বিএনপির ৩৬৪ আইনজীবীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা
এতে ১৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাপ উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে মামলা করেন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী ৩৬৪ আইনজীবীর বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে। এতে ১৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ৩৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলায় পুলিশের ওপর হামলা ও ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাপ উদ্দিন মাহমুদ বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়,আসামীরা এলোপাতারি মারধর করে পুলিশের ব্যবহৃত সরকারী ৩টি হেলমেট ও ২ টি ঢাল ভেঙ্গে অনুমানিক ৩০ হাজার টাকার ক্ষতিসাধন করে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে বিভিন্ন সাইজের ৮টি বাশের লাঠি, বিভিন্ন সাইজের ৩টি কাঠের লাঠি, ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের ১০টি ইটের টুকরো, ৩টি ভাঙ্গা হেলমেট ও ২ টি ভাঙ্গা প্লাস্টিকের ঢাল জব্দ করা হয়।
তবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বুধবার সুপ্রিম কোর্টে পুলিশের মারধরের শিকার হন অন্তত ১০ সাংবাদিক। তারা অভিযোগ করেন, পুলিশ তাদের ঘিরে ধরে লাথি দিয়েছে ও লাঠিপেটা করেছে। ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় কয়েকজন সাংবাদিকের বুম, মুঠোফোনও কেড়ে নেন তারা। তবে পুলিশের করা মামলায় সাংবাদিকদের মারধর করার কোনো তথ্য নেই। মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে- ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, এডভোকেট মো. মনজুরুল আলম সুজন, মাহফুজ বিন ইউসুফ, নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ, মাহদিন চৌধুরী, গোলাম আকতার জাকির, কামরুল ইসলাম, মোক্তার কবির খান, আশরাফ উজ জামান খান, সালাহ উদ্দিন রিগ্যান, কাজী জয়নাল আবেদীন, মাহবুবুর রহমান খান।
মামলায় বাদীর অভিযোগ, বুধবার সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে নির্বাচন উপলক্ষে দায়িত্ব পালনকালে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী, মামলার ১ নম্বর আসামি মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং ২ নম্বর আসামি ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। নির্বাচনী কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করতে আক্রমণাত্মক আচরণ শুরু করেন তারা। পরে নির্বাচন কমিশন, আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী ও সাধারণ ভোটাররা পুলিশের সহযোগিতা চান। পুলিশ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করে। এ সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থী ও আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল শুরু হয়। পুলিশ উভয় পক্ষের আইনজীবীদের ভোটকেন্দ্র ফাঁকা করে ভোট দেয়ার পরিবেশ তৈরির অনুরোধ করে। পরে ভোট গ্রহণ স্বাভাবিক হয়। বেলা ৩টার দিকে আসামিরা লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়ে নির্বাচনী প্যান্ডেল এবং ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এলোপাতাড়ি আঘাত করে।
এজাহারে বলা হয়, গত ১৫ মার্চ সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে শাহবাগ থানাধীন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশন ২০২৩-২৪ এর নির্বাচনের প্রথম দিন সকাল ৯টায় নির্বাচন কমিশন কার্যক্রম শুরু করতে যায়। তখন বিএনপি-জামায়াতপন্থী ১নং আসামী ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন এবং ২নং আসামী রুহুল কুদ্দুস কাজল নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দিয়ে আইনজীবীদেরকে নিয়ে নির্বাচন কার্যক্রমে বাধার সৃষ্টি করতে আক্রমনাত্মক আচরন শুরু করতে থাকে। এ সময় নির্বাচন কমিশনের সকল সদস্য ও আওয়ামীপন্থী আইনজীবী মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির (সভাপতি প্রার্থী) এবং মো. আব্দুর নূর দুলাল (সাধারাণ সম্পাদক