বগুড়ায় বেতন-ভাতার দাবিতে ইন্টার্ন নার্সদের কর্মবিরতি
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল চত্বরে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নার্স এই কর্মসূচি পালন করেন।
প্রথম নিউজ, বগুড়া: শিক্ষানবিশকালে বেতন-ভাতার দাবিতে বগুড়া নাসিং ও মিডওয়াইফারি কলেজের নার্সরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল চত্বরে মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক নার্স এই কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচিতে নার্সরা জানান, তিন বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা পাস করে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল, সদর হাসপাতালে ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) নার্স হিসেবে তারা কর্মরত রয়েছেন। ইন্টার্ন করা অবস্থায় তারা কোনো প্রকার বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। নেই থাকার ব্যবস্থাও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজার, বাসা ভাড়া, থাকা-খাওয়া, যাতায়াতসহ অন্যান্য খরচ মিটিয়ে তারা আর চলতে পারছেন না। এই অবস্থায় ইন্টার্নশিপ করাটা তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে একাধিকবার জানানোও হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। তাই বাধ্য হয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করেছেন। দেশের ৪৬টি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইন্টার্ন নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিআইএনএ) ব্যানারে এই কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে।
ইন্টার্ন নার্স ফারিহা রহমান নেহা বলেন, আমাদের নতুন সিলেবাস অনুযায়ী ছয় মাসের ইন্টার্ন দেওয়ার কথা আছে। না হলে আমরা লাইসেন্স পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারব না। সব ওয়ার্ডভিত্তিক সাইন নিতে হবে। কিন্তু এই পরীক্ষা গত বছর থেকে বন্ধ আছে। আর আমাদের লগবুকের ১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে, ইন্টার্নে একদিন যদি অনুপস্থিত থাকি, তাহলে আমাদের বেতন থেকে তা কেটে নেওয়া হবে। কিন্তু আমরা তো বেতনই পাই না। আমরা যেখানে বেতন পাই না, তাহলে টাকা কেটে নেওয়া হবে কোথা থেকে। আমাদের আগের ব্যাচ পায়নি, তার আগের ব্যাচেরও কেউ পায়নি। এটা জানার পর থেকে আমরা কর্মবিরতিতে নেমেছি।
কোহিনুর আকতার নামে আরেক ইন্টার্ন নার্স বলেন, আমরা চাইলে ভালো খাবার খেতে পারছি না। একটা ভালো বাসস্থান নিতে পারছি না। নিম্নমানের বাসা নিয়ে থাকতে হচ্ছে। নিরাপত্তাও ভালো না। আমাদের দাবি একটাই। আমরা ভাতা চাই, না হলে ইন্টার্ন বাতিল চাই। বিডিআইএনএর বগুড়া শাখার সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নির্জনা আলম দাবি করেন, ভাতা পেলে তারা সেবার মান আরও বাড়াতে পারবেন।
তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের টাকায় বাইরে থাকা লাগছে। আমরা এতদিন স্টাইপেন (শিক্ষাবৃত্তি) পেয়ে এসেছি। যেহেতু তিন বছর আমরা স্টাইপেন পাইছি, নিজেদের খরচ কিছুটা চালাতে পারছি। কিন্তু এখন ইন্টার্ন অবস্থায় আমরা কিছু পাই না। এ কারণে আমরা অনেক ধরনের সমস্যায় আছি। আমরা ন্যূনতম খাবারটুকুও পাই না। সবাই পাচ্ছেন, বিএসসি নার্স, ডাক্তাররা পান। এটা আমাদের ন্যায্য দাবি। এই ভাতা পেলে আমরা সেবার দিকে আরও বেশি অগ্রসর হতে পারবো।
কর্মসূচির বিষয়ে বিডিআইএনএর বগুড়া শাখার দপ্তর সম্পাদক হাসিন তাওফিক বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হিসেবে ১ অক্টোবর থেকে আমাদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। আমরা যেহেতু কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় আছি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা রয়েছে আমাদের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের সকল হাসপাতালের সামনে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি, মিছিল হবে।
বিডিআইএনএ বগুড়া শাখা সূত্র জানায়, মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে ডিপ্লোমা নার্স আছেন ৮১ জন। আর ডিপ্লোমা মিডওয়াইফ আছেন ২৫ জন। তারা সবাই এই কর্মবিরতিতে অংশ নেন। একই দাবিতে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বগুড়া নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরাও কর্মবিরতি পালন করেন।