প্রশ্নের সমাধান সাবস্ক্রাইব করলেই মিলছে
গত ৩ জুলাই থেকে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করলেই মিলছে মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার প্রশ্নসহ সমাধান। গত ৩ জুলাই থেকে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নপত্রে কী থাকবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। তাই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্নপত্র খুঁজতে থাকেন।
সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু ইউটিউব চ্যানেল ‘সাবস্ক্রাইব’ করার বিনিময়ে পরীক্ষার আগের রাতে এনসিটিবি তৈরিকৃত প্রশ্ন হুবহু সমাধান দেওয়া শুরু করে। নতুন কারিকুলাম সংক্রান্ত বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে ইউটিউব লিংক দিয়ে বলা হয়, ‘ প্রিয় শিক্ষার্থীরা সাবস্ক্রাইব করুন, তাহলেই ইউটিউবে গিয়ে প্রশ্নসহ সমাধান পাবেন।’ ফলে শিক্ষার্থীরাও প্রশ্নের খোঁজে রাত জেগে ইউটিউব ও ফেসবুকে থাকছেন। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে ইউটিউব চ্যানেলের সংখ্যা।
তেমনি একটি চ্যানেল ‘ওয়ান আওয়ার স্কুল’। ওই চ্যানেলে গিয়ে দেখা যায় পরীক্ষার আগেই ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি প্রশ্ন সমাধান সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছাড়া হয়েছে। এভাবে অনেক চ্যানেলে পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্নের সমাধান দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সেই সমাধান মুখস্ত করেই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। ফলে নতুন কারিকুলামে সৃজনশীলতার যে কথা বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উল্টো শিক্ষার্থীরা নকলের মতো কাজে অভ্যস্ত হচ্ছেন।
কিছু ব্যক্তি টাকা উপার্জনের জন্য প্রশ্নপত্র বাহিরে নিয়ে তা সমাধান করে ইউটিউবে ছেড়ে দিচ্ছেন। বিষয়টি নজরে এসেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানেরও (রুটিন দায়িত্ব)। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অসাধু চক্র ফেসবুক ও ইউটিউবে নানাভাবে মাধ্যমিকের ভুলভাল প্রশ্নের সমাধান দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা অসচেতনতা বশত সেই সমাধান নোট করছেন। মূলত নিচু মানসিকতার মানুষরা এই কাজটি করছেন। তবে বিষয়টিগুলো আমরা তদারকি করছি। যারা এসব কাজ করছে অধিদপ্তরকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে. নতুন কারিকুলামে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস থামছেই না। যদিও এনসিটিবি চেয়ারম্যান ও শিক্ষামন্ত্রী প্রশ্নফাঁস বিষয়টি মানতে নারাজ। তবে অভিভাবক ও অনেক শিক্ষক বিষয়টিকে প্রশ্নফাঁস বলেই ধরে নিচ্ছেন। কারণ পরীক্ষার আগের দিন রাতেই শিক্ষার্থীরা পরের দিনের পরীক্ষার প্রশ্ন হুবহু পেয়ে যাচ্ছে। ফলে মূল্যায়নের নামে তামাশা হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
অভিভাবকদের মতো নতুন চালু হওয়া মূল্যায়ন ব্যবস্থায় হতাশ শিক্ষকরাও। শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে উদ্দেশ্যে এই কারিকুলাম তৈরি করেছে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে মনে করছেন তারা। মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য সুদূরপ্রসারী হলেও যে সিস্টেমে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন কিছু শেখার বদলে নকল শিখতেছে। আর আমাদের তা দেখতে হচ্ছে, যেটা খুবই দুঃখজনক।
শিক্ষকরা অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কী মূল্যায়ন করব সেটাই বোঝা কঠিন। কারণ শিক্ষার্থীরা ফেসবুক ও ইউটিউব কল্যাণে আগেই প্রশ্নসহ সমাধান পেয়ে যাচ্ছে। সেই সমাধান পরীক্ষায় খাতায় লিখে দিচ্ছে। এতে কার্যত শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ক্ষতি হচ্ছে। আগে অন্তত আমরা অনেকগুলো বিষয় পড়িয়ে সেখান থেকে প্রশ্ন করতাম৷ শিক্ষার্থীরা তখন নানা বিষয় জেনে পরীক্ষা দিত। এতে অনেক কিছু আয়ত্ত্ব করতে পারত। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। তাই আমরাও হতাশ।