বাখমুতে কোণঠাসা ইউক্রেন, ফুরিয়ে যাচ্ছে গোলা-বারুদ

শহরটির ৯০ শতাংশেরও বেশি এলাকা দখলে নিয়ে নিয়েছে রাশিয়ার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ওয়াগনার। শহরের একদম পশ্চিম প্রান্তের অল্প কিছু ভবনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইউক্রেনের কাছে।

বাখমুতে কোণঠাসা ইউক্রেন, ফুরিয়ে যাচ্ছে গোলা-বারুদ

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: ইউক্রেন যুদ্ধের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধটি চলছে বাখমুত (আর্তিমোভস্ক) শহরে। যদিও এই শহর এখন পতনের দ্বারপ্রান্তে। শহরটির ৯০ শতাংশেরও বেশি এলাকা দখলে নিয়ে নিয়েছে রাশিয়ার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি ওয়াগনার। শহরের একদম পশ্চিম প্রান্তের অল্প কিছু ভবনের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ইউক্রেনের কাছে। এরইমধ্যে তীব্র গোলা সংকটে ভুগছে দেশটি। বাখমুত থেকে সরাসরি পাঠানো এক রিপোর্টে সেই সংকটের কথা তুলে ধরেছেন বিবিসির প্রতিরক্ষা সংবাদদাতা জনাথন বিল।

তিনি জানান, তার কাছে সেখানে যুদ্ধরত ইউক্রেনীয় সেনারা গোলা সংকটের কথা জানিয়েছেন। একটি ইউনিটের প্রধান ভলোদিমির তাদের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তাদের বিএম-২১ লঞ্চারে একসঙ্গে ৪০টি গোলা ছোঁড়া যায়। কিন্তু তারা মাত্র কয়েকটি করে গোলা লোড করতে পারছেন। ভলোদিমির কোনো রাখঢাক না রেখে সরাসরি বললেন, আমাদের কাছে যথেষ্ট গোলা নেই। কিন্তু পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুত শহরে কোণঠাসা হয়ে পড়া ইউক্রেনীয় সৈন্যদের সাহায্যের জন্য তার সপ্তদশ ট্যাংক ব্যাটালিয়ন ইউনিটের নিয়মিত ডাক পড়ে।

বিবিসি জানিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে রাশিয়া ইউক্রেনের কৌশলগত-ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শহরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। এখনও সেই লড়াইয়ের জয়-পরাজয়ের ফয়সালা হয়নি, তবে রুশরা এখন তাদের লক্ষ্যের কাছাকাছি। ইউক্রেনের গ্রাড রকেটের মজুদ প্রায় শেষের পথে। তাদেরকে এখন অন্য দেশ থেকে আসা সরবরাহের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ভলোদিমির জানালেন, সেই গোলা এখন আসছে চেক বিপাবলিক, রুমানিয়া এবং পাকিস্তান থেকে। তিনি বলেন, পাকিস্তান থেকে যেগুলো আসছে সেগুলোর মান ভালো নয়। তবে তারা সেগুলো ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছেন কারন তাদের আর কোনো উপায় নেই।

যুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, অস্ত্র ও গোলার জন্য ইউক্রেন তত বেশি অস্থির হয়ে পড়েছে। ইউক্রেন গোলা সংকটে পড়লেও রাশিয়ার গোলা ছোড়ার মাত্রা আগের মতোই রয়েছে। ফলে রাশিয়ার অগ্রগতি ঠেকানো যাচ্ছে না। পশ্চিমা মিত্ররা যদিও গত কয়েক মাসে ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণ ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান সরবরাহ করেছে। আসছে আধুনিক অস্ত্রও। তবে ইউক্রেন এখনও সোভিয়েত জমানার অস্ত্র-গোলা-বারুদের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ইউক্রেনীয় কম্যান্ডার সেরহি বলেন, এই যুদ্ধ দীর্ঘ দিন ধরে চললে, তা সামাল দেয়ার ক্ষমতা ইউক্রেনের থাকবে না।

এ মাসের প্রথম দিকে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোপন নথিতে ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর বিস্তারিত গোয়েন্দা তথ্য এবং বিশ্লেষণ রয়েছে। এতে ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্রের চরম ঘাটতির কথা রয়েছে মার্কিন ঐ নথিতে। সেরহি জানান, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা সচল রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়, কিন্তু আমাদের কাছে সেগুলো নেই। কারণ যেসব কারখানায় এসব যন্ত্রাংশ তৈরি হয় সেগুলো ইউক্রেনে নয়।

আরেক সেনা কম্যান্ডার জোসেফের মতে, আমেরিকার গোপন নথিতে এমন কিছু নেই যেগুলো রাশিয়ার অজানা। তিনি মনে করেন ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর ক্ষমতা সম্পর্কে রাশিয়া সবসময়ই অবগত আছে। তবে রাশিয়া জানেনা কোথায় এবং কখন ইউক্রেনীয়রা পাল্টা হামলা চালাবে। যেহেতু ফ্রন্টলাইন প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ, তাই ইউক্রেন অতর্কিতে হামলা চালিয়ে সুবিধামতো কোনো একটি এলাকা দখল করে নিতে পারে। কিন্তু সেই পাল্টা হামলার জন্য ইউক্রেনের আরও অস্ত্র এবং সরঞ্জাম দরকার। 

গ্রাড কম্যান্ডার ভলোদিমির বিবিসির সংবাদদাতাকে বলেন, দেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, অর্থনীতির অবস্থাও বেহাল। তার ভয় এ বছর যদি যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেন বড় কোনও সাফল্য না দেখাতে পারে, তাহলে পশ্চিমা সাহায্য কমে যাবে। তিনি বললেন, আমাদের ভয় হচ্ছে যে পশ্চিমা মিত্ররা আমাদের সাহায্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।