প্রার্থী) সহ সাধারণ আইনজীবী ভোটারগন পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেন। উক্ত সময় ডিসি সুপ্রীম কোর্ট ও ডিসি রমনা বিভাগ উক্ত বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার এর উর্ধ্বতন অফিসারগণের সাথে আলোচনা করে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেন। উক্ত সময়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী ও আওয়ামী পন্থী আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক হট্টগোল শুরু হয়। পুলিশ উভয় পক্ষের আইনজীবীদের অডিটোরিয়াম হল ফাঁকা করে ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট প্রদানের পরিবেশ তৈরির অনুরোধ করেন।
এক পর্যায়ে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক ভাবে চলতে থাকে। পরবর্তীতে শান্তিপূর্ন ভাবে ভোট গ্রহণ চলাকালে একই তারিখ বিকাল অনুমান ৩টা ৫মিনিটে ১নং আসামী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং ২নং আসামী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এর নেতৃত্বে বর্ণিত আসামীগনসহ অজ্ঞাতানামা আসামীদের সহায়তায় লাঠি শোঠা, ইট পাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রসহ হঠাৎ করে সরকার বিরোধী, রাষ্ট্র বিরোধী এবং উক্ত নির্বাচন বিরোধী বিভিন্ন শ্লোগান দিয়ে হঠাৎ করে নির্বাচনী প্যান্ডেল ও ভোট গ্রহণ কক্ষ (অডিটোরিয়াম) ব্যাপকভাবে ভাংচুর করতে থাকে। তথায় উপস্থিত ডিসি সুপ্রীম কোর্ট ও ডিসি রমনার নেতৃত্বে এডিসি সুপ্রীম কোর্ট, এডিসি (রমনা জোন), এসি (রমনা জোন), এসি (প্যাট্রোল রমনা), এসি (নিউমার্কেট জোন), এসি (ধানমন্ডি জোন), ওসি শাহবাগ থানা, ইন্সপেক্টরগণের উপর বল প্রয়োগ করে আক্রমনাত্মক হয়ে আসামীদের হাতে থাকা লাঠি ও ইট পাটকেল দিয়ে এলোপাতারি আঘাত করিতে থাকে। একপর্যায়ে আসামীদের আঘাতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (রমনা জোন) হারুন অর রশিদের ডান হাতের উপর ছিলা জখম প্রাপ্ত হয়।
সিনিয়র-সহাকারী পুলিশ কমিশনার (রমনা জোন) মো. বায়েজীদুর রহমানের শরীরের বাম কাঁধে নীলাফুলা জখম প্রাপ্ত হয়। তার র্যাংক ব্যাজ ছিড়ে ফেলে। সিনিয়র-সহাকারী পুলিশ কমিশনার (ধানমণ্ডি জোন) আ. আল মাসুমের শরীরের বিভিন্ন জায়াগায় কিল ঘুষি মারে। পোষাকের রিবন ছিড়ে ফেলে। সহকারী পুলিশ কমিশনার (নিউমার্কেট জোন) শরীফ মোহাম্মদ ফারুক উজ্জামানের কোমড়ে আঘাত করে ও ইউনিফর্ম প্যান্টের বেল্ট ছিড়ে ফেলে। পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহবাগ থানা মো. মাহফুজুল হক ভূঞার মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়। শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. গোলাম মোস্তফার বাম হাতের কব্জিতে নীলাফুলা জখমপ্রাপ্ত হয়। নায়েক মো. বাকি বিল্লাহ, এসটিএফ ২ কোম্পানী, পিওএম পূর্ব বিভাগ, ডিএমপি, ঢাকা নাকে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম প্রাপ্ত হয়। ১ থেকে ১৪নং আসামীসহ অজ্ঞাতনামা আসামীরা একই উদ্দেশ্যে বেআইনী জনতাবদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে পুলিশের সরকারী কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে সাধারণ ও গুরুতর আঘাত করে সরকারী হেলমেট ঢাল ভাংচুর করে পেনাল কোড ১৪৩/১৪৯/১৮৬/৩৩২/৩৩০/৩৫৩/৮২৭/০৬/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছেন। বর্তমানে আহত পুলিশ সদস্য রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। আহত অন্যান্য পুলিশ অফিসারগণ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর আগে বুধবার ভোট গ্রহণের প্রথম দিন ব্যালট পেপার চুরি ও ছিঁড়ে ফেলা এবং নির্বাচনসংক্রান্ত আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বাইরে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সমিতির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুজ্জামান একটি মামলা করেন। এ মামলায় বিএনপিপন্থী আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কামরুল হাসান সজলসহ ১২ জন আইনজীবীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: