দৌলতদিয়ায় ভাঙন আতঙ্কে বাড়ি, ফসলি জমি ও লঞ্চঘাট

গত এক সপ্তাহে এই নদীতে প্রায় ৪ ফুট পানি বেড়েছে। সেই সাথে স্রোত বেড়ে প্রায় প্রতিদিনই নদীর পাড় ভাঙছে।

দৌলতদিয়ায় ভাঙন আতঙ্কে বাড়ি, ফসলি জমি ও লঞ্চঘাট

প্রথম নিউজ, রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া পয়েন্টে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পানি বাড়তে থাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে এই নদীতে প্রায় ৪ ফুট পানি বেড়েছে। সেই সাথে স্রোত বেড়ে প্রায় প্রতিদিনই নদীর পাড় ভাঙছে। এতে করে ভাঙন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটসহ পাশ্ববর্তী এলাকার কয়েক শত পরিবারে।

স্থানীয়দের দাবি, নদী ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সামনে বর্ষার ভরা মৌসুমে উপজেলার অন্তার মোড় থেকে যদু ফকীর পাড়া ও দৌলতদিয়া ৭ নম্বর ফেরি ঘাটের পূর্বে ছাত্তার মেম্বর পাড়া পর্যন্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে স্থানীয়দের কথা বলে যায়, প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে পদ্মার তাণ্ডবে ওই অঞ্চলে ভাঙন দেখা দেয়। গত দশ বছরে পদ্মার ভাঙনে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের অর্ধেকটা ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের প্রায় তিন ভাগ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি ও তাদের ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের স্থাপনা। সেই সাথে দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট বার বার স্থানান্তর করতে হয়েছে।

বর্ষা মৌসুম এলেই সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ থেকে ভাঙন রোধে একাধিকবার নদী শাসনের আশ্বাস দেয়া হলেও বর্ষা শেষে কারো কোনো কিছুই মনে থাকে না বলে স্থানীয়রা আক্ষেপ করেন।

সোমবার (১৯ জুন) দুপুরে দেখা যায়, উপজেলার অন্তার মোড় থেকে যদু ফকীর পাড়া হয়ে দৌলতদিয়া ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্তার কাজীর পাড়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় নদীর পাড় ভাঙছে। এতে করে এ এলাকার প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ও শত শত একর জমি, দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাটের পন্টুন, ৪ নম্বর ফেরিঘাটে অবস্থিত একটি মসজিদ একেবারে ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এ সময় নদীর পাড় ভাঙন রোধে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক কিছু বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলতে দেখা গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম বলে জানা যায়।

এ সময় নদী পাড়ের বাসিন্দা হান্নান ফকীর, জোচনা বেগম, মরিয়ম বিবি, হালিম খাঁ, আব্দুল খাঁ, নান্নু শেখসহ প্রায় অর্ধশত আতঙ্কিত নারী-পুরুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতি বছর বর্ষায় নদী ভাঙন শুরু হলেই অনেক নেতা, মেম্বর চেয়ারম্যান, সরকারি-বেসরকারি নানান লোকজন এসে নদী বাঁধার কথা কয়। বর্ষা শেষে আর কেউ মনে রাখে না। এই ভাঙন শুরু হইছে এবার কোথায় যাব তার কোনো হিসাব নাই। বর্ষাকালে নদীর পাড়ে জিও ব্যাগ ফেলে প্রতিবছর সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু ভাঙনের স্থায়ী কোনো সমাধান হয় না। পরিকল্পনা করে ওই টাকা একবারে খরচ করলে ভাঙনের স্থায়ী সমাধান হতে পারত।

এ সময় তারা আক্ষেপ করে আরো বলেন, তিন বছর ধরে শুনছি সরকার এই এলাকার ভাঙন রোধে আমাদের এমপির প্রস্তাবে রাজি হয়ে বড় কাজের বাজেট করেছে। কিন্তু কেন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না তা জানতে পারলাম না। এ সময় গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মোল্লা বলেন, প্রতিবছর বর্ষায় এই দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এতে এই দুটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেকটা নদীগর্ভে চলে গেছে। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলে হয়ত লঞ্চ ও ফেরিঘাটগুলো সুরক্ষা পাবে।

ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার দায়িত্বে থাকা দৌলতদিয়াঘাট বিআইডব্লিউটিএর কারীগরি সহকারী মো: নাসীম হোসেন বলেন, পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘাট এলাকায় কয়েক দিন যাবত ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধের জন্য জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। এক প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ যখন নির্দেশ দেয় তখনই এই জিও ব্যাগ ফেলা হয়।