তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ‘ফরমায়েসী’ রায় জনগণ ঘৃণ্যভরে প্রত্যাখান করেছে: মির্জা ফখরুল

আজ বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ‘ফরমায়েসী’ রায় জনগণ ঘৃণ্যভরে প্রত্যাখান করেছে: মির্জা ফখরুল

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ‘ফরমায়েসী’ রায় জনগণ মানবে না তা ঘৃণ্যভরে প্রত্যাখান করেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

  মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরবলেন, আজকে ফরমায়েসী রায় সরকার প্রধানের হিংসা ও আক্রোসের বর্হিপ্রকাশ। দেশ জুড়ে যখন আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে, তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে বিভ্রান্ত করতে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের এটি একটি কুটচাল।এক দফার আন্দোলনকে নেতৃত্ব শূণ্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুর রেখে প্রতিহিংসা মেটানো হয়েছে। তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের মামলার ফরমায়েসী রায় জনগন মানে না। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। দেশের জনগন বিচারের নামে এই প্রহসন, এই ফরমায়েসী রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছে।”

অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার সাজার প্রত্যাহারের আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, ২০০৭ সালে তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের জরুরী সরকার প্রতিপক্ষ দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে জিয়া পরিবারকে হেয় ও রাজনৈতিক পরিমন্ডল থেকে ‍উচ্ছেদ করার গভীর চক্রান্তে মেতে বাংলাদেশে অগণিত মানুষের সমর্থন ধন্য দেশনায়েক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ রুপে মিথ্যা, বানোয়াট ও কল্পানিক অভিযোগেহ মামলাটি দিয়েছিলো।”

‘‘ কারণ তথাকথিত জরুরী সরকার ছিলো বর্তমান আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। জরুরী সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার নামে ১৫টি দুর্নীতি ও চাঁদাবাহীর মামলা করা হলেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় দখলের পর প্রধানমন্ত্রী পদে ক্ষমতা ব্যবহার করে অনুগত বিচারপতিদের দিয়ে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। অথচ তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের এই মামলা চলার মতো কোনো আইনগত ভিত্তি উপাদান না থাকা সত্ত্বেও হিংসা চরিতার্থ করার আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান দুদক দিয়ে শেখ হাসিনা তার নীল নকশা কার্য্কর করার জন্য জোড়াতালি দিয়ে প্রতিহিংসা পুরণের রায় বের করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘‘ এটা একেবারে পরিস্কার যে, সরকার তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দেয়া, আসন্ন নির্বা্চন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া এটাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”

‘‘আমরা বলতে চাই, এসব করে বিএনপির চলমান আন্দোলন দমানো যাবে না।প্রধানমন্ত্রী, আপনি হিংসার পথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের মজলুম নেতা তারেক রহমানকে নতজানু করতে পারবেন না।”

ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. আছাদুজ্জামান বুধবার এ মামলার রায়ে আয়ের বাইরে সম্পদের মালিক হওয়ার মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুই ধারায় ৯ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। আইনের দৃষ্টিতে পলাতক দুই আসামিকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারিরও আদেশ দিয়েছেন তিনি।

‘কর্মসূচি একটাই এক দফা’

রায়ের প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি দলের পক্ষ থেকে দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদের কর্মসূচি তো একটাই। এই সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত … একদফা দাবি এর মধ্যেই সব কিছু আছে। এরমধ্যে আপনারা দেখেছেন যে, সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে নেতা-কর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে মামলার অভিযোগে সম্পদের যেসব বিবরণী দাখিল করা হয়েছে মিথ্যা, কাল্পনিক, সাজানো ও ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব। মামলায় দৈনিক দিনকাল(বর্তমানে সরকার কর্তৃক ডিক্লারেশন স্থগিত ও প্রকাশনা বন্ধ)পত্রিকার সম্পদ ও মালিকানা তারেক রহমান নিজস্ব সম্পদ হিসেবে দেখানো হয়েছে মনগড়া ও উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

একই সঙ্গে তারেক রহমানের সহধর্মিনী ডা. জোবায়দা রহমানের মামলায় সম্পদ বিররণীতে ব্যাংকে গচ্ছিত দুইটি এফডিআরের অর্থ তারেক রহমানের জ্ঞাত আয়ের বর্হিভূত অর্থ দ্বারা খোলার কথা বলা হয়েছে যা প্রকৃত অর্থে জোবায়দা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘‘ ২০০৫ ও ২০০৬ অর্থবছরে তার ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ণে উল্লেখ রয়েছে। অর্থাত তিনি তার মায়ের কাছ থেকে উপহারকৃত ৩৫ লক্ষ টাকা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হয়েছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

‘বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কর্মসূচি’

তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ফরমায়েসী রায়ের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্র দল যৌথভাবে সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করবে। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিন বিএনপির উদ্যোগে ৪ আগস্ট বিকালে নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের প্রতিবাদ সমাবেশ করবে।