নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা: চুয়াডাঙ্গায় ৬ জন আহত, মাগুরায় ৩৭ বাড়ি ভাঙচুর
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি ধারালো অস্ত্র (হাসুয়া), দুটি মোটরসাইকেল ও একটি অবৈধ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত আলমসাধু জব্দ করেছে।
প্রথম নিউজ ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নে নির্বাচন পরবর্তী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শুকুর আলী ও আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (বিদ্রোহী) মিজানুর রহমান টিপুর সমর্থকদের মধ্যে এই ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের দুজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। আহত হয়েছেন নারীসহ উভয়পক্ষের আরও চারজন। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৭টা থেকে ১১টার মধ্যে দুই দফায় এ ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক রাজশাহী রেফার করেন।
এদিকে, খবর পেয়ে দর্শনা থানা ও তিতুদহ ক্যাম্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি ধারালো অস্ত্র (হাসুয়া), দুটি মোটরসাইকেল ও একটি অবৈধ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত আলমসাধু জব্দ করেছে। কা প্রতীকের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর আহত দুই সমর্থক হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ মের দক্ষিণ পাড়ার হাতেম আলী ছেলে হোসেন আলী (৫০) এবং একই এলাকার আছের উদ্দিনের ছেলে শামীম (৩০)। আহতরা নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের সমর্থক বলে নিশ্চিত করেছেন। স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর আহত চার সমর্থক হলেন, তিতুদহ ইউনিয়নের ৬২ আড়িয়া গ্রামের বসতিপাড়ার মৃত আব্দুর রহমানের দুই ছেলে আওলাদ হোসেন (৫৫), জাহাঙ্গীর হোসেন (৫০), জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪০) ও একই এলাকার আহাদ আলীর ছেলে শিমুল (১৮)। আহতরা আনারস প্রতীকের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যানের সমর্থক বলে নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ৮টার দিকে দুটি মোটরসাইকেল ও একটি আলমসাধুযোগে ১০-১৫ জন হামলাকারী ৬২ আড়িয়া গ্রামের জাহাঙ্গীরের বাড়িতে লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় জাহাঙ্গীরকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। হামলাকারীরা জাহাঙ্গীরের ভাই ও স্ত্রীকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এ সময় প্রতিবেশী শিমুল প্রতিবাদ করলে তাকেও বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। আহতদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এলে হামলাকারীরা সটকে পড়ে। পরে এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে বাকিরা পালাতে পারলেও ধরা পড়ে হোসেন আলী ও শামীম। পরে তাদের দুইজনকে আটক করে উত্তমমধ্যম দেয় স্থানীয়রা। এ সময় হোসেনকেও এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে এলাকাবাসী। আহতদেরকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। বিশৃঙ্খলা এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এ ঘটনায় পুরো ইউনিয়নজুড়ে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা।
নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শুকুর আলী বলেন, আমার কোনো সমর্থক হামলার সাথে জড়িত নয়। আমার দলে কোনো উচ্ছৃঙ্খল লোকজনের জায়গা নেই। যদি কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে তার নিন্দা জানাই। প্রকৃত হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে জানতে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (বিদ্রোহী) মিজানুর রহমান টিপুর মুঠোফোনে কল করে বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফুল কবির বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় উভয়পক্ষের দুজনকে কুপিয়ে ও চারজনকে পিটিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৫টি ধারালো হাসুয়া, দুটি মোটরসাইকেল ও একটি আলমসাধু জব্দ করে থানায় নিয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মাগুরা: মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় সামাজিক দলাদলি ও সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনপরবর্তী সহিংসতাকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৩৭টি বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় দুজনকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) শ্রীপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের চর-গোয়ালপাড়া ও সাহেবপাড়া গ্রামে শ্রীপুর ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিয়ার রহমান মন্ডলের বাড়িসহ তার সমর্থকদের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। একালাবাসী জানান, গত ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩ নং ওয়ার্ডে টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে সদস্য পদে বিজয়ী হন শ্রীপুর ইউনিয়ন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান। সদস্য পদে মোরগ প্রতীক নিয়ে বিএনপি সমর্থক মন্নু মন্ডল পরাজিত হন। এরপর থেকেই সিরাজ মন্ডল ও মন্নু মন্ডলের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগে আছে।
তারা জানান, ৩ নং ওয়ার্ডের পরাজিত সদস্য প্রার্থী মন্নু মন্ডল ও তার সহযোগী সিরাজ মন্ডলের সমর্থকরা একজোট হয়ে এই হামলা চালিয়েছেন বলে বদিয়ার রহমান দাবি করেছেন। সংঘর্ষ চলাকালে রোকেয়া বেগম নামের এক নারী আহত হয়েছেন। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) প্রথমে বেলা ১টার দিকে এবং পরে বিকেল আড়াইটার দিকে দুই দফায় এ হামলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শ্রীপুর থানা পুলিশ প্রথমে হিমশিম খায়। পরে মাগুরা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সরেজমিনে দুটি গ্রামে দেখা গেছে, অধিকাংশ ঘরের টিনের বেড়া রামদা দিয়ে কুপিয়ে নষ্ট করা হয়েছে। এ সময় এলাকায় কোনো পুরুষ লোকের দেখা পাওয়া যায়নি। শুধু নারীরাই তাদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশের আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মতো।
বদিয়ার রহমান মন্ডল বলেন, বুধবার বেলা ১টার দিকে সিরাজ মন্ডল ও মন্নু মন্ডল নেতৃত্ব দিয়ে তার লোকজনকে দিয়ে আমার সমর্থকদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করে। আমি থানায় ফোন করলে পুলিশ এসে তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু এরপর আবার বেলা আড়াইটার দিকে পার্শ্ববর্তী তিন গ্রাম থেকে লোক এনে আমার সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর চালানো হয়। মোট ৩৭টি বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার তারা আমার সমর্থক হাবিলকে বেদম মারধর করে। তবে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ নাকচ করে দিয়ে শ্রীপুর উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ৪ নং শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত চেয়ারম্যান মসিয়ার রহমান বলেন, ঘটনাটি অন্য গ্রামের। সেখানে আমার কোনো লোকজন যায়নি। ওখানে বিএনপির লোকজনের সাথে তাদের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে আমার সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রশ্নই আসে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার বেলা ১২টার দিকে বদিয়ার মন্ডলের প্রতিপক্ষ জাহাঙ্গীর হোসেন শ্রীপুর থেকে মোটরসাইকেল যোগে সাহেবপাড়া গ্রামে নিজ বাড়িতে আসার পথে বদিয়ার মন্ডলের সমর্থকেরা তাকে কুপিয়ে আহত করে। আহত অবস্থায় তাকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে পরে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। মতামত জানতে অভিযুক্ত মন্নু মন্ডল ও সিরাজ মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। এ সময় তাদের বাড়িতে কোনো নারীরও দেখা মেলেনি। শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুক দেব রায় বলেন, এখন মাঠে আছি, 'নো কমেন্ট'।
বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন মাগুরা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) কামরুল হাসান। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অফিসিয়াল কোনো কমেন্ট করতে পারছি না। তবে মাগুরা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে এখানে মোতায়েন করা হয়েছে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: