নির্বাচনের আগে দল গোছাতে চায় বিএনপি

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) কাজ করার জন্য এসেছে। সেই কাজ করার সুযোগ তাদেরকে দিতে হবে।

নির্বাচনের আগে দল গোছাতে চায় বিএনপি

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকার পতনের একদফা দাবি ছিল বিএনপি’র। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সেই দাবি পূরণ হয়েছে। কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন নেতাকর্মীরা। সমাবেশসহ কর্মসূচি করতে লাগছে না অনুমতি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সামনে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হবে। এমন অবস্থায় দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি দল গুছানোর দিকে নজর দিচ্ছে বেশি। পাশাপাশি এই সময়ে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে দলটি। বন্যাসহ বিভিন্ন সমস্যায় জনগণের পাশে থেকে জনসমর্থন বাড়াতে চাইছে বিএনপি। তৃণমূলে বিভেদ-বিভক্তি থাকলে সেটাও দূর করার চেষ্টা করবেন নেতারা। 

বিএনপি’র ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে দলটির ৩ জন শীর্ষ নেতা এবং ৫ জন তৃণমূলকর্মী বলেন, বিএনপি এখন দল গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করতে চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর বিভিন্ন স্থানে দলের নেতাকর্মীদের অশোভন আচরণ দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ সংগঠনের শৃঙ্খলাপন্থি কাজে জড়িত হচ্ছেন। দলীয় হাইকমান্ড এমন সব নেতাকর্মীদের কঠোর নজরে রেখেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বার্তা দেয়া হয়েছে।  

যেখানেই দ্বন্দ্ব ও কোন্দল দেখা দিবে, সেখানে শৃঙ্খলা ও ঐক্য ফেরাতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে দলটি। ইতিমধ্যে সেই কাজ শুরু করেছেন নেতারা। 

সম্প্রতি ফরিদপুরে বিএনপি’র দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন মারা গেছে। আহতও হয়েছে বেশ কয়েকজন। কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের নিজ এলাকায় আগমনকে কেন্দ্র করে নগরকান্দায় উপজেলা সদরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বাধা সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও বাবুলের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শামা ওবায়েদ ও বাবুলের পদ স্থগিত করে বিএনপি। এ ছাড়া দখলবাজি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতাকেও বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি’র রাজনীতি বাংলাদেশের জনগণকে নিয়ে। তাদের ভালোবাসা এবং আস্থা নিয়ে আমরা রাজনীতি করি। আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করতে চাই। আর আমরা এখন দলের সাংগঠনিক কাজ করছি। এটা চলমান থাকবে। এর বাইরে নির্বাচনের জন্য আমরা সরকারকে সময় বেঁধে দিতে চাই না। 

স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা দলের রাজনীতি এবং সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাবো। পাশাপাশি নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবো এবং বন্যার্তদের সহযোগিতা করছি এবং এটা চলমান থাকবে। আর দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রোডম্যাপের কথা বলছি। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করবো। কারণ ঐক্যবদ্ধ থাকাই আমাদের মূল প্রয়াস।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা এখন দল গোছানোর কাজ করবো। আর নির্বিঘ্নে যাতে কাজ করতে পারি এবং মুক্তভাবে শ্বাস নিতে পারি, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে।

ওদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়ার পর থেকেই তাদেরকে সময় দেয়ার কথা বলছে বিএনপি। তবে সম্প্রতি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে দলটি। এজন্য একটি রোডম্যাপ ঘোষণারও দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট করে সময় বেঁধে দিতে চায় না বিএনপি। নেতারা বলছেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব নয়। কারণ কয়েকজন মিলে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে তা কার্যকর হবে না। এজন্য জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দরকার। তবে এই সরকার কিছু সংস্কার করতে পারে বলেও মনে করছে বিএনপি।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই সরকার (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) কাজ করার জন্য এসেছে। সেই কাজ করার সুযোগ তাদেরকে দিতে হবে। এজন্য যৌক্তিক সময় তাদেরকে দিতে হবে। সেটা অবশ্যই একটা যৌক্তিক সময় পর্যন্ত হতে হবে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সেই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবশ্যই একটা নির্বাচন দিতে হবে।