প্রথম নিউজ, ঢাকা : বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে এবারে ভর্তি করাবার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর অবস্থার এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উন্নতিই হয়নি। আসলে বর্তমানে তাঁর যে অবস্থা তাতে দেশে চিকিৎসার সুযোগ নাই বললেই চলে। জীবন বাঁচাতে হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নিতেই হবে। চিকিৎসকরা তাঁকে অনতিবিলম্বে সিঙ্গাপুর কিংবা থাইল্যান্ডে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তাঁর রোগ ও শারিরীক অবস্থার কথা প্রচার করা না হলেও আমি সাংবাদিকতার কলাকৌশল প্রয়োগে বিভিন্ন ভাবে খোঁজ খবর করে নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি তাঁর পুরনো জটিল রোগগুলো ছাড়াও ডিকমপেন্স্যাটেড লিভার সিরোসিস-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এটা সম্ভবতঃ NASH (Non alcoholic steato hepatitis) অর্থাৎ ফ্যাটি লিভার থেকে হয়ে থাকতে পারে। এখন এর দু'টি মাত্র চিকিৎসা: স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন থেরাপি এবং তাতেও কাজ না হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা। এর কোনোটিই বাংলাদেশে সম্ভব নয় এবং করার সুযোগ নেই।
আমি যতদূর জেনেছি, শরীর থেকে রক্ত যেতে যেতে তাঁর হিমোগ্লোবিন একেবারে কমে গেলে এবং রক্তবমি হতে থাকলে তাঁকে এবার হাসপাতালে নেয়া হয়। ডাক্তারেরা এন্ডোস্কপি করে তাঁর লিভার সিরোসিস শনাক্ত করেন। তাঁর দেহে দফায় দফায় রক্ত দেয়া হয় এবং তাঁর বড় হয়ে যাওয়া রক্তনালী এন্ডোস্কপির মাধ্যমে Oesophageal Band ligation করা হয়েছে এবং সিসিইউ-তে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এর বেশি কিছু বাংলাদেশের ডাক্তারদের করার নাই বলেই জানানো হয়েছে।
বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ এবং হার্ট, কিডনি ও চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি নিয়মিত চিকিৎসাধীন ও চিকিৎসকদের তদারকিতে ছিলেন। তাঁকে জেলে নেয়ার পর সব বন্ধ হয়ে যায়। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হতে থাকে, তার অবস্থারও গুরুতর অবনতি ঘটে। বারবার দাবি সত্বেও তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত হাসপাতালে নিতে দেয়া হয়নি। এ অভিযোগ বরাবর করা হয়েছে এবং এটি এখন পুরনো।
পরিস্থিতি খুব জটিল হয়ে দাঁড়ালে এবং বেগম জিয়ার শারিরীক পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হলে সরকার তাঁকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা করাবার সুযোগ দেয়। কিন্তু যখন দেয়া উচিত ছিল তখন না দিয়ে তারা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতির জন্য অপেক্ষা করেছে বলেই বেগম খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে।
এরপর তিনি করোনায় আক্রান্ত হলে তাঁর দেহের অন্যান্য অর্গান ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং রোগগুলোও আরো জটিল হয়ে ওঠে। এবার শনাক্ত হলো আরও জটিল ব্যাধি - লিভার সিরোসিস। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে তাঁর চিকিৎসা অসম্ভব। এখন বিদেশে সবগুলো রোগের সমন্বিত চিকিৎসার সুযোগ সম্বলিত কোনও হাসপাতালে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করাতে না পারলে বেগম জিয়ার জীবন রক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যে কোনও সময়ে লিভার ফেলিওর এবং লিভার ক্যান্সারের দিকে মোড় নেয়ার প্রবল ঝুঁকিতে আছেন তিনি। কেননা তাঁর বয়সটাও অনুকূল নয়।
আমি জাতীয় স্বার্থে ও মানবিক প্রয়োজন বিবেচনা করে আমার প্রাপ্ত লেটেস্ট আপডেট জানালাম। সাংবাদিক বন্ধুগণ তাদের সূত্র থেকে এর সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন। তাঁর ব্যাপারে সরকার এখনো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে পরিস্থিতির গুরুত্ব দ্রুত অনুধাবন করতে হবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাবেক প্রেস সচিব বিএনপি চেয়ারপার্সন
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: