সরকারের পাশে রাজনৈতিক দলগুলো: ফ্যাসিবাদ মোকাবিলায় ঐক্যের ঘোষণা
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে নেতারা

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশের প্রধান চারটি রাজনৈতিক দল- বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)- বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে এই আশ্বাস দেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। একইসঙ্গে নেতারা যেখানেই ফ্যাসিবাদ, সেখানেই সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলার ঘোষণাও দিয়েছেন।
বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, কাল থেকে যেখানে ফ্যাসিবাদ, সেখানেই মোকাবিলা করা হবে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছে প্রধান উপদেষ্টাকে।
ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে চারটি দলের নেতারাই সরকারের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। আগামী নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে দলগুলো।
তিনি বলেন, বারবার কেন সচিবালয় আক্রান্ত হয়, সেটি খতিয়ে দেখতে বলেছেন নেতারা। বিভিন্নভাবে পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে ফ্যাসিবাদী শক্তি। তারা গুজব ছড়াচ্ছে। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে।
তবে বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে কেউ সাংবাদিকদের কিছু জানাননি। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানানো হবে বলে বলা হয়। এনসিপির পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের আরও বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনা হয়েছে।
তিনি জানান, বিশেষ করে গতকাল মাইলস্টোন কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় জাতির হৃদয় বিদীর্ণ হয়েছে এবং সেখানে নিহত শিশুদের পরিবারে যথাযথ সহযোগিতা ও ক্ষতিপূরণের দাবি তোলা হয়েছে। আহতদের পূর্ণ চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
তাহের বলেন, দেশে পরিকল্পিতভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টা চলছে এবং গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এসব দুর্বলতা চিহ্নিত করে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকারের উচিত প্রশাসনকে আরো কঠোর এবং সমন্বিত করা যাতে যেকোনো ঘটনা ঘটার আগেই সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো স্থান থাকবে না, পুরনো ফ্যাসিবাদ নির্মূল হয়েছে এবং নতুন ফ্যাসিবাদ গজাতে দেওয়া যাবে না। ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য অটুট থাকবে এবং দেশের প্রতিটি স্থানে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তাহের বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে, তাই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হবে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তিনি জানান, তিনি এবং তার দল সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে এবং গত নির্বাচনের মতো সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নতুন সরকার নির্বাচিত হলে তা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ইতিবাচক হবে।
অবশেষে তিনি বলেন, ‘প্রিভেনশন ইজ বেটার দেন কিউ’ অর্থাৎ প্রতিরোধই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসা, সেই কারণে সরকারের উচিত প্রিভেনশনকে আরও শক্তিশালী করা। প্রধান উপদেষ্টা তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে তারা মন্ত্রী পরিষদসহ সকলে মিলে কঠোর মনোভাব নিয়ে কাজ করবেন এবং সহযোগিতা কামনা করেছেন। আমরা সরকারকে পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেবো ইনশাআল্লাহ।
এই বৈঠকে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী; জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ; জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম মেম্বার অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান।