১২০ ছাত্রের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো বিয়ে

চিরাচরিত নিয়ম ভেঙে গান-বাজনার পরিবর্তে বিয়েতে পবিত্র কোরআন খতমের আয়োজন

১২০ ছাত্রের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে সম্পন্ন হলো বিয়ে
বিয়ের অনুষ্ঠানে কোরআন তেলাওয়াত

প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: খোলা মাঠ। সারিবদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করছে ১২০ মাদরাসা ছাত্র। হঠাৎ দেখলে মনে হবে কোনো ওয়াজ মাহফিল বা বড় কোনো ধর্মীয় সভা। কিন্তু না। এই ১২০ ছাত্রের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমেই সম্পন্ন হলো একটি বিয়ে। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) এমনই বিয়ের ঘটনা ঘটেছে ফরিদপুর সদরের চাঁদপুর ইউনিয়নের বাঘারকান্দী গ্রামে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বর মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত চট্টগ্রাম বি এফ শাহীন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বয়স ২১ বছর। তিনি বাঘারকান্দী গ্রামের ওবায়দুর রহমানের ছেলে। বিয়ে করেছেন মধুখালীর ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে মাদরাসাছাত্রী জাকিয়া সুলতানাকে।

ওবায়দুর রহমানের দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে ইয়াছিন আরাফাত, মেজ ছেলে আশিকুর রহমান পড়েন চট্টগ্রামের একটি মাদরাসায় এবং ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস পড়েন ফরিদপুর শহরের ফাতেমাতুজ্জজোহরা মাদরাসায়। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে চট্টগ্রামের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন ওবাদুর রহমান।

ওবায়দুর রহমান বলেন, আমার বড় ছেলে ইয়াছিন আরাফাত। আমি চেয়েছি কোরআন-সুন্নাহকে ধারণ করে চলতে। আমার আর দুই ছেলে-মেয়েকেও একই পদ্ধতিতে বিয়ে দেবো।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বাঘারকান্দী মহিলা মাদরাসার মাঠে গায়ে হলুদের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় চারটি মাদরাসার ১২০ জন হাফেজ বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত কোরআন খতম করে। পরে ওয়াজ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ওয়াজ নসিহত করেন ধর্মীয় বক্তা রুহুল আমীন ফারুকী, ফরিদপুরের ১২ বছরের শিশুবক্তা গোলাম সালমান রাজীসহ স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম। এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, শুক্রবার পাঁচটি মাইক্রোবাসে ৬০ জনকে নিয়ে বরযাত্রা শুরু করি। পরে মধুখালীর ব্রাহ্মণকান্দা গ্রামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে বিয়ের কাজ শেষ করি। বিয়ে পড়ানোর পর উপস্থিত সবাইকে দুধ ও খেজুর খাওয়ানো হয়। পরে মেয়ে পক্ষের নির্ধারিত দুপুরের খাবার খেয়ে সন্ধ্যায় নববধূ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।

তিনি বলেন, গান-বাজনা বাজিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বিয়ে আমাদের সমাজের খুবই সাধারণ চিত্র। কিন্তু মুসলিম বর-কনে হিসেবে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান কেমন হবে-এটা নিয়ে আমরা ভাবি না। তাই চিরাচরিত নিয়ম ভেঙে গান-বাজনার পরিবর্তে বিয়েতে পবিত্র কোরআন খতমের আয়োজন করেছি। 

বাঘারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আরাফাতের প্রতিবেশী মিজান শেখ বলেন, আমার জীবনে এমন বিয়ে দেখিনি। বিয়েতে কোরআন তেলাওয়াত ও ওয়াজ মাহফিল দেখে আমাদের ভালো লেগেছে। এই উদ্যোগ এলাকায় ইতোমধ্যে ব্যাপক সারা ফেলেছে। এই চর্চা মুসলমানদের ভেতর এভাবেই ছড়িয়ে পড়ুক।

বর ইয়াছিন আরাফাত বলেন, আমার বিয়ের মধ্যদিয়ে নতুন ধারার সূচনা হয়েছে। এ যুগে এমন চর্চা খুব দেখিনি। আমার বাবার অনুপ্রেরণায় এমন একটি মহতী উদ্যোগ সফল হয়েছে। এই বিয়ে দেখে ভবিষ্যত প্রজন্ম ইসলামী ঘরনায় ফিরে আসবে। এটাই আমি চাই।

চাঁদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুন্নাহার বলেন, সচরাচর এমন বিয়ে দেখা যায় না। ওয়াজ মাহফিল ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়। এটা দেখে ইসলাম ধর্মের মানুষ এমন বিয়ের চর্চা করতে পারে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom