ডেল্টার মতো ধরন আর আসবে না, নিশ্চিত করে বলা যায় না: ড. ফেরদৌসী কাদরী

ডেল্টার মতো ধরন আর আসবে না, নিশ্চিত করে বলা যায় না: ড. ফেরদৌসী কাদরী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ডেল্টার মতো করোনার অতিসংক্রামক ধরনের ভাইরাস যে আর আসবে না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন ম্যাগসাইসাই পুরস্কারজয়ী বাংলাদেশের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী।
আজ শুক্রবার সকালে ভার্চ্যুয়ালি গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সংলাপে এ কথা বলেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ইমেরিটাস বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী। র‌্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন এই প্রথিতযশা বিজ্ঞানীর সঙ্গে গণমাধ্যম সংলাপের আয়োজন করে। গত ৩১শে আগস্ট ‘এশিয়ার নোবেল’ হিসেবে পরিচিত ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। ফেরদৌসী কাদরীসহ এ পর্যন্ত ১২ ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পেয়েছেন। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় প্রতিবছর ৩১শে আগস্ট এ পুরস্কার দেয়া হয়। ৩১শে আগস্ট র‌্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের জন্মদিন।

কলেরার টিকা নিয়ে গবেষণা এবং সাশ্রয়ী দামে সহজলভ্য করে লাখো প্রাণ রক্ষায় কাজ করেছেন ড. ফেরদৌসী কাদরী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ছিলেন তিনি।
 ফেরদৌসী কাদরী বলেন, এখন বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ কমছে বটে; কিন্তু এতে খুব বেশি আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্বের অনেক দেশে সংক্রমণ এভাবে কমে আবার বেড়ে যাওয়ার নজির রয়েছে।তাই করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে বেশি দরকার ব্যাপক হারে টিকা দেয়া।

গণমাধ্যম সংলাপে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, নারীদের লড়াই বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে শুধু নয়, সারা বিশ্বেই তা রয়েছে। এ লড়াই অনেক কঠিন। এতে ধৈর্য, সহনশীলতা, দায়িত্বশীলতা দরকার। দায়িত্ব শুধু কাজের ক্ষেত্রে নয়, পরিবারের সব সদস্যের প্রতিও তা পালন করা দরকার। তবে লড়াইটা বেশ কঠিন।  ফেরদৌসী কাদরী বলেন, আমি মনেপ্রাণে একজন বাংলাদেশি। মানুষের অকুণ্ঠ সহযোগিতায় আমি বর্তমান পর্যায়ে আসতে পেরেছি। পেয়েছি স্বামীসহ পরিবারের সবার অকুণ্ঠ সহযোগিতা। আমার প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবির সহকর্মীদের আন্তরিক সহযোগিতাও আমি পেয়েছি।

ফেরদৌসী কাদরী যেদিন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান, ঠিক তার পরের দিন তার স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. সৈয়দ সালেহীন কাদরী মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় স্ত্রীর ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পাওয়ার খবর বাংলাদেশের প্রথিতযশা এই বিজ্ঞানশিক্ষক আর জেনে যেতে পারেননি। ফেরদৌসী কাদরী বলেন, বিজ্ঞানচর্চার কঠিন পথে তিনি তার স্বামীর সার্বক্ষণিক সহযোগিতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
নতুন প্রজন্মের নারী, যারা বিজ্ঞানের কাজে আসতে চান, তাদের জন্য বিশেষ কোনো বার্তা আছে কি না, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, নতুন প্রজন্মের ছেলে–মেয়ে সবার জন্যই বার্তা দিতে চাই। তা হলো, বিজ্ঞানের অর্জনটা দীর্ঘমেয়াদি। এখন অনেকেই বাণিজ্য শাখায় লেখাপড়া করে অর্থ উপার্জন করতে চায়। এটা অবশ্য দোষের কিছু নয়। অনেকের পারিবারিক দায়বদ্ধতা থাকে। সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা যায় না।

 ফেরদৌসী কাদরী বলেন, বিজ্ঞানচর্চায় এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের সক্ষমতা অনুসন্ধান করা। তারা তাদের পারিবারিক দায়িত্ব অবশ্যই সামলাবেন। কিন্তু নিজেদের পেশার প্রতিও যতœবান হবেন। বড় জায়গায় যেতে হলে নয়টা থেকে পাঁচটা অফিসের মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলে না। জাপানের এনএইচকে গণমাধ্যমের সাংবাদিক আইকো ডোডেনের প্রশ্ন ছিল, সারা বিশ্বে টিকা নিয়ে এক অসাম্য পরিস্থিতি চলছে। এর কারণ অর্থনৈতিক না রাজনৈতিক? এটি ধনী রাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্যের নমুনা কি না। জবাবে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, হয়তো এসব কারণে কাজ করছে। কিন্তু এর বিপরীতে বিশ্বে মানবিকতারও অনেক উদাহরণ আছে। যেমন আমরা কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি থেকে টিকা পাচ্ছি। এটা একটা অনন্য উদ্যোগ। আমরা কোভিড-১৯-সংক্রান্ত গবেষণার কাজে পশ্চিমা অনেক দেশ থেকে সহযোগিতা পেয়েছি। তাই পুরো বিশ্ব বন্ধুহীন হয়ে গেছে, এমনটা ভাবা চলবে না।

র‌্যামন ম্যাগসাইসাই কমিটির পক্ষে সুসান আফান প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের চেয়ে ফিলিপাইনের জনঘনত্ব অনেক কম। বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনায় সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা দুই হাজারের নিচে। কিন্তু ফিলিপাইনে তা এখনো ১৮ থেকে ২০ হাজার। বাংলাদেশের এ সাফল্যের নেপথ্যে কী রয়েছে? জবাবে ফেরদৌসী কাদরী বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি করোনার সংক্রমণ কিছুটা কম। তবুও এটা নিয়ে এখনই উপসংহারে আসার মতো কিছু বলা যাবে না। বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতাও বেশি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি টিকার চলমান উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সামাজিক দূরত্ব, হাত ধোয়ার অভ্যাস অবশ্যই বজায় রাখতে হবে।
 ফেরদৌসী কাদরী বলেন, বাংলাদেশ একটি টিকাবান্ধব দেশ। আমাদের ইপিআই কর্মসূচির সুনাম আছে।

প্রসঙ্গত, ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র‌্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের নামে এ পুরস্কার দেয়া হয়। র‌্যামন ম্যাগসাইসাই ১৯৫৭ সালের ১৭ই মার্চ বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। ১৯৫৮ সাল থেকে পুরস্কার দেয়া শুরু হয়।