম নিউজ, দিনাজপুর: দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার চাঁদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে রাস্তা তৈরির সরঞ্জাম দিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে রেখেছে মেসার্স সাহেদ হোসেন নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
বিদ্যালয় চলাকালে ওই মাঠেই আগুন জ্বালিয়ে বিটুমিন গলানো হয়। পাশেই দুটো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কালো ধোঁয়া ও শব্দে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটছে শিক্ষার্থীদের। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে প্রাথমিক ও পাশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী। গ্রামের একমাত্র বড় এই মাঠটি ঠিকাদারের দখলে থাকায় স্থানীয় শিশু-কিশোরেরা খেলাধুলা করতে পারছে না।
এদিকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে শিশুদের প্রস্তুত করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাঠটি ছেড়ে দিতে বললেও তা আমলে নেননি ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কেউ। এতে ক্ষোভ দেখা গেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে।
বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গায় ইটের কংক্রিট, বালু, মাটি, এক্সকাভেটর, বিটুমিনের ড্রাম স্তুপ করে রাখা হয়েছে। বিটুমিন গলানোর জন্য বানানো চুলা স্থাপন করা হয়েছে। এখানে আগুন জ্বালালে ধোঁয়া বিদ্যালয়ের ভবনে প্রবেশ করে। সারা মাঠে ছোট ছোট কংক্রিট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নূরুল মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ের ওই মাঠটি পুরো গ্রামের একমাত্র খেলার মাঠ। এলাকার ছেলে-মেয়েরা স্কুল শেষে এবং বিকেলে ওই মাঠেই খেলাধুলা করে। কিন্তু প্রায় সময়ে ওই মাঠের ওপর রাস্তার কাজের নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়। ফলে এলাকার শিশুরা ঠিকমতো খেলাধুলা করতে পারে না। বর্তমানে মাঠের অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল হয়ে গেছে। এখানে মালামাল রেখে দূর-দূরান্তের রাস্তার কাজ করা হচ্ছে। চাঁদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাকিল ইসলাম বলে, মাঠে খালি পায়ে হাঁটা যায় না। ইটের টুকরা পায়ে লাগে। অনেক ব্যথা পাই। প্রায় সময় মাঠটি দখল করে বিভিন্ন কাজ করা হয়। ফলে আমরা ঠিকমতো খেলাধূলা করতে পারিনা।
চাঁদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, আমি বিশেষ কাজে কক্সবাজার গিয়েছিলাম। এসে দেখি বিনা অনুমতিতে বিদ্যালয়ের মাঠের বড় অংশ দখল করে এখানে রাস্তার কাজের ইট, বালি, বিটুমিন, মেশিনসহ জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। কেন বা কার অনুমতিতে বিদ্যালয় মাঠে এসব জিনিস রাখা হয়েছে জানতে চাইলে ঠিকাদারের লোকজন বলেন চাঁদপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। অথচ মাঠটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারি এলাকার কিছু ছেলের সঙ্গে কথা বলে মাঠটি ব্যবহার করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে বিদ্যালয় চলাকালীনও তারা বিটুমিন জ্বাল দেন। অনেক কালো ধোঁয়া হয়। প্রচণ্ড শব্দও হয়। তাছাড়া পুরো মাঠেই ইটের টুকরা পড়ে আছে। বাচ্চারা এখানে খেলাধুলা করতে পারে না।
তিনি বলেন, এখানে যারা কাজ করেন, তাদের বারবার বলেছি বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতে শিশুদের প্রস্তুতি গ্রহণের কারণে গত দুদিন আগে মাঠটি ছেড়ে দিতে বললেও তা আমলে নেয়নি ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কেউ। অভিযুক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী শাহেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, কাজটি নিয়ে আমি ধরা খেয়েছি। ক্ষতির মধ্যেও কাজটি করছি। আশপাশে কোনো জায়গা নেই যেখানে এই সামগ্রীগুলো রেখে কাজ করব। বিদ্যালয় মাঠটি ফাঁকা ছিল সংশ্লিষ্ট ও এলাকার কিছু যুবকের সঙ্গে কথা বলে মাঠটি ব্যবহার করছি। এলাকার ছেলেরা দাবি করেছে সেখানে ফুটবল খেলার একটি বার পোস্ট তৈরি করে দিতে।
ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী মিজানুর রহমান সরদার বলেন, আশপাশে কোনো খোলা স্থান নেই। রাস্তার কাজ হচ্ছে। কোথায় রেখে কাজ করবে? দুদিনের মধ্যে রাস্তার কাজ শেষ হবে। ঠিকাদারকে বলা হয়েছে দ্রুত নির্মাণ সামগ্রী বিদ্যালয় মাঠ থেকে সরিয়ে নিতে।